১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ শাবান ১৪৪৬
`

হারিয়ে যাওয়া শব্দেরা

-

তানিমের বইয়ের প্রতি দুর্বলতা সেই ছোটবেলা থেকেই। নতুন বইয়ের পাতার গন্ধ, মলাটের চকচকে ছাপা তাকে এক অন্য রকম আনন্দ দেয়। তাই বইমেলার কথা শুনলেই তার মন উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে।
এবারও সে বইমেলায় এসেছে। কোনো নির্দিষ্ট বই কেনার উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু দেখার জন্য স্টলগুলো একের পর এক ঘুরছিল সে। একই সাথে নতুন কী বই এসেছে দেখে নিচ্ছিল। হঠাৎ করেই মেলার এক কোণে প্রচণ্ড ভিড় দেখে তার কৌতূহল হলো। এত মানুষ এক জায়গায় কেন জমেছে?
ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখে, একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এসেছেন। তিনি নাকি বইও লিখেছেন! আশপাশের সবাই মোবাইল হাতে লাইভ করছে, সেলফি তুলছে, ভিডিও করছে। তানিম আশায় ছিল, হয়তো এখানে বই নিয়েও কিছু আলোচনা হবে। কিন্তু না, মানুষ বই কিনছে না, শুধু ছবি তুলেই ব্যস্ত!
এই দৃশ্য দেখে তানিমের মন খারাপ হয়ে গেল। বইমেলা কি তাহলে এখন শুধুই সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট তৈরির জায়গা? লেখার মান, সাহিত্য, এসব কি আর গুরুত্বপূর্ণ নয়?
হতাশ মনেই সে হেঁটে চলল একটু নিরিবিলি এক কোণে। সেখানে একটা ছোট্ট স্টল, খুব একটা ভিড় নেই। একজন মধ্যবয়সী লেখক আপন মনে বসে আছেন, তার বইয়ের প্রতিটি কপি যেন অবহেলায় পড়ে আছে। তানিম সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘স্যার, আপনার বইটা কেমন?’
লেখক হাসলেন।
‘সময়ের গল্পগুলো বলেছি। হয়তো পাঠকের হাতে পৌঁছায়নি এখনো।’
তানিম বইয়ের কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে দেখল। ভাষা চমৎকার, ভাবনাগুলো গভীর। সে আর দেরি করল না, এক কপি কিনে ফেলল।
লেখকের চোখ আনন্দে চকচক করে উঠল।
‘ধন্যবাদ বাবা, তোমার মতো পাঠকের জন্যই আমরা লিখি।’
তানিম বই হাতে নিয়ে আবার হাঁটতে লাগল। মেলার কোলাহল পেছনে পড়ে গেলেও তার মনে হচ্ছিল, হারিয়ে যাওয়া শব্দগুলো যেন একটু একটু করে পথ ফিরে পাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement