২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

পরী রাজকন্যা ও আরশি

পরী রাজকন্যা ও আরশি -

তিন ভাইবোনের মধ্য আরশি সবার ছোট। সে শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বড় ভাই ইউশা কলেজে এবং বোন ঐশী দশম শ্রেণীতে পড়ে। আরশির ম-বাবাও সরকারি চাকরি করেন। ফলে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে বাসা খালি হয়ে যায়। সবার আগে ইউশা কলেজে যায়। তারপর ঐশী স্কুলে যায়। তারপর আরশির আম্মু মমতা বেগম অফিসে যান। সবার শেষে আরশির আব্বু আরশিকে নিয়ে বাসায় তালা লাগিয়ে বের হন। বাসার চাবিটা আরশির হাতে দিয়ে বলেন, মা একা একা চলে এসো। বাবার আসতে দেরি হতে পারে। আরশি বলে, একা কীভাবে রাস্তা ক্রস করব বাবা? আরশির বাবা বলে, স্কুলের দারোয়ানকে বলো সে তোমাকে রাস্তা ক্রস করিয়ে দেবে... ঠিক আছে মা? আরশি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। এই হলো আরশিদের পরিবারের নিত্যদিনের ব্যাপার।

দুপুর ১২টায় ছুটি শেষে আরশি বাসায় ঢুকল। মনের অজান্তেই এইরুম... সেইরুমে গেল। কেউ নেই। অদ্ভুত নীরবতা। সমস্ত বাসা যেন হাহাকার করছে। সে অনেক সাহসী মেয়ে। তবুও এখন তার একটু একটু ভয় ভয় করছে। স্কুলের ড্রেস খুলে ফ্রেস হলো। তারপর বাসার সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলো। এতে করে মনের ভেতরের ভয়টা যখন কিছুটা কমল, ঠিক তখনই কারেন্ট চলে গেল। কারেন্ট চলে যাওয়াতে পুরোনো ভয়টা আবার ফিরে আসল। কী করবে... কী করবে না.. এসব ভাবতে ভাবতে আরশি হঠাৎ হু হু কেঁদে দিলো। নিজেকে নিজেই সান্ত¡না দিতে চেষ্টা করল। কিন্তু এই মিথ্যে সান্তনায় কোনো কাজ হলো না। আরশি আবার মুখ নিচু করে আষাঢ়ে বৃষ্টির মতো কাঁদতে লাগল।
হঠাৎ খট করে একটি মাত্র শব্দ হলো। সেই শব্দ কানে যেতেই আরশি মুখ তুলে চমকে উঠল। তার সমবয়সী একটা মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। কী সুন্দর দেখতে! ঠিক যেন রূপকথার গল্পের পরীর মতো। মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল, তুমি কেমন আছ আরশি? আরশি বলল, আমি এখন ভালো আছি।

কিন্তু তুমি কে? তোমাকে তো চিনতে পারছি না। মেয়েটি বলল, আমার নাম কুমতিলানা। আমি পরী রাজ্যের রাজকন্যা। তোমাদের বাসায় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তোমার কান্না শুনে ভেতরে এলাম। আরশি বলল, আমি তো বাসার দরজা-জানালা সব কিছুই বন্ধ করে রেখেছি। তুমি বাসায় ঢুকলে কেমন করে? কুমতিলানা বলল, এটা আমাদের জন্য কোনো ব্যাপার না। আমরা পরীরা যেখানে খুশি যেতে পারি। যেমন খুশি রূপ ধরতে পারি। আরশি বলল, আমার বাসায় একা একা থাকতে ভালো লাগে না। ভয় ভয় লাগে। তাই কান্না করছিলাম। আচ্ছা কুমতিলানা, তুমি কি এখন আমার সাথে খেলতে পারবে? কুমতিলানা বলল, অবশ্যই খেলতে পারব। তোমার কষ্ট দেখে আমিও খুব কষ্ট পেয়েছি। এ জন্যই আমি এখন তোমার সাথে খেলতে এসেছি। তুমি যদি চাও আমি প্রতিদিন তোমার সাথে খেলতে আসব। কিন্তু একটি শর্ত আছে। তুমি কাউকে বলতে পারবে না।
কুমতিলানার কথা শোনে আরশির আনন্দ আর ধরে না। সে খুশিতে নাচতে নাচতে বলল, ঠিক আছে আমি কোনো দিন কাউকে বলব না। কুমতিলানা বলল, তাহলে আমরা দু’জন আজ থেকে বন্ধু হলাম। চল এখন খেলা শুরু করা যাক। আরশি বলল, চলো... চলো...। সেই থেকে আরশির আর বাসায় একা একা সময় কাটাতে হয় না। কুমতিলানা এই সময়ে প্রতিদিন আসে এবং আরশির সাথে খেলা করে। যখনই বাসায় কেউ এসে যায় কুমতিলানা সাথে সাথেই অদৃশ্য হয়ে চলে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement