০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

স্বভাবেই চরিত্র ফুটে

স্বভাবেই চরিত্র ফুটে -

আপ্পার আঁচলের তলে বেড়ে ওঠা সোনার সন্তানরা ভারতে পালিয়েও ধর্ষণসেঞ্চুরির অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেনি। ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবের পর গা ঢাকা দিয়েছিল তথাকথিত সেসব সোনার ছেলেরা, পালিয়েছে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে। ফ্যাসিবাদীদের দৌড় আর কদ্দুর! ওই ওদের 2nd Home (!) ভারতেই। কিন্তু দুর্দিনে ঠাঁই দেয়া ওদের ও দেশের নিরীহ নারীদেরও লালসার আগুনে পোড়াতে ছাড়ল না তথাকথিত সোনার ছেলেরা! ওখানে গিয়েও ধর্ষণ! আসলে “স্বভাব না যায় ম’লে।” এই স্বভাব কি এক দিনের তৈরি? ১৫টি বছর ধরে যখন ছিল না কোনো বিচার, না ছিল প্রতিকার, না ছিল প্রতিবাদের সম্মান। তখন জাতি আর কেমন নাগরিক আশা করতে পারে এদের থেকে? এমনই হতাশার নিরাশায় যখন দেশ চলছিল, চারদিকে ধর্ষণের মহামারী লেগেছিল, আর অধিকাংশ স্থানেই প্রমাণিত হচ্ছিল যে ওরা ওই জঘন্য লীগের নেতাকর্মী। তখনো ছিল না দলের ভেতরের সংস্কার, ছিল না উপযুক্ত বিচার । এমনি এক অবস্থায় বর্ষীয়ান এক নেত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কী হচ্ছে এসব? কেন ছেলেদের নৈতিকতা শিক্ষা দানে নিবৃত্ত আপনারা? জাতি আর কত ধর্ষণ দেখবে?’ তিনি তখন উত্তরে বলেছিলেন, ‘এখনো ৭১-এর ধর্ষকদেরই বিচার হয়ে সারে নি! তার মানে? সে দিন আমি শুধু অতটুকু প্রতিক্রিয়াই দেখাতে পেরেছিলাম। বেশি কিছু বলতে গেলে তো ‘চাকরির’ওপরেই আসবে হামলা। কিন্তু ভুলিনি সে দিনের মনোবেদনার কথা। আজ যেন আল্লাহ আমাকে সে সুযোগ করে দিলেন। আজকের ১০/১২/২৪ দৈনিক পত্রিকাগুলোর বিশেষ শিরোনাম : ‘ভারতে ধর্ষণ মামলায় সিলেটের ৪ আওয়ামী লীগ নেতা আটক।’ (দৈনিক নয়া দিগন্ত) খবরে জানা গেল, ওই সব ধর্ষণকারীকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়াতে সেখানে অবস্থানরত পলাতক নেতারা ‘আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তদবির শুরু করে দেন। কলকাতায় বসবাসরত সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক দলীয় নেতা এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হায়রে! ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে!’ দেশে থাকতেও যেমন এরা নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদেরে বাঁচিয়ে রাখত সব অপকর্ম থেকে, ভুল ধারণায় পরিচালিত করত দলনেত্রীকে, দেশটাকে চুষে খেতে সব সাবাড় করে ছাড়ত ক্ষমতার দম্ভে, এখনো ওখানে গিয়েও সেই একই প্রচেষ্টা অব্যাহত। তবে এবার কী হয় দেখা যাক। ও দেশের নারীরা যদি স্বেচ্ছায় বাংলাদেশী যুবকের রসনাতলে ধরা দেয় সে তো ভিন্ন কথা আর যদি সত্যিই সম্মানহানি আর আব্রু রক্ষার চেতনায় উজ্জীবিত হয়, তবে তাও দেখবে বিশ্ববাসী গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টি দিয়ে; যা এ দেশের নারীরা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ওই যে ওই ‘৭১’-এর দোহাই তুলে যারা সোনার ছেলেদের (?) পাহারা দিচ্ছিলেন? তাদের জন্য!
৭১-এর প্রধান ধর্ষক ছিল পাক সেনারা। তারা ছিল জাত সৈনিক। যুদ্ধের সময় হঠাৎ ব্যারাক মুক্ত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না যাদের। উপরন্তু তারা না ছিল আমাদের স্বজাতি, না ছিল একই ভাষাভাষী! কিন্তু? ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপকরা কারা? ওরা তো এ দেশেরই সন্তান, একই ভাষাভাষী, একই ধর্মাবলম্বী, একই ভূখণ্ডের অধিবাসী! কী করে পারলি একের পর এক ‘তনু’ হত্যা, ‘নুসরাত’ হত্যার মতো হত্যাগুলো পর্যন্ত ঘটিয়ে যেতে? কিভাবে করল স্বামীর হাত থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে পশুবৃত্তি মেটাতে? সবই কি ছিল তবে ৭১-এর প্রতিহিংসা? কার ওপর, কেন? একবারো মনে হয়নি- এরা তো আমাদেরই কারো না কারো মা, বোন, মেয়ে, কন্যা? একই জাতি, একই ভাষাভাষী আমরা! দলনেত্রী যেমন করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে বসেছিলেন ক্ষমতায়, আর একের পর এক শেষ করে যাচ্ছিলেন শত শত জনজীবন, তেমনিভাবে নেতাকর্মীদেরও কি লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল এ দেশের নিরীহ নারীদের ওপর পাশবিক লালসা মেটাতে? একবার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশনভাতার দাবিসংক্রান্ত এক সমাবেশে তৎকালীন এক আওয়ামী মন্ত্রী দলনেত্রীর গুণগান গাইতে গিয়ে তার বদান্যতার উদাহরণস্বরূপ বলেছিল, তিনিই এতটাই মমতাময়ী যে নেতাকর্মীদের ভুলভাল, যথেচ্ছাচার, লুটপাট দেখেও নাকি বলতেন, আহারে থাক! থাক! খাক, খাক! কত দিন ক্ষমতার স্বাদ পায়নি ওরা। ঠিক তার বছর ঘুরতেই বেরিয়ে এলো নেত্রী আপ্পার নিজ মুখে বর্ণিত পিওনের ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার গল্প। জাতির সম্মুখে ভ্রষ্টাদের মতো মুখ কেলিয়ে বলেছিলেন, তিনি সেদিন তার সেই পিওনও নাকি প্লেন ছাড়া চড়ে না। ধিক! এমন দলের মন-মানসিকতার। এমন যাদের কুরুচি তাদের কাছে ধর্ষণ যেন কোনো অপরাধই ছিল না। অন্যায়, অপরাধের সংস্কৃতি ওদের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লেপ্টে ধরেছিল। ওদের সুস্থ চেতনার বিলুপ্তি ঘটেছিল।
তাই তো আজ আবার ভারতে গিয়েও ওই একই লীলা! ভারত সরকার যদি এখনি এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ না নেয় তবে দেখে যেতে হবে একের পরে এক এর করুণ পরিণাম। আস্তানা তো গেড়েছিস ও দেশে। ক’দিন যায় দেখা যাক। আর আপ্পার মতো আঁচল ঢাকা আশ্রয় পেলে তো ভিন্ন কথা। সে বিচারের ভার সে দেশের রমণীদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। তবু বলে যেতে চাই : ‘কয়লার ময়লা না যায় ধুলে, স্বভাব না যায় মরলে!’


আরো সংবাদ



premium cement