বুটের আওয়াজ
- কৌশল কর্মকার
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০, আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১৭
শীতের সকাল। কনকনে ঠাণ্ডা। চারিদিকে কুহেলিকার আচ্ছাদন। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। এলাম ঘড়িটার কারণে সকাল সকাল মায়ের বকা শুনে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। মাথাটা চিনচিন করছে। মোবাইলে সময় দিতে গিয়ে রাত গভীর হয়েছিল তাই ঘুম কম হয়েছে। রিমির মেজাজের উপর খানিকটা লবণ পড়েছে।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বইয়ের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যাবে এমন সময় তার বাবা নকুল দত্ত কাছে এসে মৃদু হেসে বলে- মা তোমার জন্য বুট জুতা নিয়ে এসেছি,এগুলো পড়ে প্রাইভেটে যাও। নকুল দত্ত লোকটা বড়ই সাদাসিধে। যে যেটাই বলে সেটাতেই হুম। নিজস্ব মতামত কোনো দিন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেনি। রিমি তার বাবার হাত থেকে জুতার বাক্সটা নিলো। তাড়াতাড়ি খুলল। দেখল একজোড়া নতুন বুটের জুতা। রিমি জিজ্ঞেস করল, মোজা কই? তার বাবা ব্রু কুচকে সামন্য হেসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল- আজকে নিয়ে আসব মা।
রিমি তার মেজাজটা ধরে রাখতে পারল না। উচ্চস্বরে তার বাবাকে বলল- এনেছ তো ছেলেদের বুটের জুতা তাও আবার মোজা ছাড়া, এখন দাত কেলিয়ে হাসতেছ। আমি পরব না এই জুতা বলে জুতা জোড়া মেঝেতে আছাড় দিলো। রিমির মা অরুনা রানী বেজায় রাগী। তড়িঘড়ি করে রান্নাঘর থেকে এসে রিমিকে বলল ভালো মানুষের মতো জুতা পড়ে যাও। জুতাতে কি ছেলে মেয়ে লিখা আছে? আর রিমির বাবার উদ্দেশ্যে বলে একটা কাজ যদি ঠিকমতো করতে পারো। দেখেও বোঝো না কোনগুলো ছেলে মানুষ পরে আর কোনগুলো মেয়ে মানুষ পরে? বলতে বলতে আবার রান্নাঘরে চলে গেল। রিমির সামনে এসএসসি পরীক্ষা। রিমির মা পড়াশোনার ব্যাপারে সিরিয়াস। রিমি তার মাকে যথেষ্ট ভয় পায়। তাই বিড়বিড় করে কি জানি বলতে বলতে মোজা ছাড়া বুটের জুতা পরল। তারপর বারান্দায় এদিকে থেকে ওদিকে কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করল। হাঁটার তালে তালে বুটের আওয়াজ হচ্ছে ঠক ঠক। আওয়াজ শুনে রিমির ঠাকুমা কাঁপানো গলায় বলল মিলিটারি আসছে, মিলিটারি আসছে। রিমি তার ঠাকুমার কথা শুনে একটু হেসে বলে- চুপ কর বুড়ি। তার ঠাকুমার বয়স প্রায় সত্তর থেকে পঁচাত্তর হবে। কুঁজো হয়ে হাতে লাঠি নিয়ে কোনোমতে হাঁটে আর কাঁপানো গলায় কথা বলে। ঠাকুমা রিমিকে খুব আদর করে। তাই রিমির সব থেকে ভালো বন্ধু তার ঠাকুমা। রিমি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে- আমি আজকে প্রাইভেটেই যাব না। এই কথা শুনে অরুনা রানী রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে- পরীক্ষা কি আমি দেবো না তুই দিবি? তাড়াতাড়ি যা, এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাস্টার কি তোর জন্য দেরি করে পড়ানো শুরু করবে নাকি? এত ঝামেলা আর ভালো লাগে না। নকুল দত্ত বারান্দার এককোণায় চুপ করে বসে আছে আর মনে মনে ভাবতেছে সকাল সকাল ঝামেলাটা আমার কারণেই শুরু হলো। নকুল দত্ত সব সময় নিজের দোষটাই খুঁজে আর নীরবে সব সয়ে যায়। ঠাকুমা রিমিকে আসস্থ করল জুতা পরে যাও, কেউ কিচ্ছু বলবে না। অগত্যা রিমি বুটের জুতা পড়ে প্রাইভেটে গেল। রিমি প্রাইভেট থেকে ফিরেই বইয়ের ব্যাগটা ধপাস করে টেবিলের উপর রাখে। আর গোমরা মুখে বিছানার উপর বসে পড়ে। ঠাকুমার বুঝতে বাকি রইল না। বান্ধবীরা তাকে চেতিয়েছে। তবুও টাকুমা কাছে এসে বলে কি হয়েছে রে দিদিমনি? রিমি মুখ ভেঙচিয়ে বলে বুড়ি খুব তো বলেছিলে, যাও কেউ কিচ্ছু বলবে না। তারা বুটের জুতাকে ঘোড়ার গাড়ির আওয়াজের সাথে তুলনা করে হাসাহাসি করেছে। বাবা তো আমার জন্য জুতা আনেনি, এনেছে ঘোড়ার গাড়ি! ঠাকুমা শুনে মচুকি হাসে আর বলে আওয়াজ মানুষের মন-মস্তিষ্কে ছবি আঁকে। আওয়াজ শুনেই অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা