১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কোলা ব্যাঙের বন্ধুত্ব

-

বোশেখ মাস। নীলাকাশে মাঝে মধ্যে কালো মেঘের ছোটাছুটি। কখনো মেঘের গুড়–ম গুড়–ম ডাক। আর কালবৈশাখী বয়ে আনে মুষলধারায় বৃষ্টি। সামান্য পানিতে খাল-বিল, নদী-নালা ভরে যায়। চারদিকে কোলা ব্যাঙের ডাকাডাকি শুরু হয়। তখন দুষ্টু খোকা ঘরে বা থাকবে কিসের জন্য? এক দিন খোকা কোলা ব্যাঙের ডাক শুনে বলে, ‘অ্যায় ব্যাঙ, আমার কি বন্ধু হবে? আমি তোমার বন্ধু হতে চাই!’ তখন কোলা ব্যাঙ মুচকি হেসে বলে, ‘ঠিক আছে, তুমি ডাঙায় থাকবে, আর আমি জলে থাকব। কিন্তু বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হবে! আমায় কখনো ঢিল ছুড়তে পারবে না।’
দু’জনে সহমত। এভাবে দিন আসে, দিন যায়। খোকা ও কোলা ব্যাঙের বন্ধুত্ব আরো গভীর হতে লাগল। এক দিন খোকা বন্ধুকে বলে, ‘আচ্ছা বন্ধু, তোমরা নাক উঁচিয়ে ঘ্যাঙোর ঘ্যাঙোর করো কেন? তাতে কী মজা পাও! নাকি এটা তোমাদের কোনো শারীরিক ব্যায়াম।’ তখন কোলা ব্যাঙ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করতে লাগল। ‘ধুর!’ এই বলে খোকাকে জবাব দেয়, ‘শোনো, বন্ধু! আমরা ছ’মাস মাটির তলে বাস করি। তারপর কালবৈশাখীর তাণ্ডব ঝড়ে জেগে উঠি। একটু জলের তৃষ্ণা নিবারণ করি। সব বন্ধুদের নিয়ে খেলায় মেতে ওঠি। আর প্রকৃতির সাথে আমাদের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।’ তখন খোকা সবকিছু বুঝতে পারল।
এদিকে কয়েক দিন যাওয়ার পর সূর্যের প্রখর তাপে খাল-বিলের পানি শুকাতে লাগল। কোলা ব্যাঙের ডাকাডাকি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। যেন নিরুদ্দেশ হলো আর দেখা মেলে না। তাই খোকার চিন্তার শেষ নেই। কারণ বন্ধুকে হারানোর ব্যথা! তা সহজে কি ভোলা যায়? খোকা মনে মনে ভাবতে লাগল, একবার মুষলধারায় দুষ্টু কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে আসুক। ঘটনাক্রমে এক দিন তাই হলো। আবারও খাল-বিল পানিতে থই-থই করছে।
সেই হারিয়ে যাওয়া কোলা ব্যাঙের ডাক শোনা গেল। খোকা কিন্তু বুঝতে পারল, এটা বন্ধুর গলার সুর। তাদের দু’জনের দেখা হওয়ায় খোকা মনের দুঃখ কষ্ট সব খুলে বলল। বন্ধুর কথা শুনে কোলা ব্যাঙ একটু দুঃখ পেল। আর খোকাকে সান্ত¡না দিয়ে বলে, ‘আমি তোমার পাশে আছি, বন্ধু! আমার জন্য চিন্তা করো না। ভালো বন্ধুত্ব কখনো হারিয়ে যায় না।’ তারপর...! তারপর আবার কী? ঠিক আগের মতো বেড়ে গেল তাদের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা।


আরো সংবাদ



premium cement