০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

এক বিকেলের পাথরখনি

এক বিকেলের পাথরখনি -

অনেকদিন ধরেই ভাবছি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ায় অবস্থিত পাথরখনিটি দেখতে যাব। ছোট ভাই জহিরুল সেখানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছে। তাই এক দিন ওকে কল দিলাম। সে সাগ্রহে রাজি হলো। যাক ওর মাধ্যমে পাথরখনির অভ্যন্তরটা ঘুরে দেখা যাবে। ভাবতেই ভালো লাগল। আমার সাথে সাথী হলেন আরো তিনজন। সুজাবত ভাই, নিয়ামত ভাই আর সুজারুল ভাই। তিনজনই আমার সহকর্মী। তারাও খুব খুশি। আমরা চারজনই পার্বতীপুরের খোলাহাটি থাকি।
দিনটি ছিল শনিবার। আমরা দুপুরের খাবারের পর তৈরি হয়ে গেলাম। খোলাহাটি বাজার থেকে আমি আর নিয়ামত ভাই একটা ভ্যানে করে চলে গেলাম চুতরির মোড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। মাঝে সুজারুল ভাইকে আমাদের ভ্যানে তুলে নিলাম। চুতরির মোড়ে গিয়ে দেখি সুজাবত ভাই অনুপস্থিত। চুতরির মোড়ের সঠিক উচ্চারণ জানি না। একেকজনের মুখে একেকরকম উচ্চারণ। আমি বলি চৈতির মোড়। মেয়েদের নাম। আমার দেয়া নাম।
একটা বাস আসে রংপুরগামী। আমরা এ বাস দিয়ে বদরগঞ্জের সিও বাজারে নামব। সুজাবত ভাই ঠিক তখনি উপস্থিত হলেন? আমরা বাসে চড়ে সিও বাজারে নামলাম। জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়া। সিও বাজার থেকে মধ্যপাড়ার অটোতে চড়ে চলে গেলাম মধ্যপাড়া পাথরখনির আবাসিকের সামনে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। জহিরুল আবাসিকেই থাকে। আবাসিকের দুটো গেট রয়েছে। আমরা ২ নম্বর গেটে জহিরুলের জন্য অপেক্ষা করছি।
একটু পরেই জহিরুল চলে আসে। আমরা প্রথমে আবাসিক এরিয়াটি ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করি। প্রচুর গাছপালায় পরিপূর্ণ এলাকা। একটা খেলার মাঠ। মাঠের এক কোণে শহীদ মিনার। একটা বিদ্যালয় আছে। আমরা বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখি। পাশেই প্রাথমিক শাখা। চমৎকার কারুকার্য দিয়ে সাজানো স্কুলের দেয়াল। তার ঠিক পাশেই একটি হাসপাতাল।
ও বলা হয়নি, স্কুলের সামনের অংশে একটা শিশুপার্কের মতো। বিভিন্ন গাছপালায় পরিপূর্ণ এলাকাটিতে একটা প্রাণীর প্রতি মাঝে মাঝেই চোখ পড়ছিল। কাঠবিড়ালি।
আবাসিক এরিয়ার একপাশে ফ্যামিলি কোয়ার্টার। সেদিকটায় যাইনি। মেইন রাস্তার পাশ ঘেঁষেই বিশাল পুকুর। দু’টি ঘাট আছে। ঘাটের একপাশে একটা বিশাল আমড়া গাছ। গাছভর্তি আমড়া।
আবাসিকের ১ নম্বর গেট দিয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে আসি। উদ্দেশ্য পাথরখনি। একটা ভ্যানে চড়ে অল্প দূরেই খনির প্রধান ফটকের সামনে থামি। জহিরুলের পরিচয়ে আমরা খনি এরিয়ায় প্রবেশ করি। একটা অদ্ভুত আনন্দ খেলে যাচ্ছিল মনের ভেতর। সবচেয়ে বেশি আনন্দ লাগছে নিয়ামত ভাইয়ের। তিনি ছবি তোলায় মন দিলেন। গেটের ভেতরে প্রবেশের বামপাশেই পাথরের স্তূপ। আমরা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে পাথর দেখছি। জহিরুল বলল, এ পাথর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের পাথর। পৃথিবীর সব পাথরই পাহাড় ভেঙে করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে খনি থেকে আহরিত পাথর ওসব পাথর থেকে অনেক ভালো মানের। তবে এ পাথর দ্বারা দেশের প্রায় ১০ ভাগ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। বাকি চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
গেট থেকে একটা দীর্ঘ রাস্তা ধরে আমরা ভেতরের দিকে যাচ্ছি। রাস্তার দু’পাশে মাথাকাটা দেবদারু গাছের সারি। স্তূপাকৃত পাথরের দেয়ালে আমরা গ্রুপ ছবি তুলি। পাথরের বিশাল বিশাল ¯ূ—পকে ছোটখাটো টিলার মতো মনে হয়। আরো একটু সামনে গেলে ডানপাশে একটা অফিস পাই। এ অফিসেই জহিরুল বসে। অফিসের ওপাশেই মূল খনিমুখ বা কূপ। খনির প্রায় এক হাজার ফুট নিচে গিয়ে শ্রমিকরা কাজ করে। লিফটের মাধ্যমে তারা ওপর নিচ যাতায়াত করে। শ্রমিকরা সবাই এদেশী। খনি এলাকার আশপাশের মানুষ।
খনি থেকে বেল্টের মাধ্যমে পাথর ওপরে উঠে আসে। বড় বড় পাথর। তারপর ভেঙে ছোট করা হয়। প্রয়োজন মতো বড়, মাঝারি ও ছোট। ট্রাকে করে এসব পাথর চলে যায় দেশের আনাচে- কানাচে।
খনিমুখের ওখানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ। আমরা কেবল আশপাশ ঘুরে দেখতে পারব। বামপাশে দেখলাম বিদেশীদের আবাসিক ভবন। প্রতিটি তলার প্রতিটি রুমেই এয়ার কন্ডিশনার। জানলাম এদের বেশির ভাগই রাশিয়ান।
আমরা সামনে এগোই আর পাথরের সমারোহে রোমাঞ্চিত হই। ছোট পাথরের স্তূপ। তারপর মাঝারি সাইজের পাথরের স্তূপ। তারপর অনেক বড় বড় সাইজের পাথরের স্তূপ। এদিকে বড় পাথরের স্তূপগুলো বিশাল অ্যারিয়া নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এ পর্যন্তই আমাদের সীমানা। আর সামনে যাওয়া নিষেধ। কী আর করা, গোধূলির ম্লান হওয়া আলোতে পাথরের সাথে আকাশের মিতালি ঘটিয়ে বিদায় নিলাম।
রাজেন্দ্রপুর, গাজীপুর


আরো সংবাদ



premium cement