পৌষ সংক্রান্তি
- বিচিত্র কুমার
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পৌষ সংক্রান্তি শব্দটি এসেছে ‘সংক্রান্তি’ শব্দ থেকে, যার অর্থ সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ। পৌষ মাসের শেষ দিনে সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে, তাই এটিকে ‘মকর সংক্রান্তি’ নামেও ডাকা হয়। কৃষিভিত্তিক এই উৎসব মূলত ফসল কাটার সমাপ্তি উপলক্ষে উদযাপিত হয়। নতুন ধান, খেজুরের রস এবং পিঠাপুলির আয়োজন এই উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
পৌষ সংক্রান্তির মেলা গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য উৎসব, যেখানে মেলার প্রাণশক্তি হয়ে ওঠে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। এই মেলায় পাওয়া যায় হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য যেমন মাটির পাত্র, বাঁশের তৈরি সামগ্রী, হস্তশিল্প, কাঠের খেলনা এবং রঙিন চুড়ি। পাশাপাশি গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও পাওয়া যায়, যা গ্রামীণ জীবনের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করে।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ থাকে পিঠাপুলির স্টল। পাটিসাপটা, ভাপা, চিতই, এবং দুধপিঠার সুগন্ধ মেলাকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়। নতুন ধানের গুঁড়া ও খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি এসব পিঠা বাংলার ঐতিহ্যের গল্প বলে। শিশুদের জন্য মেলায় থাকে নানা ধরনের খেলার আয়োজন। নাগরদোলা, মাটির পুতুল এবং রঙিন বেলুন মেলার প্রাণবন্ত পরিবেশ তৈরি করে। অন্যদিকে বড়দের জন্য থাকে নৌকাবাইচ, কুস্তি, লাঠিখেলা ও মোরগ লড়াইয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। এ ধরনের আয়োজন গ্রামীণজীবনের ঐতিহ্যকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
পৌষ সংক্রান্তির মেলার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাউল গান, কবিগান এবং লোকনৃত্য মেলাকে জীবন্ত করে তোলে। গ্রামের শিল্পীরা নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পান এই মেলার মাধ্যমে। পৌষ সংক্রান্তির মেলা শুধুমাত্র একটি আনন্দ উৎসব নয়, এটি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলে। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, সব পার্থক্য ভুলে সবাই এই মেলায় একত্রিত হয়। এটি গ্রামের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। মেলা প্রাঙ্গণে ছোট ছোট বৈঠক, গল্পগুজব এবং একসাথে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সামাজিক মেলবন্ধনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।
পৌষ সংক্রান্তির মেলা আমাদের জীবনধারার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। যেমন-
১. পরিবেশ ও প্রকৃতির সাথে সংযোগ : পৌষ সংক্রান্তির উৎসব আমাদের প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে শেখায়। নতুন ধান, খেজুরের রস এবং গ্রামীণ জীবনের অন্য উপাদানের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক কত গভীর।
২. ঐতিহ্য সংরক্ষণ : মেলায় বিক্রীত পণ্য এবং প্রদর্শিত সাংস্কৃতিক উপাদান আমাদের শিকড়ের সাথে যুক্ত থাকার গুরুত্ব শেখায়। আধুনিক জীবনে এই ধরনের মেলা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
৩. সামাজিক মূল্যবোধ : মেলার মাধ্যমে সামাজিক মেলবন্ধন ও সহমর্মিতা তৈরি হয়। এটি আমাদের একসাথে কাজ করা, ভাগাভাগি করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার শিক্ষা দেয়।
৪. শিল্প ও হস্তশিল্পের প্রচার : গ্রামীণ মেলায় হস্তশিল্পের প্রচার আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এবং শিল্পীদের সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়তা করে।
দুপচাঁচিয়া, বগুড়া
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা