০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ঘুড়ি উৎসব

ঘুড়ি উৎসব -

কোনো ধরনের ডিজে পার্টি ছাড়াই একেবারে ভিন্নরূপে পালিত হয়েছে এবারের সাক্রাইন ঘুড়ি উৎসব। শান্তিপূর্ণভাবে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালিত হলো গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৫। সাক্রাইন আমাদের পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর মাঝে একটি। দীর্ঘ ২৮৫ বছর ধরে অর্থাৎ ১৭৫০ সালের এই দিনে মোগল আমলে নায়ে-বি-নওজায়েশ মোহাম্মাদ খানের আমলে ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেই থেকে এই দিনটি কেন্দ্র করে বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী সাক্রাইন ঘুড়ি উৎসব পালনের প্রথা চালু হয়। সূত্রাপুর থানার কাছের স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে কেন্দ্র করে অশালীন প্রথারীতির চালু করেছে। দ্রুত নিরসনকল্পে পদক্ষেপ নিতে জোরদার করার আহ্বান স্থানীয় সম্মানিত অভিভাবকদের। সম্মানিত মুরব্বিদের কাছ থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত ডিজে পার্টি, উচ্চ আওয়াজে গান বাজনা, আতশবাজি, পটকা, উচ্চ শব্দে ভোর রাত হতে মাইকিংয়ের কারণে ঘরে বাচ্চারা, বৃদ্ধগণ এমনকি ঘরের অসুস্থ সদস্যদের খুব কষ্ট সহ্য করতে হতো। এমনকি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া এক প্রকার চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বলা চলে। অতিরিক্ত আওয়াজে পড়াশোনা করা যেন এক প্রকার ভয়ানক মানুষিক অত্যাচারের শামিল বলে অভিযোগ জানান এলাকার নিয়মিত শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আতশবাজির নিয়ন্ত্রণের কথা জানান স্থানীয় মসজিদের কমিটি এবং থানা কর্তৃপক্ষ। সব ধরনের আতশবাজি, ডিজে বন্ধের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সূত্রাপুর থানা কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় মসজিদের মাইকিং ও পরিবেশ দূষণ রোধে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। আজকের এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ঐতিহ্যবাহী পৌষ সংক্রান্তি পালনকে কেন্দ্র করে কিছু শান্তিতে থাকা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মন্তব্য ছিল এরূপ :
পুরান ঢাকায় তাদের জন্ম, পুরান ঢাকায় তাদের বড় হওয়া, ২৪ বছরের জীবনে এই প্রথম মসজিদে তারা মাইকিং করতে শুনেছে যেন বাজি পটকা আর গান বাজনা বন্ধ করো।
এটা খুব প্রয়োজন ছিল, মসজিদ একটা এলাকা- মহল্লার কেন্দ্র। এলাকার মধ্যে অনুচিত কাজ হলে মসজিদ থেকে এর নিয়ন্ত্রণ হবে এটাই হওয়া উচিত। এটা অন্য ধর্মের প্রার্থনালয় দিয়ে হলেও সমস্যা নাই। সমাজে মানুষের কষ্ট রোধ করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ এই বিশ্রী শব্দের অত্যাচারে শুধু যে মুসলিমরাই কষ্ট পায় তাই না, সব ধর্মের মানুষই তো কষ্ট পাচ্ছে। সবার বাসায় ছোট বাচ্চা, বয়স্ক মানুষ ও এলাকার পাখি কষ্ট পায়। জীবের সেবা তো সব ধর্মেই আছে তাই না?
সাক্রাইন খুবই চমৎকার একটা উৎসব, পৌষের বাতাসে আকাশে ঘুড়ি অনেক সুন্দর করে উড়ে, শীতের কত পিঠা খাওয়া যায়, বাসাবাড়িতে দাওয়াত করে রান্না খাওয়া আড্ডা, একটু ছাদ সাজানো। উৎসবটা উৎসব থাকলে কি ভালো লাগে! ডিজে পার্টি আর নেশা করার শয়তানি না করলে কি মজা লাগে সাক্রাইন করতে! ছোটবেলায় জানুয়ারি মাসজুড়ে আকাশে শুধুই ঘুড়ি দেখতাম, পাখি থেকে বেশি ঘুড়ি থাকত অর্থাৎ ঘুড়ির সংখ্যা পাখির থেকে অধিক ছিল। ঘুড়ি কাটা নিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে কি এক আনন্দ খেলা করত! এই ডিজে পার্টি সব ধ্বংস করে যেন সকল প্রকার বাঙালি ঐতিহ্যকে ধ্বংসের পর্যায় এনে দাঁড় করিয়েছে সত্য! বারো মাসের তেরো পার্বণ উক্তিটি যেন বাংলাদেশেই স্বতঃস্ফূর্ত বাস্তবায়ন শতভাগ সম্ভব এবং সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।
শিক্ষার্থী : ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং বিভাগ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ


আরো সংবাদ



premium cement