০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ২ শাবান ১৪৪৬
`

রাতুলের সরল অঙ্ক

রাতুলের সরল অঙ্ক -


রাতুল দশম শ্রেণির ছাত্র, তার পছন্দের তালিকায় পড়াশোনা বলে কিছু নেই। সে তার জীবনের মূলমন্ত্র তৈরি করেছে- ‘যতদূর সম্ভব পড়াশোনাকে এড়িয়ে চলো’। কিন্তু তার মা-বাবা এমনটি ভাবতে নারাজ। তাই রাতুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, তাকে একজন কড়া টিউটরের হাতে সোপর্দ করতে হবে।
তারপর একদিন সন্ধ্যায় রাতুলের ঘরে প্রবেশ করলেন রমিজ স্যার, এলাকার বিখ্যাত ‘শাসক’ শিক্ষক। রমিজ স্যারের নাম শুনলেই পাড়া-প্রতিবেশীর সন্তানরা আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। স্যারের নিয়মের মধ্যেই চলে শাসনের রাজত্ব। টিউশন মানে শুধুই পড়া আর পড়া। চালাকি, ফাঁকি, মজা- এগুলোর কোনো সুযোগ স্যারের কাছে নেই।
রাতুলের মাথায় চিন্তা, ‘যদি কোনোমতে স্যারকে দমানো যায়, তাহলে আমাকে হয়তো এত কষ্ট করতে হবে না!’ তবে সেটি যে সহজ কাজ নয়, সেটিও সে বেশ বুঝে গিয়েছিল।
রাতুলের টিউশনের প্রথম দিনেই সে বুঝল, রমিজ স্যারের সামনে চালাকি করার চেষ্টা যেন আগুন নিয়ে খেলার সমান। স্যার প্রথমেই তাকে অঙ্কের একটি সমাধান করতে দিলেন। রাতুল চেষ্টা করল, তবে বুঝতে পারল না। সে আস্তে করে বলল, ‘স্যার, ক্যালকুলেটরে করতে পারি?’
স্যার একেবারে বিরক্ত মুখে বললেন, ‘ক্যালকুলেটর তুমি খুঁজছ? এটি তো সরল অঙ্ক! তোমার পড়ার চেয়ে ক্যালকুলেটর নিয়ে আগ্রহ বেশি দেখছি।’
রাতুল ভয়ে কাঁপতে লাগল কিন্তু তারপরেও সে মনে মনে ভাবল, ‘আচ্ছা, দেখা যাক, আরো ক’দিন চেষ্টা করলেই তো কিছু একটা বের করতে পারব!’
দিন যায়, রাতুলের জন্য প্রতিদিনই এক নতুন নিয়ম তৈরি হয়। রমিজ স্যার পড়ানোর সময় তার পছন্দের নিয়ম মেনে চলতেন- ‘বাঁকা কথা, অলসতা বা ভুল কোনোটাই সহ্য করা হবে না।’

প্রতিদিন ক্লাস শুরু হতেই স্যার প্রথমে তার হাত থেকে খাতা নিয়ে টুকটাক দেখা শুরু করেন। এই দেখে রাতুলও একদিন ফাঁকি দিয়ে কয়েকটি অঙ্ক অর্ধেক করে রাখল।
সেদিন স্যার একটু মন দিয়ে অঙ্কগুলো দেখে বললেন, ‘রাতুল, তোমার অঙ্কগুলো তো বেশ ভালোই হচ্ছিল। মাঝপথে কী হলো?’
রাতুল মিথ্যা বলে ফাঁকি দিতে চাইল, ‘স্যার, আসলে রাতের বেলা আমার মাথা একটু ঘুরছিল, তাই শেষ করতে পারিনি।’
স্যার একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘মাথা ঘোরে না, অঙ্কের নাম শুনলে তোমার মন ঘোরে। আজ সব অঙ্ক নিজেই আবার করবে।’
সেদিন রাতুল বুঝল, স্যারের সাথে ফাঁকি দিয়ে চালাকি করতে গেলে তাকে প্রতিদিনই নতুন ফাঁদ তৈরি করতে হবে। তবুও সে হাল ছাড়ল না।
একদিন রাতুল ভাবল, ‘যদি কোনোমতে স্যারকে আরো সময় ধরে গল্পে ব্যস্ত রাখা যায়, তবে হয়তো কিছুটা সময় পড়াশোনা থেকে মুক্তি পাব।’
সেদিন স্যার এলেই রাতুল গল্প শুরু করল, ‘স্যার, শুনেছেন আমাদের স্কুলে কী কাণ্ড হয়েছে?’

স্যার একটু আগ্রহী হয়ে বললেন, ‘কী কাণ্ড?’
রাতুল শিহরিত হয়ে বলতে লাগল, ‘স্যার, আমাদের স্কুলের ক্যান্টিনের ম্যানেজার নাকি ভূত দেখেছেন। তিনি রাতে থাকতে পারছেন না।’
স্যার কিছুটা আগ্রহী হয়ে বললেন, ‘বাহ, তাই নাকি? তবে ভূত নিয়ে অত ভেবে লাভ নেই। এর চেয়ে পড়া মুখস্থ করো।’
রাতুলের মনের আশা শেষ হয়ে গেল, তার চালাকি এবারো ব্যর্থ। স্যার অল্প কথায়ই গল্প শেষ করে আবার অঙ্কের খাতায় ফিরিয়ে দিলেন।
রাতুলের মনে হলো, স্যারকে গল্পে ফাঁসানো সহজ নয়, তবে যদি স্যারকে হালকা মনোরঞ্জনের দিকে আনা যায়, তাহলে কাজ হতে পারে। তাই একদিন সে ক্লাসে এসে বলল, ‘স্যার, আজকের অঙ্কটা একটু পরে করি? আগে একটি মজার গল্প শোনাই?’
স্যার বললেন, ‘তোমার মজার গল্প শোনার চেয়ে অঙ্ক শিখতে পারাটা তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ঠিক আছে, এক মিনিট শুনি।’
রাতুল শুরু করল, ‘স্যার, এক গ্রামে এক বোকা মানুষ ছিল। সে বাড়ির দরজায় তালা দেয় না কিন্তু সবসময় বেল বাজায়। কারণ কেউ ঢুকলে সে শুনতে পাবে!’
রমিজ স্যার একটু হাসলেন, তবে সাথে সাথেই গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘তোমার গল্প ভালো, কিন্তু এখন অঙ্ক করো। তোমার মতো বোকা না হতে চাইলে পড়াশোনা করো।’
রাতুলের গল্পও কাজে এলো না। সে এবার সত্যিই হতাশ হয়ে পড়ল।
একদিন রাতুল একটি চালাকির ফন্দি এঁটে টিউশনে এলো। সে ক্যালকুলেটর হাতে নিয়ে হাজির হলো এবং স্যারকে বলল, ‘স্যার, আমার ক্যালকুলেটর ছাড়া অঙ্ক হয় না। এই ক্যালকুলেটরে আমি সব সমাধান করতে পারি।’

স্যার বললেন, ‘আজ তাহলে ক্যালকুলেটরের ওপর তোমার নির্ভরতা পরীক্ষা করব।’
স্যার রাতুলকে এমন কিছু অঙ্ক দিলেন, যা ক্যালকুলেটর দিয়ে করাও বেশ কঠিন। রাতুল প্রথম অঙ্ক করতে গিয়েই কেঁদে ফেলল, কারণ সমাধান বের করতে গেলে স্যার ঠিকই বলে দেন, ‘ক্যালকুলেটর দিয়ে সব হয় না, বুঝলে? মাথা লাগাও।’
দিন যায়, রাতুল বুঝল, চালাকি করে রমিজ স্যারকে হারানো সম্ভব না। স্যার শুধু কঠোর নন, তিনিই একজন প্রকৃত শিক্ষক, যিনি ছাত্রকে শুধু পড়াশোনায় নয়, শৃঙ্খলায়ও শেখাতে চান।
শেষের দিকে রাতুলের মন সত্যিই পড়াশোনার দিকে একটু একটু করে ফিরল। সে বুঝল, স্যার যা যা বলেছেন, সবই আসলে তার মঙ্গলচিন্তায়। সেদিন রাতে, প্রথমবারের মতো সে তার সব অঙ্ক শেষ করে স্যারের সামনে হাজির হলো। স্যার খুশি হয়ে বললেন, ‘তুমি এবার সত্যিই কিছু শিখলে, রাতুল। এবার তোমার কোনো ভয় নেই।’
রাতুলও মনে মনে ঠিক করল, এবার সে চালাকি না করে সত্যিকারের শিক্ষায় মনোযোগী হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
বর সাজিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে স্কুল কর্মচারীর রাজকীয় বিদায় কুমিল্লায় দর্শন পরিবারের দ্বিতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৭৯ জনের নামে হত্যা মামলা, গ্রেফতার ৩ জুলাই বিপ্লব সাংবাদিকদের মূল্যায়নের সুযোগ করে দিয়েছে : মাহমুদুর রহমান জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে পৌনে ২৭ হাজার কোটি টাকা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি : প্রধান উপদেষ্টা তাবলীগের বিরোধে প্রভাব পড়েনি বিশ্ব ইজতেমায় নিবন্ধন পেল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, প্রতীক ফুলকপি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে যে দুই দলকে দেখছেন পন্টিং-শাস্ত্রী জিপিএইচ ইস্পাতের আয়োজনে গ্র্যান্ড ইভেন্ট ‘জিপিএইচ মহারাজ দরবার’ অনুষ্ঠিত বই ছাপার আগে সেন্সরশিপ করার প্রশ্নই আসে না : সংস্কৃতি উপদেষ্টা

সকল