০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বাঘের বুদ্ধি

-

আমাদের দেশে, সবুজ পরিবেশে। এক ঘন বন আছে। সুন্দর বন। পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। সেখানে অনেক গাছ আছে। পশুপাখি আর ফুল আছে। সুন্দরী গাছের সারি আছে। বলছি সেই বনের গল্প। সারাবনে দাপিয়ে বেড়ায় বাঘ। বিশাল বড় রয়েল বেঙ্গল টাইগার নাম। গায়ে বেশ জোর, বিশাল দেহ। যাকে তাকে চিবিয়ে খায়। সে বনের অঘোষিত রাজা। বনের সবাই তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। হরিণরা শান্তিতে ঘাস খেতে পারত না। বনে কেউই নিরাপদ ছিল না। বনবাসিরা চিন্তা করল, কী করা যায়? একদিন বনের সবাই সভা করল। বাঘের উপদ্রব থেকে বাঁচার একটি বুদ্ধি বের করল। বাঘকে দাওয়াত দিলো সেই সভায়। বাঘ এলে তারা সবাই তার নামে জয়ধ্বনি দিলো। উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করল। বাঘ অবাক। বনের সবাই তাকে রাজা ঘোষণা করল। বাঘ তো মহা খুশি। সে এখন বনের নির্বাচিত রাজা।
কিন্তু সে দিন থেকে বাঘ পড়ল বিপাকে। সে আর এখন যাকে তাকে চিবিয়ে খেতে পারে না। কারণ বনের সবাই এখন তার প্রজা। রাজা হয়ে কিভাবে নিজ প্রজাদের ঘাড় মটকাবে। বাঘ পড়ল মহা চিন্তায়। তার মন বিষাদে ভরে গেল। না খেতে খেতে দিন দিন কঙ্কালসার হতে লাগল। বাঘ ছিল বুদ্ধিমান। সে বনের পশুপাখিদের চালাকি ধরতে পারল। রাজা বানিয়ে ফাঁকে ফেলল তাকে। এখন শিকার করলে সবাই বলবে, রাজা প্রজাদের অত্যাচার করছে। রক্ষক রাজা ভক্ষক রাজা কত কি বলে বেড়াবে। হিংস্র হলে বাঘের ছিল উচ্চ আত্মসম্মানবোধ। সবাই তাকে অত্যাচারী রাজা বলবে, এ মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু উপোসও তো থাকা যায় না। বাঘ ভাবতে লাগল কী করা যায়। কিভাবে এই কৌশলের প্যাঁচ থেকে বের হওয়া যায়। বাঘ ভাবছে তো ভাবছেই। ভাবতে ভাবতে সে একটি বুদ্ধি খুঁজে পেলো।
মন্ত্রী শিয়ালকে খবর পাঠাল। শেয়াল এসে দাঁড়াল সামনে। বাঘ বলল মন্ত্রী মশাই, বনের মধ্যে ঘোষণা করো। কাল মহাসভা হবে। রাজকীয় নীতিমালা প্রণীত হবে। রাজ আইন জারি হবে। মন্ত্রী শেয়াল তাই করল। সারা বনে ঘোষণা করল সে কথা। পরদিন সকালে বনের সব পশুপাখি মহাসভায় উপস্থিত হলো। সবার মনে ভয়, কে জানে মহারাজ বাঘ কী আইন বানিয়েছে। বাঘ সভায় এসে শুভেচ্ছা জানাল। তারপর বলল-
আমার শান্তিপ্রিয় প্রজারা, বনের সব বাসিন্দারা, তোমাদের ধন্যবাদ আমাকে রাজা করার জন্য। তোমরা আমাকে রাজা বানিয়েছ বনের শান্তি রক্ষার জন্য। শান্তি রক্ষার জন্য দরকার আইনের শাসন। প্রত্যেক রাজার আইন থাকে। শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এ অপরিহার্য। সবার অধিকার রক্ষার জন্য আইন জরুরি।

উপস্থিত সবাই একসাথে বলল, জয় মহারাজ বাঘের জয়, আইন ছাড়া রাজ্য কি হয়?
মহারাজ বলল, বনে হবে গণতান্ত্রিক শাসন। আমি মন্ত্রিসভা গঠন করব। আজ থেকে হরিণ হবে পরিবেশমন্ত্রী। সে বনের ঘাস লতাপাতা রক্ষা করবে। শিয়াল হবে কৃষিমন্ত্রী, সে কৃষিজমির ফসল রক্ষা করবে। সাপ হবে প্রহরী, সে বনের পাহারা দেবে। পাখি হবে বৃক্ষমন্ত্রী, সে গাছের ফুল ফল ও পোকামাকড় রক্ষা করবে। কেউ বনের ঘাস লতাপাতা নষ্ট করবে না। কেউ কাউকে চিবিয়ে খাবে না। কেউ জমির ফসল নষ্ট করবে না। কেউ গাছের ফল ছিঁড়বে না। কীটপতঙ্গ পোকাদেরও কেউ খাবে না। কোনো হরিণ ঘাস নষ্ট করবে না। কোনো ব্যাঙ আর ঘাসফড়িং খাবে না। সাপ খাবে না কোনো ব্যাঙ। কোনো পাখি গাছের ছোট পোকা খেতে পারবে না। কোনো ইঁদুর অথবা খরগোশ আজ থেকে চুরি করবে না। ফসল নষ্ট করবে না। সবার বাঁচার অধিকার আছে। সবার অধিকার নিশ্চিত করতে, বনের শান্তি রক্ষা করতে হবে। যে এই আইন অমান্য করবে, সে রাজার কারাগারে বন্দী হবে।
এই ঘোষণার পর বনবাসীরা পড়ল বিপদে। তারা বাঘকে রাজা বানিয়েছে নিজেদের সুবিধার্থে। কিন্তু বাঘ ক্ষমতা হাতে পেয়ে এমন আইন করল যে, সবার খানাপিনা বন্ধ হলো। তৃণভোজীরা ঘাস খেতে পারল না। পাখিরা ফল বা পোকামাকড় খেতে পারল না। শেয়াল, বানর, কচ্ছপ, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালি আর সাপেরা উপোস থাকতে থাকতে কঙ্কাল হতে লাগল। কেউ যদি ভুল করে কিছু খেত, আইন ভঙ্গ ও অন্যের ক্ষতির অপরাধে বন্দী হতো। বাঘ তাদের কারাগারে বন্দী করত। এভাবে বাঘের কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বাড়তেই থাকল। সময় সুযোগ বুঝে বাঘ তাদের মৃত্যুদণ্ড দিতো। আয়েশ করে চিবিয়ে খেত। এভাবে রাজার আরাম করে খানাপিনার বন্দোবস্ত হলো। রাজার এক আইনে সবাই কাবু। কারো মনে শান্তি থাকল না। আইন করে বনের চিরস্থায়ী অশান্তি শুরু হলো। শান্তি প্রতিষ্ঠা আর অধিকার রক্ষার নামে সবাই নিজের অধিকার হারাল। এই হলো অতি চালাক বনবাসীর পরিণতি।
তাই, কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়া, বেহিসাব খেয়ালের বশে কোনো অযোগ্য লোককে ক্ষমতা দেয়া উচিত নয়। তাহলে ভয়ানক পরিণতি হবে। মনে রাখতে হবে, সব শান্তির কথায় শান্তি থাকে না।


আরো সংবাদ



premium cement