নান্দনিক ছৈলারচর
- জিল্লুর রহমান জিল্লু
- ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ধান-নদী-খাল তিনে বরিশাল। বরিশাল বিভাগের অন্যতম প্রধান নদী বিষখালী। ‘বিষখালীর কন্যা, কাঁঠালিয়া অনন্যা’। ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার বার মৌজার খলিফা হজরত আব্দুল জব্বার মিঞাজী (রহ:)-পুণ্যভূমি কাঁঠালিয়ার হেতুলবুনিয়া পয়েন্টে বিষখালী নদীর তীরে জেগে উঠেছে এক বিশাল চর। এই চরকে প্রকৃতি সাজিয়েছে অপরূপ সাজে। এই চরটিকে নান্দনিক শোভায় সজ্জিত করেছে নয়নাভিরাম লাখ লাখ ছৈলাগাছ। এ কারণে নামকরণ করা হয়েছে ‘ছৈলারচর’। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে প্রবহমান খরস্রোতা বিষখালী নদী কাঁঠালিয়া উপজেলার সৌভাগ্যের দ্বার খুলে দিয়েছে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট ‘ছৈলারচর’। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রবাহিত হয়ে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে কাঁঠালিয়া সীমান্তে ছৈলারচরের অবস্থান। প্রায় দের যুগেরও আগে এই চরের উৎপত্তি হয়। ২০১৪ সালে কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রশাসন ছৈলারচরকে ‘পর্যটন স্পট’ হিসেবে ঘোষণা করে। বিষখালী নদীর তীরে হেতালবুনিয়ায় ৫০ জায়গা নিয়ে চরের বর্তমান অবস্থান হলেও দিন দিন চরের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে ৯৫ ভাগ ছৈলাগাছ থাকলেও আরো রয়েছে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, বট, খেজুর, গুজিসহ নানান প্রকৃতির গাছ। দৃষ্টিনন্দন পাপড়িযুক্ত লাল-সাদা-বেগুনি রঙের ছৈলাফুল সবাইকে মুগ্ধ করে। ছোটদের কাছে ছৈলাফুলের মধু খুবই প্রিয়। ফুল কেটে ভিজিয়ে রাখলে তা থেকে মধু পাওয়া যায়। ছৈলাফল টকজাতীয় গোলাকার চ্যাপ্টা কাঁচা-পাকা রান্না করে খাওয়া যায় বলে অভিমত আছে। ফল দিয়ে জেলি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়।
ছৈলারচরে রয়েছে ছোট-বড় ছৈলাগাছের অপরূপ সবুজ বনানী। উপকূল রক্ষায় ছৈলাগাছ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ছৈলাগাছের শিকড় অনেক গভীরে চলে যায় তাই ঝড়-তুফানে সহজে উপড়ে পড়ে না। এই গাছ শক্ত প্রকৃতির যা সহজে ঝড়ো হাওয়ায় ভাঙেনা। গাছের পাশপাশি দর্শনার্থীদের নজর কারে অসংখ্য , চড়ুই, ডাহুক, বক, ফিঙ্গে, বুলবুলি, মাছরাঙা, ঘুঘু, হলদে পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখি। গাছে গাছে মৌমাছির বাসা দেখতে খুবই ভালো লাগে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য পর্যটকের মনে কেড়ে নেয়। বিষখালী থেকে বয়ে আসা মৃদু শীতল হাওয়া তৃপ্ত করে শান্তির পরশ ছুঁয়ে দেয় ভ্রমণপিপাসুদের। তাই তো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অগণিত মানুষ ছুটে সে এখানে পিকনিক করার জন্য। বিভিন্ন জাতীয় এবং ধর্মীয় পর্বে মানুষ ছুটে আসে এখানে।
বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় চরের অধিকাংশ ভূমি। শীতের সময় পানি কম থাকায় শুকনো থাকে বলে উপভোগ করা যায় চরের নান্দনিক সৌন্দর্য। যেকোনো স্থান থেকে বরিশাল টু বরগুনা নৌপথে নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চে কাঁঠালিয়া-আমুয়ার মাঝখানে হেতালবুনিয়া ছৈলারচরে যায়। সড়কপথে বরিশাল-পাথরঘাটা মহাসড়কের কাঁঠালিয়া জেলার বটতলা বাজার হয়ে ছৈলারচরে যাওয়া যায়। তবে আমরাবুনিয়া বাজার থেকে কিংবা হেতালবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর থেকে সরু কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। হেতালবুনিয়া আলিম মাদরাসা পার হয়ে প্রথমে চোখে পড়বে বিশাল এক মাটির কেল্লা। এর পরে রয়েছে সুসজ্জিত ডিসি লেক। ডিসি লেকের ডানে রয়েছে একটি কাঠের ব্রিজ, বাম দিকে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ইকোপাক। নদীপথ দিয়ে প্রবেশ জন্য রয়েছে পাকা সিঁড়ি।
এখানে দর্শনার্থীদের থাকা-খাওয়ার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্রামের জন্য রয়েছে- শীতল পরশ, কিছুক্ষণ, সাঁঝের মায়া, জল জোছনা, দক্ষিণ হাওয়া, বৃষ্টিবিলাস, ধানসিঁড়ি, মৌ বন, আকাশ নীল, কুঞ্জছায়া নামে বিশ্রামাগার এবং বৈঠকখানা। চরের অপূর্ব ছৈলারগাছে দেখার জন্য রয়েছে চার-পাঁচটি টং ঘর, লেকে ভ্রমণের জন্য আছে কয়েকটি সি-বোট, লাইভ জ্যাকেট। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, দোলনা, পিছলে খাওয়া, বিভিন্ন পশুর ভাস্কর্য। আরো আছে ইচ্ছে মতো নিরাপদ খাবার পানির জন্য গভীর নলকূপ, টয়লেট, রান্নাঘর।
এখানে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন, কাঁঠালিয়া জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। তবে পর্যটন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে ছৈলারচর হতে পারে দুবলারচর কিংবা কুয়াকাটার মতো জনপ্রিয় দক্ষিণ বাংলার আর একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট বা পর্যটন কেন্দ্র। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে অনেক লোকের। ছৈলারচরকে জাতীয় পর্যটনশিল্প হিসেবে ঘোষণা করে মানুষের থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা, জল ও স্থলপথে সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা। দর্শনার্থীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, স্থল ও নৌপথে নিয়মিত পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা, রেস্ট হাউজ নির্মাণ, খেলার মাঠ, পশুপাখির অভয়াশ্রম, অধিক পরিমাণ বৃক্ষরোপণ, বন সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, কাঁঠালিয়া থেকে গাইডওয়াল স্থায়ী ভেরিবাঁধ নির্মাণ, কাঁঠালিয়া থেকে ছৈলারচর পর্যন্ত রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা একান্ত প্রয়োজন। ছৈলারচরকে জাতীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করা কাঁঠালিয়াবাসীর একান্ত প্রাণের দাবি। কাঁঠালিয়ার ছৈলারচর একদিন পর্যটনশিল্প হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
কাশিপুর, বরিশাল
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা