২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

আগডুম বাগডুম : কবিতা

-


ছড়াপাখি
মুস্তাফা ইসলাহী

ছড়াপাখি হয়ে আমি এখন ডাকি রোজ
মনপাখিটা শুধু করে ছন্দ মিলের খোঁজ
ছন্দ দেবো ছড়িয়ে
গন্ধ দেবো ভরিয়ে
ছড়াবনে হবো বকুল, জুঁই, চামেলি, রোজ।

ছড়াপাখি কণ্ঠে রাখি মন ভুলানো সুর
গানে গানে অসুর আঁধার করে দেবো দূর
আলো দেবো জ্বালিয়ে
কালো যাবে পালিয়ে
আলো ভালোর সঙ্গী হয়ে থাকব আমি চুর।
ছড়াপাখি গায়ে মাখি প্রজাপতি রঙ
জীবন থেকে মুছে দেবো পঙ্কিলতা, জঙ।
উড়তে দেবো ছড়া তো
ঘুরতে দেবো ধরা তো
বিশ্বমাঝে তুলব গড়ে ভালোবাসার টঙ।


ফাগুন আসে
গাজী আবু হানিফ

এই পাখিটার কুহু ডাকে
ফাগুন আসে
গানের সুরে ফুলরা ফোটে
মিষ্টি হাসে।

পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া
আগুন হাসে
মৌ মৌ মৌ মৌ ছন্দ ভরা
ফুলের বাসে।

দখিন বাতাস নৃত্য করে
বয়ে চলে
বইছে নদী উজান হতে
পলে পলে।

ফুলে ফুলে মাতোয়ারা
বনতল
ঢেউয়ে নাচে পলকা হাওয়ায়
শতদল।


একুশ এলো
শাহীন পরদেশী

একুশ এলো ফুল বাগানে
মৌমাছি গান গায়
একুশ এলো ঘরে ঘরে
রাখাল বলে যায়।

একুশ এলো বাতাসেতে
চাদর পরে গায়
একুশ এলো গাঁও গেরামে
মুখে শোনা যায়।

একুশ এলো শহর গঞ্জে
ফুলের মৌ-মৌ ঘ্রাণ
একুশ এলো রক্ত লালে
জুড়ায় সবার প্রাণ।

একুশ এলো মধু বনে
পাখি কথা কয়
একুশ এলো মিছিল করে
বাংলা ভাষার জয়।


মুক্ত পাখির ডানা
তোরাব আল হাবীব

একুশ হলো বাংলা মায়ের
আত্মদানের মাস
এই মাসেতে বাংলা ভাষা
যুদ্ধে হলো চাষ।

একুশ হলো বাংলা ভাষার
অ আ ক খ বর্ণ,
রফিক শফিক বরকতেরা
বাংলা ভাষার স্বর্ণ।

একুশ হলো মুক্ত আকাশ
মুক্ত পাখির ডানা
উর্দু ভাষা রুখতে গিয়ে
জিন্নাকে দেয় হানা।

একুশ হলো বুকটা পেতে
বুলেট নেয়া তরুণ
ভাষা যেন দূর আকাশে
ভোরের রাঙা অরুণ।

একুশ হলো মায়ের সোহাগ
বাবার পরম আদর
ভায়ের কড়া শাসন এবং
বোনের স্নেহ চাদর।


প্রাণের বাংলা ভাষা
জহিরুল হক বিদ্যুৎ

মায়ের মতো মধুর আমার
প্রাণের বাংলা ভাষা
এই ভাষাতেই পুরাই মনের
সকল স্বপন আশা।

সুখ ও দুঃখ হাসি-কান্না
এই ভাষাতেই গাঁথা
মাতৃভাষার গৌরবে আজ
হয় যে উঁচু মাথা।

দোয়েল টিয়া ফিঙে শ্যামা
বাংলাতে গায় গান
এই ভাষারই দেশের গানে
জুড়ায় মন ও প্রাণ।

সালাম রফিক বরকতেরা
বাংলা ভাষার তরে
বাহান্নতে বুক পেতে সব
বীরের মতো মরে।

এই ভাষাতেই বাঁচার স্বপন
এই ভাষাতে মরণ
রাখবো ধরে ভাষারই মান
করব তাদের স্মরণ।


বই পড়ো
মো. তাইফুর রহমান

বই পড়ো বই পড়ে জীবনটা গড়ো
মানুষ যে হতে হলে আগে বই পড়ো।
ভালো বই পড়ে তাই সফলতা আনো
বই পড়ে ইতিহাস, বিশ্বকে জানো।

বই পড়ো একদিন পাবে তুমি জয়
অচিরেই কেটে যাবে সব দুঃখ-ভয়।
বই পড়ো সু-পথের সন্ধান পাবে
বই পড়ো অলসতা দূর হয়ে যাবে।

বই পড়ো সুখে ভাই ভরে যাবে মন
বই হলো জীবনের অমূল্য ধন।
বই পড়ে শেখা যায় ভালো কোনো কাজ
বই পড়ে জীবনের আনা যায় সাজ।

বই পড়ে জানা যায় কোন পথ ভালো
কোন পথে পেয়ে যাবে শান্তির আলো।
বড় যদি হতে চাও বই পড়া চাই
জীবনের সমাধান বই পড়ে পাই।


একুশের ছড়া
হাফিজ মুহাম্মদ

একুশ এলে তপ্ত ফাগুন জ্বালায় আগুন মনে
মায়ের ভাষা ফিরে পেতে গর্জে উঠি ক্ষণে।
একুশ এলে চেয়ে দেখি পথে হাজার লোক যে
বারুদ মাখা গন্ধ বাতাস মনে জাগে শোক যে!

একুশ এলে যেন রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার
রক্তের ফিনকি: চেয়ে দেখি, চোখে ভাসে সব্বার!
একুশ এলে শাখা নাড়ে পলাশ শিমুলের ডাল
সূর্য তাপে রক্ত জবা পাপড়ি করেছে লাল।

একুশ এলে প্রতিবাদের মিছিল চতুর্দিকে
ভাষার নামে ওই স্লোগান মনে দিলাম লিখে।
একুশ এলে লড়তে জানি, কীসের তবু ভয়
মায়ের ভাষা মুক্ত ভাষা আমরা করেছি জয়।


সূর্যবরণ
মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ

তিড়িংবিড়িং ফড়িং নাচে
কচি সবুজ ঘাসফুলে,
পিউ-পাপিয়া উঠল গেয়ে
কুটুম পাখির লেজ দুলে।

ঝিলের জলে হাঁসের ছানা
শুক্তিশামুক খায় তুলে,
মায়ের আদর পেয়ে শিশু
কান্নাকাটি যায় ভুলে।

কিষাণবধূ জলকে চলে
মাঝিরা নায় পাল তুলে,
নীল ভোমরা লুটছে মধু
সদ্যফোটা লাউফুলে।


বায়ান্নর ভাষা
আলাউদ্দিন হোসেন

বায়ান্নর অর্জন আজ
বাংলা প্রিয় ভাষা
বায়ান্নর অর্জন আজ
বেঁচে থাকার আশা।

বায়ান্নর অর্জন আজ
বাঙালি জাতির প্রাণ
বর্ণমালায় মিশে থাকা
তাজা রক্তের ঘ্রাণ।

শহীদ মিনার ঘিরে আছে
সকল শহীদ ছায়া
বাঙালি প্রাণে গাঁথামালা
ভাষার প্রতি মায়া।


বিলাতি টিংকু
রফিকুল নাজিম

ছোট্টো টিংকু হেব্বি পাংকু
ডাল-ভাত সে খায় না
স্যান্ডউইচ আর বার্গার প্রিয়
ভাতে স্বাদ পায় না।

চোখে পরে রঙিন চশমা
মোটা কাঁচের ফ্রেমটা
শাকসবজিতে মুখ রুচে না
মাছে নাই তার প্রেমটা।

ছোট্টো টিংকুর বিশাল দেহ
গায়ে শক্তি পায় না
জাংক ফুড আর কোল্ড ড্রিংকস
খেতে ধরে বায়না।

মা’কে টিংকু মাম্মাম ডাকে
মায়ের হাতে খায় না
হাবভাবে সে জাত বিলাতি
বাঙালি হতে চায় না!


শহীদ বানান
গোলাপ আমিন

বাংলা ভাষার প্রতিটি বর্ণে
অধিকারের রক্ত আছে
রাজনীতি নয় ভাষার প্রশ্নে
তাইতো অবিভক্ত আছে।

কূটকৌশলে দেশটা শাসন
করতেছিল পাকিস্তানি
এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়
তরুণেরা, আমরা জানি।

অধিকারটা ক্ষুণ্ন হওয়ায়
বুক ফুলিয়ে পথে নামে
বাংলা ভাষার মর্যাদাকে
রক্ষা করে রক্ত-ঘামে।

ভাষার মান ও মর্যাদাটা
এখন একটু ক্ষুণ্নতা প্রায়
সঠিক বানান-ভাষা যেন
দিনে দিনে পূর্ণতা পায়।

‘শহিদ’ নাকি ‘শহীদ’ হবে
বানান নিয়ে শঙ্কা আছে
‘শহীদ’ বানান লেখা দেখুন
দুই টাকার নোটের পাছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement