০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

আগডুম বাগডুম : কবিতা

-

হারিয়ে যাবার বেলায়
মাহমুদ সালিম

হারিয়ে যাবো ফিরব না আর নিশাচরের রাতে
বলব না আর গাঁয়ের কথা মটর লতার সাথে
সন্ধ্যা নামুক আঁধার কালোয় নামুক ধরায় বৃষ্টি
নতুন করে করবে কে আর সোনার তরি সৃষ্টি?

বলবে কে আর চুলখোলা সেই আয়েশার-ই কথা
দেবে কি সে খোঁপায় বেঁধে বিলের কলমিলতা
ঝাউবনে কি টিয়ের ডানায় ছড়বে জাদুর রূপ
চাঁদ মামা তো মুচকি হেসে রয়ে গেল চুপ।

মায়ের নোলক গাঁয়ের কাছে ছুটল যখন শেষে
তীরের তরি ভিড়ল তখন হরফ লিখে এসে
হারিয়ে যাব ছেলেখেলায় জীবন যখন শেষ
কাব্য কথায় লিখে দিলাম সোনার বাংলাদেশ।

কোন মহিমায় শব্দ বুনে হারিয়ে গেলে হেতা
খুঁজব গোলাপ পাপড়ি বনে নতুন কুঁড়ি যেথা
সেই কবি যে হারিয়ে গেল ফিরবে না তো আর
মৃত্যুকে সে জড়িয়ে নিলো শুভ শুক্রবার।

 

গাঁয়ের ছবি
শামীম খান যুবরাজ

গাছগাছালি-পাখপাখালির কথা
মনের ভেতর গাঁয়ের আকুলতা
কাঁচা সড়ক-আঁকাবাঁকা নদী
দিগন্তটা খোঁজে দু’চোখ যদি
পটে আঁকা দৃশ্য দেখাই যাবে
উদাস হয়ে মনটাকে হারাবে।

গাঁয়ের বাড়ি ফসলি জমির আল
ধনেপাতা-মরিচ-মসুর ডাল
কলাবাগান-কুমড়ো ফুলের রূপ
সন্ধ্যা হলে প্রকৃতি নিশ্চুপ।

গাঁয়ের ছবি মায়ের ছবির মিল
রঙে-রূপে ঠিক হবে খোশ দিল।


দয়া চাই
আতিকুর রহমান

এই দুনিয়ায় যা আছে সব
তোমারই তো দান
শেষ হবে না গাই যদি গো
তোমার গুণগান।

তুমি খাওয়াও তুমি পরাও
তোমারই তো সব
তুমি বিনা নেই যে আমার
অন্য কোনো রব।

তুমি দিলে সূর্যের আলো
তুমি দিলে রাত
তোমার তরে ঠেকাই মাথা
তুলি যে দুই হাত ।

ইহকাল আর পরকালে
তোমার দয়া চাই
তুমি বিনা এই আমাদের
আর তো কেহ নাই।

 

বৃষ্টি দিনে
আলমগীর কবির

বৃষ্টি এলো বিকেল বেলা
তখন আমি খেলছিলাম,
বৃষ্টিভেজা পাখির মতো
মনের ডানা মেলছিলাম।

বন্ধুদের আজ সাথে নিয়ে
ফুটবল নিয়ে ছুটছিলাম,
হাঁসের ছোট্ট ছানার মতো
খুশি যত লুটছিলাম।

বৃষ্টি ফোঁটার মতো স্বাধীন
মনের সুখে নাচছিলাম,
মা হয়তো রেগে আছেন
ভয় মনে খুব পাচ্ছিলাম!

খেলতে গিয়ে আছাড় খেয়ে
একলা বসে কাঁদছিলাম,
ফিরলে বাড়ি মায়ের বকা
আশাও বুকে বাঁধছিলাম।


কাগজের নাও
মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ

রিমঝিম বৃষ্টির
সুমধুর সুরে,
আকাশের মেঘমালা
যায় উড়ে উড়ে।

এ সময় ভাবি আমি
ঘরে একা বসে,
কী যে হবে তারাগুলো
যদি পড়ে খসে?

তখনই তো সহপাঠী
কাছে এসে জোটে,
মাথা থেকে ভাবনাটা
যায় দূরে ছোটে।

মা দিলেন ঝালমুড়ি
যত খুশি খাও,
দুইজনে মিলে গড়ি
কাগজের নাও ।

 

আষাঢ়ের ঢল
নাসরীণ রীণা

বাদল ধারা বইছে দেখো
চৌদিকেতে জল,
আষাঢ় মাসে নয়া পানির
নামছে দেখো ঢল।

গুড়ুম গুড়ুম ডাকছে দেয়া
নেইকো রাত্রি-দিন,
জলের কন্যা নৃত্য করে
মেঘ যে বাজায় বীণ।

আষাঢ় দিনে বারিষ গানে
কেউবা সুখে হাসে,
ঘরবাড়ি সব আষাঢ় ঢলে
কারোর দুঃখে ভাসে।

কেউবা রাঁধে ডাল খিচুড়ি
কেউবা ধরে মাছ,
বানের জলে ভাসে কারো
মানুষ, প্রাণী, গাছ।

 

বন্ধু হবো
মুস্তফা মানিক

গাছের ডালে পাখির ছানা করছে নাচানাচি
ছোট্ট খোকা হাত বাড়িয়ে যাচ্ছে কাছাকাছি
আঁতকে উঠে পাখির ছানা বলছে ছোট্ট খোকা
বন্ধু সেজে ভর দুপুরে দিচ্ছো বুঝি ধোঁকা!

নরম সুরে বলল খোকা ভুল বুঝো না ভুল
হাতের উপর দু’হাত রেখে চাই ফুটাতে ফুল
উজাড় করে বলব কথা করব ব্যথা দূর
তোমার পাখায় হয়ে সওয়ার ঘুরব অচিনপুর।

পাখির ছানার পড়ল মনে মায়ের উপদেশ
মিষ্টি কথায় করতে পারে তোমার জীবন শেষ
খুব সহজে কারো কথায় গলাবে না মন
রাখিস জেনে ছোট্ট ছানা তুই যে মায়ের ধন।

বলল ছানা তোমার কথা মিষ্টি ও সুন্দর
কেন জানি লাগছে আমার তোমায় ভীষণ ডর
করছে মানুষ পাখি শিকার করছে উজাড় বন
মানুষরূপী অমানুষের দেখো আস্ফালন

মলিন মুখে খোকন সোনা বলল ছানা শুনো
তোমার ব্যথায় খুব ব্যথিত কাঁদছে আমার মনও
নিচ্ছে জীবন ভাঙছে আশা স্বপ্ন ঘর ও বাড়ি
তাই বলে আজ আমার সাথে দিও না কো আড়ি।

আমার মনেও দুঃখ হাজার বলব বলো কাকে
পাই না তো আজ বাবার আদর পাই না কাছে মাকে
ব্যস্ত ভীষণ আমার বাবা যখন থাকি ঘুমে
মাকে নিয়ে যায় যে চলে- একলা আমি রুমে।

ক্লান্ত হয়ে ফিরে দু’জন সন্ধ্যা যখন নামে
আদর পেতে ঘুরি আমি তাদের ডানে বামে
মুচকি হেসে আদর করে নেয় না বুকে তুলে
দিনে দিনে যাচ্ছে যেন সোহাগ মায়া ভুলে।

ভাল্লাগে না একলা জীবন ভাল্লাগে না আর
কেমন করে করব বলো এমন জীবন পার
মস্ত বড় প্রাসাদ-ঘরে পাই না খুঁজে সুখ
বন্ধু হয়ে দু’হাত বাড়াও কমাও মনের দুখ।

এসব কথা পাখির মনে করল রেখাপাত
উড়ে এসে বুক মিলিয়ে রাখল হাতে হাত
ছোট্ট পাখি বলল ডেকে আর পেয়ো না ভয়
ভালোবেসে বন্ধু হবো করব ভুবন জয়।


আরো সংবাদ



premium cement