২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ফুলকন্যার ঈদ

-

চার দিকে শীতের হিমহিম ঠাণ্ডা বাতাস। শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দেয়ার মতো অবস্থা। কুয়াশার আড়ালে ঢেকে গেছে সকালের রক্তিম সূর্যটা। সূর্যের আড়মোড়া ভাঙার সাথে সাথে বুশরার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম যেনো উড়ে গেছে চোখের বারান্দা থেকে। বহুদিনের পুরনো ময়লা লেপ্টে থাকা গন্ধময় ছেঁড়া কাঁথাটা শরীর থেকে ফেলে দিয়ে চোখ ঢলতে ঢলতে বুশরা হাঁটা দেয়- মোড়ল বাড়ির দিকে।
নিমতলা স্টেশনের পাশে পুরনো একটা বিল্ডিংয়ের অদূরে বুশরাদের আবাসস্থল। খড়ের ছাউনি ও কলাপাতা দিয়ে বানানো ছোট্ট একটা ডেরাতে থাকে বুশরা ও তার বয়োবৃদ্ধ বাবা। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তারা এখানে থাকছে। তার বাবা একেবারে প্রৌঢ়ত্বের কোলে ঢলে পড়েছেন। চোখের নিচে কালচে দাগ- জানান দেয় বয়স বৃদ্ধির।
মোড়ল বাড়িতে বুশরার যাওয়া-আসা হয় দৈনিক। মোড়ল বাড়ির সামনে এক বিশাল ফুলের বাগান। অজস্র ফুলের সমাহার সেখানে। শীতের স্নিগ্ধ ভোরে নানা ফুলের ঘ্রাণে মাতিয়ে তুলে পুরো আঙিনা। সেখান থেকে বুশরা প্রতিদিন বকুল কুড়িয়ে আনে। তারপর অত্যন্ত যতœ করে মনের মাধুরী মিশিয়ে মালা গাঁথে। ঘুরে ঘুরে সে ফুলের মালা বিক্রি করে নিমতলা রেলস্টেশনে।
সাত-আট বছরের মেয়ে বুশরা। যেমনি চঞ্চল তেমনি বুদ্ধিমত্তা। সবার মন ভুলিয়ে রাখার আলাদা যোগ্যতা আছে তার। নিত্যদিন ঘাম ঝরিয়ে ফুল বিক্রির টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে। বাবার ওষুধ কেনার টাকা জোগাড় হয়। অভাব-অনটনে কোনোমতে বেঁচে আছে তারা বাপ-মেয়ে। দুশ্চিন্তার মেঘলা ছাপ সবসময় ভেসে ওঠে বুশরার মলিন চেহারায়।
এই তো দু’দিন আছে ঈদের বাকি। কত মানুষ আনন্দে আত্মহারা। ঈদ শপিংমলে উপচে পড়া ভিড়। বুশরার জীবনে এগুলো নেই। নতুন জামার ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করে- তবুও ইচ্ছেগুলোকে জলাঞ্জলি দিতে হয় নিয়তির কাছে। বাবার অসুস্থতার কথা ভেবে। কত জঞ্জাল আর কত অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে সে; তা বুশরা ছাড়া আর কেউ জানে না!
কোনো কোনো শিশুর জীবনে ঈদ হয়তো ঘন আনন্দ বয়ে আনছে। আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে তাদের কচি হৃদয়ে। কিন্তু বুশরা জীবন শুধু দুঃখে ঘেরা। ঈদের দিনের সারাটা সময় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ফুল বিক্রি করতে হয়েছে। জোঁকের মতো কামড়ে ধরা সব কষ্ট সহ্য করে বুশরার মুখে একটাই কথা- গরিবের আবার কিসের ঈদ!


আরো সংবাদ



premium cement