অহঙ্কারের শাস্তি
- নবীন চৌধুরী
- ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১২, আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১৭
একটি বন। সে বনে অনেক পশু পাখির বাস তাতে একটি মস্ত বড় সিংহও থাকত। সিংহের মনে বড় দুঃখ ছিল। কেননা, তার কোনো সঙ্গী ছিল না। সিংহ তো বনের রাজা, এ কথা সবাই জানো। তাই বনের সব পশু তাকে কর দিয়ে চলত। বনের পশুরা বিনয়ের সুরে কথা বলত আর মাথা নুইয়ে সম্মানও করত। তাই সিংহ অহঙ্কারে গদো গদো হয়ে উঠত। আর মনে মনে বলে উঠত, থাক বাবা, আমি এখানে এই বনে একা আছি বলেই আমাকে সবাই ভয় পায়। আর যদি আমার মতো আর কেউ থাকত তাহলে কেউই তেমন ভয় পেতো না। সিংহ তাই অহঙ্কারের সুরে বলে উঠত, আমার মতো সাহস আর বুদ্ধি কে রাখে? আমাকে দেখে বনের সবাই লেজগুটিয়ে ভয়ে পালায়। শুধু তাই নয়, আমাকে অন্য আর সব পশুরা রুটিন মাফিক খাবার এনে দেয়। কিন্তু এনে দিলে কি হবে, তারপরও তার পেট ভরত না। তাই সে নিরীহ পশুদের ধরে ধরে খেতে শুরু করল। বিশেষ করে হরিণদের। কিন্তু এরকম অত্যাচার-অবিচারের মুখেও অন্য পশুরা প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে যেত, ওমনি সে ধরে খেয়ে ফেলত । এমনি করেই দিন দিন সিংহের অত্যাচার বেড়ে চলল। ওই বনের মধ্যে শিয়াল ও বানর বাস করত। তোমরা তো জানো, শিয়াল মামার বুদ্ধি কত তীক্ষè? তাই একদিন সিংহকে কিভাবে মারা যায়; সে ব্যাপার নিয়ে বানরদের সাথে শিয়াল মামার সভা বসাল অতি গোপনে। শিয়াল মামা বলল, সিংহ ব্যাটাকে মারতে পারলে এ বনের সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। এছাড়া সিংহটা খুবই অহঙ্কারী হয়ে উঠেছে। সে মনে করে, আমার চেয়ে সাহস আর বুদ্ধি কার আছে এ বনে? সিংহ ব্যাটা জানে না, বাপের ওপর বাপ আছে।
সেদিনের মতো সভা শেষ করে শিয়াল মামা বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় হরিণদের যে রাজা এসে বলল, শিয়াল মামা, আমাদের একে একে ধরে খেয়ে ফেলছে ওই সিংহটা। আপনার এতো বুদ্ধি শুনেছি, আর সেই আপনি থাকতে আমাদের এভাবে ধরে ধরে খেয়ে ফেলবে? আমরা তাহলে কার ভরসায় বাঁচব? শিয়াল মামা বলল, দেখো হে হরিণ বন্ধু! আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে ওই অত্যাচারী আর অহঙ্কারী সিংহ ব্যাটাকে মারা যায় আর কটা দিন সবুর করো।
এরপর আরেক দিন বনের অন্যান্য পশুর সঙ্গে শিয়াল মামার সভা বসল অতি গোপনে। শিয়াল মামা বলল, দেখো হে আমার বন্ধুরা, আমার যে সভা করছি সিংহটাকে মারার ব্যাপারে। সে কথা যেন কোনো মতে না জানতে পারে। তাহলে তাকে মারা কোনো মতে সম্ভব হবে না। একটু থেমে তারপর বলল, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো বন্ধুরা। আমার মাথায় একটি সুন্দর বুদ্ধি খেলেছে। বুদ্ধিটা হলো- আমরা সবাই মিলে বিরাট গর্ত তৈরি করব। সে গর্তটা গভীর হতে হবে আর তার ভেতরে প্রচুর পানি থাকবে। তারপর সেই গর্তের ওপরে খুব নরম কাঠ বিছিয়ে রাখা হবে। কাঠ রাখার পর কিছু তরতাজা ঘাস হরিণ বন্ধুদের জন্য বিছিয়ে দেবো। আর সেই ঘাস হরিণরা অভিনয় করে খেতে থাকবে। এতে করে সিংহ ব্যাটা বুঝতে পারবে না, তার জন্য মরণফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। তা হলে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। শিয়াল মামার কথা শুনে হরিণরা বলে উঠল, শিয়াল মামা তারপর কী হবে? শিয়াল মামা বলল, তারপর আর কি, এরপর গর্তের ওপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হরিণ বন্ধুরা ঘাস খেতে থাকবে। তখন সিংহ ব্যাটা লোভের বসে গর্তের এপার থেকে ওপারে হরিণ বন্ধুদের ধরার জন্য যাবে। আর যেতেই গর্তের উপরকার নরম কাঠ ভেঙে গর্তের ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাবে। আর এমনি করে সে মারা যাবে। মোট কথা, গভীর গর্তের পানির মধ্যে পড়ে তার সলিল সমাধি হবে। এবার দ্যাখো আমার প্রস্তাবটা কেমন হলো তোমাদের কাছে।
বনের পশুরা সবাই সমন্বেয়ে বলে উঠল, খুবই সুন্দর প্রস্তাব দিয়েছেন শিয়াল মামা, এর মতো আর সুন্দর বুদ্ধি আর দেখছি না আমরা। প্রথমে শিয়াল মামার কথায় হরিণ বন্ধুরা আপত্তি তুলে ছিল। আমাদের মারার জন্যই শিয়াল মামা বুদ্ধি করেছে বুঝি। তাই শুনে শিয়াল মামা বলল, দেখো হরিণ বন্ধুরা, তোমরা আমাকে ভুল বোঝো না। আমরা ইচ্ছে করলে অন্য বুদ্ধি করতে পারি কিন্তু জানো তো সিংহ ব্যাটা তোমাদেরকেই বেশি খেতে ভালোবাসে। তাই আমি অনেক ভেবে এই প্রস্তাব করেছি।
হরিণদের রাজা ও রানী মনে মনে ভাবল, আমাদের তো এমনিই ধরে ধরে খেয়ে ফেলে সিংহ রাজা আমাদের আরো দু’-তিনজনের জীবন। যদি এমনিভাবে অপঘাতে যায় তো, যাক না। আর এসব ভেবে রাজা হরিণ বলে উঠল- ঠিক আছে, শিয়াল মামা আপনার প্রস্তাব মেনে নিলাম। তখন শিয়াল মামা বলল, এই তো তোমাদের বুদ্ধি আর সাহস হয়েছে। এটাই আমি চাই। আমরা তো মরছি তবে সিংহ ব্যাটাকে এবার মেরেই মরব। যাই হোক যেই কথা সেই কাজ। অল্পক্ষণের ভেতরেই ফাঁদ পাতার কাজ শুরু হলো। এক সময় মরণ ফাঁদ পাতার কাজ শেষ হয়ে গেল।
এর মধ্যে একদিন শিয়াল মামা, সিংহটাকে খাবার দিতে গেল। সিংহকে বলল, মহারাজ আপনার পেটে ক্ষিধে বেজায়। তাই আপনার আরো খাবার ব্যবস্থা করছি প্রতিদিনের জন্যে। সিংহ বলল, কেমন সে খাবার। শিয়াল বলল, হে মহারাজ, এই বনে আম গাছের তলায় তরতাজা কতগুলো হরিণ ঘাস খায় প্রতিদিন। তাই এদের মধ্য থেকে খাবার জন্যে আপনি আজই একটু চেষ্টা করে দেখুন না। মহারাজ, আপনার প্রিয় খাবার হলো হরিণ। সিংহ সব শুনে বলল, ঠিক আছে। তুমি যখন বলছ, আজ তাহলে আমাকে শিকারে বের হতে হবে। এই বলে শিয়াল মামা সম্মান জানায়, সিংহের কাছ থেকে বিদায় নিলো। এরপর দিন সিংহ শিয়াল মামার কথা মতো আমগাছ তলার সামনে গিয়ে দেখল, সত্যিই বেশ কিছু দূর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ঘাসের জমিন। আর তার ওপরে কয়েকটা তরতাজা হরিণ মনের আনন্দে ঘাস খাচ্ছে। এর আগেই শিয়াল মামা সব বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়ে ছিল হরিণ বন্ধুদের। তাই তার কোনোরকম ভয়ভীতি মনে না রেখে এক মনে ঘাস খাচ্ছিল। আর এদিকে বনের আশপাশে শিয়াল মামাসহ অন্য পশুরা অপেক্ষা করছিল সিংহটার অন্তিম করুণ দশা দেখার জন্য।
এদিকে সিংহের অবস্থা তো এমন হলো ভাষায় প্রকাশ করার নয়। মোটাসোটা হরিণদের ঘাস খেতে দেখে মুহূর্তে তার জিভে পানি এসে পড়ল। সিংহ বেটা মনে মনে ভাবল, যাক আজ এক সঙ্গে দুটো হরিণ ধরে পেটপুরে খাবো। এই না বলে সিংহটা আস্তে আস্তে কাঠ বিছানো সেই ফাঁদের এপার থেকে ওপারে হরিণদের ধরতে যেই ছুটল আর ওমনি ফাঁদের কাঠ ভেঙে সিংহ গভীর গর্তে পড়ে গেল। পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সিংহ ব্যাটা আর্তচিৎকার করতে লাগল বাঁচাও বাঁচাও বলে। কিন্তু কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে এলো না। সে গর্তের গভীর পানিতে পড়ে মারা গেল। সবাই স্বস্তি ফিরে পেল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা