২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ফারসি কবিতায় ঈদ ও সংস্কৃতি

-

ঈদ মুসলিম বিশ্বের সব থেকে বৃহৎ ও নিষ্কলুষ ইবাদত ও আনন্দের নাম। একটি যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত উৎসব। এই উৎসবে আমরা মাতি আনন্দে। আমরা মাফ পাই আল্লাহর কাছ থেকে। সারা বছর পর বোনাস পেলে যেমন আবেগজনিত অনুভূতি কাজ করে। তেমনি স্রষ্টার পক্ষ থেকে মাফ ও কল্যাণ পেয়ে আমরা হই পুলকিত। ঈদ আসলে তাই বলি ঈদ মুবারক বা ঈদুকুম মুবারাক। অর্থ ঈদ আপনার জন্য কল্যাণময় হোক।
ফারসি সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের দু-একটি ঋদ্ধ সাহিত্যের অন্যতম। মহাকবি, মহাকাব্য, খোদাভক্তি, ইসলামী অনুষঙ্গ, মিথ, অধ্যাত্ম, প্রেম, ইতিহাস ইত্যাদিতে এই সাহিত্য সমৃদ্ধ। বিশ্বসাহিত্যের রস পিপাসুদের রসাস্বাদন করাচ্ছে এই সাহিত্য। মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ নিষ্কলুষ উৎসব ঈদ নিয়ে সরব হয়েছেন ফারসি কবিরা।
প্রাচীন পারস্যে বা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার আগপর্যন্ত ফারসি কবিতার ধারা ছিল আধ্যাত্মিকতা, স্রষ্টাতত্ত্ব, বাদশাহগণের স্তুতি, মর্সিয়া, সুরা-সাকীর মাধ্যমে প্রেম-প্রেমাস্পদ, ইতিহাস ইত্যাদি ধারার। এ ধারার প্রখ্যাত কবিগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন মহাকবি ফেরদৌসি (৯৪০-১০২০), ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১), ফরিদ উদ্দিন আত্তার (১১১০-১২২১), খাকানি (১১২০-১১৯৯), নিজামি গাঞ্জুবি (১১৪১-১২০৯), মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (১২০৭-১২৭৩), শেখ সাদী (১২২০-১২৯১/৯২), হাফিজ শিরাজি (আনুমানিক চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ-১৩৮৯), আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল (১৮৭৭-১৯৩৮) প্রমুখগণ। যদিও আল্লামা ইকবাল পারস্যের বাইরের কবি। ইরানি সাংবিধানিক আন্দোলন ও শাহ বিরোধী আন্দোলন ইরানি ফারসি কবিতার ধারাকে একটা মোচড় দেয়। আর এ সময়ই তথা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে নিমা ইউশিজ (১৮৯৭-১৯৬০) এসে ফারসি কবিতায় এক নতুন ধারার নিরীক্ষা চালান এবং সফল হন। তখন থেকে সেই ধারার কবিতা শেরে নু বা আধুনিক কবিতা নামে প্রচলিত হয়। এ ধারার কয়েকজন কবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন আহমাদ শামলু (১৯২৫-২০০০), মেহদি এখওয়ান ছ'লেছ (১৯২৯-১৯৯০), নাদের নাদেরপুর (১৯২৯-২০০০) প্রমুখগণ।
ফারসি কবিগণের কাব্যজগৎ প্রাচীনকালে যে রকম অন্যান্য অনুষঙ্গের পাশাপাশি ঈদের জন্য উর্বর জমিন ছিল। তেমনি তা মধ্যযুগেও ছিল। আধুনিক যুগেও ব্যত্যয় ঘটেনি তার।
তবে ইরানিরা ঈদ বলতে তাদের নওরোজ বা নববর্ষ উৎসবকে বেশি বুঝে থাকে। কেননা তারা জাতি হিসেবে উন্নত সংস্কৃতির ধারক। তারা তাদের নওরোজ উৎসবে সব থেকে বেশি আনন্দ করে থাকে। পক্ষব্যাপী সরকারি ছুটি। নতুন পরিচ্ছদ, বর্ণিল খাওয়াদাওয়া। সে হিসেবে বর্তমান ইরানে ঈদের উৎসব আমেজ খানিক অনুজ্জ্বল।
আমাদের মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সর্বপ্রধান উৎসব ঈদ। এই ঈদে আমাদের করণীয় কী হতে পারে? কিভাবে উদযাপন করব এই নিষ্কলুষ উৎসব তা মুসলিম দার্শনিক কবিগণ তাদের কবিতার মাধ্যমে লিখে গেছেন। এমনই তিনজন প্রখ্যাত ফারসি বিশ্বকবি কবি রুমি, সাদী ও ইসমাইল তাকভ'য়ি এর তিনটি চমৎকার ফারসি কবিতা গানজুর ডটকম থেকে বাঙলায়ন করেছি।

জালালুদ্দিন রুমি

রোজার মাসের চাঁদ অস্ত গেল, ঈদ আসলো, খুশি আসলো
হিজরি সালের রাত অতিক্রান্ত হলো, প্রেমিক দেখতে পেলো

ঐ সকালে বন্ধু হলো, তোমার উজির বন্ধু হলো
তোমার প্রেমাষ্পদ প্রেমিক হলো, তোমার শায়খ মুরিদ হলো

যুদ্ধ হলো আর দৃষ্টিগ্রাহ্য হলো, ধৈর্যবান হওয়ায় সুমিষ্টতা এলো
শিলা ও অমৃত এলো, তালা ও চাবি এলো

শরীরের ভিতরের কলুষিত আত্মা, শুদ্ধ থেকে শুদ্ধতর হচ্ছে
ময়লা-আবর্জনার ওপর দিয়ে ভানু উদিত হচ্ছে

তোমার হৃদ পেয়ালার স্বাদে নিজস্ব ফাঁদেই পড়লে
আতœা হুশিয়ার হলো, অবশ্য সে দৌড়ালো

তোমার অনুতাপ বেশ প্রশংসার দাবিদার
যথেষ্ট উৎসর্গিত ও ইবাদতকারী, তুমি কোত্থেকে এসেছো

দেই মাস হতে বঞ্চিত কানন তিন মাস দম ফেলতে পারে না
তোমার বাসন্তিক সুবাসে, অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হলো

(গজলটি মাওলানা রুমির ‘দেওয়ানে শামস’ থেকে সংগৃহীত)

শেখ সাদি

রমজান পল্লব সরবরাহ করে
ভ্রাতৃত্ববোধের ভাব হৃদে জাগ্রত করে

বন্ধু, পরিতুষ্টি দেখো না, দ্রুত গমন করো
তোমার চমৎকার মেহমানকে মিস করো না

সুপ্রসন্ন শশী উঁচুতে উদিত
আর আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে রমজান

শুভ বিদায় হে আনুগত্যের ও সর্বোত্তম সময়
জিকিরের সমাবেশ ও কুরানের বৈঠক

ভালো মানুষেরা জবানে শ্রদ্ধেয়
খারাপ আত্মা নিশ্চল, শয়তান শৃঙ্খলিত

ধরণীতে অন্যদিন আসা পর্যন্ত
ক্ষিতির কোণায় কোণায় ভ্রমণের জন্য উত্তম

বুলবুলি আহাজারি করছে
যেমনটি বসন্ত থেকে ও হেমন্তের বিচ্ছেদে

আমি বললাম, ফিরে আসতে চাই না
তোমার দিবস টিউলিপ ও পুদিনাময়

সে বলল, বেচেওঠতে ভয় পায় না
ও, প্রত্যেক বছর পুষ্প মনোহারী হয়

বিস্তর রোজা আর ঈদ হবে
তিন মাস, বসন্ত ও গ্রীষ্মকাল

এটা জীবনের গন্তব্য পর্যন্ত ছিল
অন্য বছর কোনো অচেনা দেশে

কাসিদাটি সাদির ৪৪ নম্বর কাসিদার রূপান্তর)

ইসমাইল তাকভ'য়ি

মহান পূত স্রষ্টার সহস্র কৃতজ্ঞতা
রোজা রেখেছো, তোমার মনকে কলুষমুক্ত করেছো

খোদার চাঁদ চলে গেলো, আর খোদার ঈদ উপনিত হলো
বিশ্বাসী বান্দারা এই মাসে হৈহুল্লোড় করেছে

হকের মাসের বিদায়ের সাথে সাথে দুস্থরা দলবেঁধে আসবে
হে দয়ালু খোদা, গরিবদের বন্ধু হওয়ার তাওফিক দাও

রোজাদারদের জন্য পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর
রোজা ভাঙার সময় হয়েছে, কার্পণ্য পরিহার করো

মুমিনের পাশে ঈদের সালাতে অংশগ্রহণ করো
যাদের হক আছে তা পরিশোধ করো, হে রোজাদার আত্মাকে সংকুচিত করো না

(কবিতাটি ইসমাইল তাকভ'য়ি-এর ঈদ বিষয়ক কবিতার অনুবাদ) হ


আরো সংবাদ



premium cement
গণমাধ্যমের ওপর হামলা সহ্য করা হবে না : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জাপানে রকেট পরীক্ষাস্থলে ভয়াবহ আগুন সিলেটে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটক ৩ আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি : হাইকোর্টের লিখিত আদেশ প্রকাশ কুমিল্লা সীমান্তে মাদকসহ ভারতীয় নাগরিক আটক এশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়ার পাল্টা হুমকি ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তানে নিহত আরো ৬, সেনা মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ বিয়ের প্রলোভনে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই চীন-মেক্সিকো-কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করবেন

সকল