১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কেউটে সাপ ও শামুকের গল্প

-

অনেক দিন আগের কথা। এক বিশাল বনে বাস করত এক কেউটে সাপ। সে খুব বিষধর। বিষধর হলেও সে ছিল খুব শান্ত প্রকৃতির। কেউটে সাপটি তার এক সঙ্গীকে নিয়ে নিরিবিলি বাস করছিল। একদিন তার সঙ্গী বনের মধ্যে ইঁদুর ধরার জন্য বের হলো। তার খুব খিদে পেয়েছে। ঠিক ওই সময় বনের রাজা সিংহ সেদিন একটি হরিণ শিকারের জন্য তার পিছু ধাওয়া করছিল। হরিণটা জীবন বাঁচাতে খুব জোরে ছুটছিল। সিংহও হরিণটিকে ধরার জন্য বেহুঁশের মতো দৌড়াচ্ছিল। কেউটে সাপের সঙ্গীটা পড়ল একেবারে সিংহের পায়ের নিচে। সিংহের পাড়া লেগে থেঁতলে গিয়ে সেখানেই সে মারা গেল। ততক্ষণে হরিণটাও পালিয়ে গেল। বেশ অনেকক্ষণ ধরে সঙ্গী আসছে না দেখে কেউটে সাপ খুঁজতে বের হলো। কেউটের সঙ্গী মৃত অবস্থায় একটি অশ্বত্থ গাছের তলায় পড়েছিল। কেউটে সাপ অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার মৃত সঙ্গীকে খুঁজে পেল। ওই অশ্বত্থ গাছের কোটরে বাস করত একটি হুতুম পেঁচা। সে পুরো ঘটনাটি দেখেছিল। হুতুম পেঁচা কেউটে সাপকে পুরো ঘটনাটি খুলে বলল। শুনে কেউটে সাপের অনেক দুঃখ হলো। তার মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠল। তার রাগ হলো সিংহ ও হরিণের উপর। সে ঘুরে ঘুরে সিংহ ও হরিণটিকে খুঁজতে লাগল। একদিন ঘুরতে ঘুরতে সে হরিণটিকে একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখল। সে তাকে বিষাক্ত ফনা তুলে ছোবল মারল। হরিণটি বিষের জ্বালায় ছটফট করতে করতে মারা গেল। এ ঘটনায় কেউটের আত্মবিশ্বাস গেল বেড়ে। সে হন্যে হয়ে সিংহকে খুঁজতে লাগল। একদিন সে সিংহটিকে খুঁজে পেল। তবে সিংহকে মারা এত সহজ হলো না। সে সিংহটিকে ছোবল মারতে আসতেই সিংহটি সরে গেল। সে কেউটে সাপকে পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ করতে চেষ্টা করল। কেউটে সাপটাও শরীর বাঁকিয়ে সরে গেল। এভাবে ওদের যুদ্ধ অনেকক্ষণ ধরে চলতে লাগল। অবশেষে সুযোগ পেয়ে কেউটে সাপ সিংহের পেটে ছোবল মারল। তীব্র বিষের জ্বালায় সিংহটি ছটফট করতে করতে মারা গেল। ওই ঘটনার পর কেউটে সাপটা অনেক অহঙ্কারী হয়ে উঠল। সে বনের সব প্রাণীকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো। সে ভাবল, অন্য সব প্রাণীকে হত্যা করে সে বনে একাই নিরিবিলি বাস করবে এবং ইঁদুর ধরে ধরে খাবে। এরপর সে আক্রমণ চালিয়ে খরগোশ জিরাফ ও শূকরকে মেরে ফেলল। ভয়ে অন্য প্রাণীরা ওই বন থেকে অন্য বনে পালিয়ে গেল। ওই বিশাল বনটিতে বাস করত এক বিশাল আকৃতির শামুক। এটির বৈজ্ঞানিক নাম হলো সাইরিংক্স আরুনাস। এর দৈর্ঘ্য তিন ফুটের কাছাকাছি। কিন্তু বড় আকৃতির হলে কি হবে, সব শামুকের মতোই সেও খুব ধীর গতির প্রাণী। সেও ধীর গতিতে হেঁটে হেঁটে বন থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ শামুকটি কেউটের সামনে পড়ে গেল। কেউটে সাপটি তাকে দেখেই আক্রমণ করতে ছুটে এলো। কেউটে শামুকটিকে আক্রমণ করতেই শামুকটি খোলসের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নিলো। যতবার শামুকটা মুখ বের করে, কেউটে সাপ ততবার ছোবল মারে। এভাবে ছোবল মারতে মারতে শামুকের খোলসের ধারালো অংশে লেগে কেউটে সাপের জিভটা কেটে যেতে লাগল। অবশেষে তার জিভটা পুরোপুরি কেটে গেল আর সে ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে সেখানেই পড়ে রইল। শামুকটি ধীরে ধীরে সেখান থেকে চলে গেল। একসময় সাপটা জ্ঞান ফিরে পেলো বটে, কিন্তু তার জিভটায় পচন ধরে গেল । পচা ঘা থেকে এক সময় অনেক যন্ত্রণার সৃষ্টি হলো। সেই যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কেউটে সাপটা মারা গেল। কেউ যেন বলল- রাগ ও অহঙ্কার চরিত্রের এমন দু’টি খারাপ দিক, যা যে কারো ধ্বংস ডেকে আনে। কাজেই রাগ ও অহঙ্কার থেকে সাবধান।


আরো সংবাদ



premium cement