১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বাধীনতা ও ঔপনিবেশিকতার মধ্যে পার্থক্য

-

১৯৪৭ সালে আমরা আমাদের দেশ থেকে ব্রিটিশদেরকে বিতাড়িত করেছিলাম। ব্রিটিশ শাসকরা এ দেশ থেকে চলে গেল। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের দেশটি প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করল। তখন ভেবেছিলাম ঘাড়ের ওপর থেকে বুঝি জগদ্দল পাথরের বিদায় হলো। তারা বিদায় নিলো বটে তবে তাদের প্রণীত শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চিন্তাকাঠামো এ দেশে রেখে গেল। তারা চলে গেলেও রয়ে গেল তাদের ধর্ম-দর্শন ও জাতিগঠনের আদর্শিক চেতনা। ১৯৭ বছর ধরে ব্রিটিশরা যে কাঠামোর ওপর রাষ্ট্রটি দাঁড় করিয়েছিল সেটিও অবিকল রয়ে গেল। তাদের বিদায়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই টের পাওয়া গেল যে তারা চলে যেয়েও যায়নি। নতুন করে স্বাধীন যে রাষ্ট্রটি আমরা পেয়েছিলাম তার নাম ছিল পাকিস্তান। আয়তনে দেশটি ছিল ছোট; কিন্তু চরিত্রে ছিল ব্রিটিশদের মতো ঘৃণ্যতায় বিশাল। শাসন, শোষণ আর বিমাতাসূলভ আচরণে দেশটি ছিল ব্রিটিশের ফটোকপি। ব্রিটিশ শাসনের সময়ে রাষ্ট্র ছিল পুরোপুরি ঔপনিবেশিক। তারা ছিল ভিন দেশী শোষক ও ঔপনিবেশিক। আর স্বাধীনতার পরে রাষ্ট্রীয় শাসনটা দাঁড়াল ছদ্ম ঔপনিবেশিক তথা দেশী ঔপনিবেশিক, যাকে নব্য ঔপনিবেশিকও বলা যেতে পারে। ব্রিটিশদের প্রণীত আইন-কানুন ও শাসনপ্রণালীতে কোনো পরিবর্তন হলো না। রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনীসহ অন্য সব বাহিনী ব্রিটিশ আইন দ্বারাই পরিচালিত হতে লাগল। রাষ্ট্রের ভেতরকার সব অফিস ও আইন-আদালতে কোনো পরিবর্তন এলো না। দেশীয় যন্ত্রপাতি ও কারখানা- সবকিছুই আগের মতো রয়ে গেল। ব্রিটিশের দ্বারা প্রশিক্ষিত বেসামরিক ও সামরিক আমলারা আগের মতোই কর্তৃত্ব করতে লাগল। বিশেষভাবে দুরন্ত হয়ে উঠল সামরিক বাহিনী। ব্রিটিশ রাষ্ট্রে পেশিশক্তির প্রধান উৎস ছিল এই সেনাবাহিনী। তাদের হাতে গড়া প্রশিক্ষিত সেই সেনাবাহিনীও অবিকল রয়ে গেল। এক কথায়, দেশের সবখানেই আইন, শাসন ও শোষণ চলতে থাকল আগের মতোই। এসব দেখে মনে হলো, শাসন ও শোষণ যেন পূর্বের ঔপনিবেশিকতার ধারাবাহিক উত্তরাধিকার। ঔপনিবেশিক এ উত্তরাধিকারের দাপট ছিল ব্রিটিশদের চেয়েও মারাত্মক ভয়ানক। বিশেষভাবে রাজনীতির ক্ষেত্রে এটি প্রকট হতে প্রকট আকার ধারণ করতে লাগলো।

পূর্বেই বলা হয়েছে ব্রিটিশ শাসকরা ছিল বিদেশী। স্বাধীন পাকিস্তানের শাসকবর্গকে আমরা দেশী ও আপন মনে করেছিলাম। কিন্তু তারা নামেই শুধু ছিল আপন। আচরণে তাদেরকে বিদেশীর চেয়েও ভিন্ন কিছু মনে হলো। অবিলম্বেই টের পাওয়া গেল যে তারা নামেই শুধু আপন। অত্যাচার ও নির্মমতায় তারা ব্রিটিশদেরকেও পেছনে ফেল দিলো। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সাত কোটি বাঙালিকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করতে থাকল। বাঙালিদেরকে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত করলো। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর তারা আক্রমণ করে বসলো। নিজেদের দেশে তারা আমাদেরকে তৃতীয় শ্রেণীর জাতিতে পরিণত করলো। অতঃপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পাকিস্তানি শাসকদেরকে তাড়াবো। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদেরকে আমরা তাড়িয়েই ছাড়লাম। স্বাধীন বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র তৈরি হলো। স্বাধীন বাংলাদেশে বিদেশী দুর্বৃত্ত আর রইলো না। রইলাম শুধু আমরাই। নিজেদের দেশ, নিজেদের রাজত্ব, নিজেরাই সর্বেসর্বা। নিজেদের রাজত্বে নিজেরাই রাজত্ব করতে থাকলাম। দেশের ক্ষমতায় আসীন হলো পাকিস্তানিদের তাড়ানো জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ভ্রƒকুঞ্চিত নয়নে অবাক বিস্ময়ে বাংলার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশ, ছোট্ট একটি দেশ, ক্ষুদ্র একটি ভূখণ্ড। কিন্তু নেতৃত্বের আসনে সমাসীন এক বিশ্বমানের নেতা।
সদ্য স্বাধীন দেশটি তখনও শিশু। হাঁটি হাঁটি পায়ে যাত্রা শুরু করলো শিশু দেশটি। কিন্তু অল্প দিনেই থমকে গেল শিশুটির পথচলা। স্বাধীনতার তখন মাত্র সাড়ে তিন বছর। সেই বিশ্বনেতাকে আমরাই খুন করলাম! পরিবারের ১৬ জন সদস্যসহ নির্মমভাবে জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হলো! দেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যে চলা শুরু করলো।

সদ্য স্বাধীন ভূমিতে শান্তি-স্বস্তি কিছুই ফিরে এলো না। দেশ থেকে গণতন্ত্র ছিটকে গেলো। সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থান সংঘটিত হতে থাকলো। অভ্যুত্থানজনিত ঘটনায় অসংখ্য সেনাকর্মকর্তা নিহত হলেন। অভ্যুত্থানের পালা বদলের ভিতরেই দেশে সৃষ্টি হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণী। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের আদলে দেশে গড়ে উঠলো একটি শোষকশ্রেণী। এ শোষকশ্রেণী লুটতন্ত্রে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদেরকে পেছনে ফেলে জোর কদমে এগিয়ে চললো। দেশীয় এসব শোষকের কাতারে নতুন করে সংযোজন হলো ভূমিদস্যু। এসব দস্যু পাহাড়, বন, নদী ও জলাশয় দখল করলো। যদিও ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের সময় দেশে এসব ভূমিদস্যুর অস্তিত্ব ছিল না। দেশীয় এসব দস্যু দেশের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করতে লাগলো। দেশীয় সম্পদ ইচ্ছেমতো বিদেশে পাচারও করতে থাকলো। তারা নিঃসঙ্কোচে লুণ্ঠন ও অত্যাচার চালাতে লাগলো। এসব শাসক এ দেশেরই সন্তান, কিন্তু তারা ক্রমাগত আমাদের চোখের সামনে বিদেশী হয়ে উঠলো।
আমরা আশা করেছিলাম স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু সেটি অধরাই রয়ে গেলো। বিপরীতে পাওয়া গেলো ভিন্ন ভিন্ন পোশাকে ভিন্ন ভিন্ন জুলুমতন্ত্র। যাকে স্বৈরতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র বলা যেতে পারে। জুলুমতন্ত্রের সে ধারাবাহিকতা স্বাধীনতার ৫১তম বছরেও চলমান রয়েছে। ছোট্ট এ দেশে একবার নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে সে আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। সে ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে অসভ্যের মতো জটিল ও কুটিল পথে হাঁটতে থাকে। নির্বাচিতরা সরকার গঠন করার পর তাদের কেউই বিন্দুমাত্র জবাবদিহিতার তোয়াক্কা করে না। সাধারণ জনগণের কোনো ইচ্ছার ধারও তারা ধারে না। জনগণ তাদের মতামত পেশ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। পেশিশক্তি ব্যবহার করে তারা প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়। ব্রিটিশের রেখে-যাওয়া রাষ্ট্রটি ছিল সম্পূর্ণভাবে আমলাতান্ত্রিক। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিতেও তার কোনো ব্যত্যয় ঘটলো না। ৫৩তম বছরেও আমলাতন্ত্রের সেই লালফিতার দৌরাত্ম্য চলমান রয়েছে। এ তন্ত্রটি কখনও জবাবদিহিতার ধার ধারেনি, এখনও ধারে না। আমাদের রাজনৈতিক শাসকরাও আমলাদের মতো একই রকমের প্রতাপশালী। তারা যা ইচ্ছা তাই করে।

আমাদের এ দেশটি স্বাধীন হয়েছিল সশস্ত্র এক জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। সে সময় কেউ কল্পনাও করেনি যে, এই রাষ্ট্রে আবার ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি প্রেতাত্মার জন্ম হবে। আর তাদের মতো কুশাসন ও অপশাসন আবার ফিরে আসবে। অথচ সেটাই ঘটেছে। একবার নয় বরং অসংখ্যবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। স্বাধীন একটি রাষ্ট্রে সব বাহিনীকে সাথে নিয়েই পথ চলতে হয়। স্বভাবতই সব বাহিনীকে তাই সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তৎকালীন সেনাবাহিনীকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিল। অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় সামরিক বাহিনীকে তারা অধিক শক্তিশালী করেছিল। পাকিস্তানের পথ ধরে বাংলাদেশও একইভাবে সে পথে এগিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশেও সামরিক বাহিনীকে ক্রমাগত শক্তিশালী করা হয়েছে। অন্যান্য সকল বাহিনী অপেক্ষা ব্যাপকভাবে তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্টাফ ও ক্যান্টনমেন্টের সংখ্যা অতি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। অতীতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, এখনও সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তারা কতখানি সন্তুষ্ট আছে কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। আসলে তাদের কোনো কাজই নেই। তাদের জন্য যুদ্ধের কোনো ক্ষেত্র খুব একটা নেই বললেই চলে। তাদেরকে তাই অলসই থাকা লাগে। কিন্তু অলস থাকাটা তাদের পছন্দ নয়। তাই তারা সুযোগ বুঝে ক্ষমতা দখল করে নেয়। (সূত্র : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভোরের কাগজ, ১৪ মার্চ, ২০২২)।
অত্যন্ত কঠিন মূল্য দিয়ে আমরা দুই-দুইবার স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তারপরও জাতিগতভাবে আমাদের ন্যূনতম সম্মান বৃদ্ধি পায়নি। সম্মানের সেই কাঠামোতে তেমন কোনো পরিবর্তনও আসেনি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা এ দেশের নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়নি। একইভাবে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিকও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়নি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকাররাও একই পথে হেঁটেছে এবং এখনো হাঁটছে। তারাও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যেসব অধিকারের কথা সংবিধানে লেখা আছে বাস্তবে সেসবের কোনো ছিটেফোঁটাও দেশে কার্যকর নেই। বরঞ্চ সত্যটা হলো, অধিকারগুলো শুধু ক্ষমতাসীনদের জন্যই নিশ্চিত করা হয়েছে। বিপরীতে বিরোধী পক্ষকে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অধিকন্তু তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্রটি ক্রমান্বয়ে বেশিমাত্রায় নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর এ নিপীড়নের সকল মাত্রাই ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানকে হার মানিয়েছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

মূলত বিশ্বব্যাপী বর্তমানে স্বাধীনতা বলতে যা প্রচলিত আছে এটাকে স্বাধীনতা বলা যায় না। তৃতীয় বিশ্বের অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোর স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। যা আছে তা হলো একটি পতাকা এবং একটি ভূখণ্ড। আছে তল্পিবাহক একটি সরকার ও ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত আইন-কানুন। বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের প্রত্যেকটি ছোট স্বাধীন দেশ বড় একটি স্বাধীন দেশকে পদলেহন করে চলে। একইভাবে প্রত্যেকটি দুর্বল দেশ শক্তিশালী দেশের আনুগত্য করে চলে। ধনী দেশকে গরিব দেশের তেল মারা লাগে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র ছিল এককেন্দ্রিক এবং দূরের প্রভুদের দ্বারা শাসিত। স্থানীয় শাসকরা ছিল সরকারি আমলা। আদত প্রভুরা থাকত বিলেতে। পাকিস্তান আমলেও রাষ্ট্র এককেন্দ্রিকই রইল। পূর্ববঙ্গের বেলায় স্থানীয় শাসকরা ছিল আমলা গোমস্তা, প্রভুরা থাকত করাচিতে, নয়তো রাওয়ালপিন্ডিতে। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রটি আগের দু’টির তুলনায় অনেক ছোট, কিন্তু একই রকমের এককেন্দ্রিক। কেবল এককেন্দ্রিক নয়, ক্ষমতার চাবিকাঠি এই রাষ্ট্রেও রয়ে গেছে একব্যক্তির হাতে; তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রী, সামরিক আধা-সামরিক ব্যবস্থায় তিনি রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রের দৃশ্যমান শাসকরা স্থানীয়, কিন্তু তাদের অদৃশ্য মুরব্বিরা থাকে বিদেশে, বিশেষভাবে ওয়াশিংটন ও দিল্লিতে। স্থানীয় শাসকরা বিদেশী মুরব্বিদের রাগ-অনুরাগের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখনকার শাসকরা দেশে থাকলেও আচরণ করে বিদেশীদের মতো। সন্তান-সন্ততি এবং আহরিত ও লুণ্ঠিত সম্পদ বিদেশে রাখতেই পছন্দ করে। তারা ঘরবাড়িও বিদেশে তৈরি করছে, ক্রমাগত বর্ধিত হারে। ঔপনিবেশিক আমলে জাতি সমস্যার সমাধান ঘটেনি। আজো সে সমস্যার সমাধান হয়নি। বাংলাদেশ আমলের ৫৩ বছরেও সে সমস্যা রয়েই গেছে।’ (ভোরের কাগজ, ১৪ মার্চ ২০২২)
এমতাবস্থায় সচেতন মহলের প্রশ্ন, এখন কী হবে? দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, ভোটাধিকার নেই। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নেই। বিচারের বাণী নিভৃতে ডুকরে কাঁদছে। গুটিকতক মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থাকতে বিভিন্ন কূটনীতিকের আঁচলের তলে আশ্রয় নিচ্ছে। একইভাবে বিরোধী পক্ষ ক্ষমতায় যেতে কূটনীতিকের দয়া-দাক্ষিণ্য ভিক্ষা চাচ্ছে। দুই দলের প্রতিযোগিতায় তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর সকলেই কখনও বা আনন্দ আবার কখনও বা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। ভুক্তভোগী জনগণের কথা কেউই ভাবছে না। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা সরকারি দলের লোকেরা ভোগ করছে। সরকারি দলের লোকজন ফুলে-ফেঁপে মোটাতাজা হচ্ছে। বিরোধী মতের লোকেরা নির্যাতিত, নিপীড়িত ও উপেক্ষিত থাকছে। নিপীড়িতরা বোবাকান্নায় মুক্তির প্রহর গুনছে। সাধারণ জনগণ মুক্তির পথ খুঁজে ফিরছে।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বলা যায়, অনেক দিক থেকেই এ রাষ্ট্র ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের রাষ্ট্রের চেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি নারী হলেও আজো নারীর সম্মান নিশ্চিত হয়নি। সম্প্রতি ইডেনের ঘটনা গোটা দেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। দেশখ্যাত বুয়েট আজ আতঙ্কের ক্যাম্পাসে পরিণত হয়েছে। দেশের যুবসমাজ আজ নানা ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের চরিত্র গঠনের সকল উপাদান দেশ থেকে বিদায় করা হয়েছে। আজকের এ রাষ্ট্রটি তার নিজের আইন নিজেই ভঙ্গ করে চলেছে। তারা লাগামহীন বেআইনি কাজ করে চলেছে। বিরোধী মতের মূলোৎপাটন চাইছে। নির্বিচারে তারা সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষকে অধিকাংশ সময় ধরে অনিরাপদ অবস্থায় রেখে দিয়েছে। অপছন্দের ব্যক্তিদের নিখোঁজ করে দিচ্ছে। ভবনধসে, লঞ্চডুবিতে, সড়ক দুর্ঘটনায় অহরহ মানুষ মারা পড়ছে। কিছুদিন যাবৎ ক্ষতিগ্রস্ত এ মানুষগুলোকে নিয়ে মিডিয়া সরব আলোচনা করে। ব্যস! ওই পর্যন্তই শেষ। তারপর তারা বুদ্বুদের মতো অতিদ্রুত বিস্মৃতির অতলে ডুবে যায়। রাষ্ট্র তাদের আর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। দেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ হলেও প্রজার সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement