০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ২ শাবান ১৪৪৬
`

মিতালি

মিতালি -


লুবাবার স্কুলে শীতকালীন ছুটি চলছে। ছুটিতে লুবাবা গত ছয় দিন হলো মায়ের সাথে নানা বাড়িতে আছে। প্রতি বছরই শীতের ছুটিতে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসে। বলতে গেলে লুবাবা সারা বছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকে। শীতের ছুটির এই সময়টুকু নানাবাড়িতে মামাতো খালাতো ভাইবোনদের সাথে ওর খুবই আনন্দে কাটে। লুবাবা এ বছর চতুর্থ শ্রেণি শেষ করেছে। বার্ষিক পরীক্ষা দেয়ার পর থেকে লুবাবাদের শীতকালীন ছুটি শুরু হয়েছে। ছুটি শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরই অন্য বছরের মতো এবারো নানাবাড়ি চলে এসেছে। তবে এ বছর অনেকটাই ব্যতিক্রম। মামাতো খালাতো ভাইবোনেরা সবাই আছে। সবাই আনন্দেই আছে। শুধু লুবাবা অন্য বছরের মতো আনন্দে সময় কাটাতে পারছে না। কারণ হলো, লুবাবা বাড়িতে রেখে এসেছে ওর বন্ধুদের। বন্ধুদের কথা লুবাবার খুব মনে পড়ছে। বন্ধুদের সাথে যে দেখা নেই বেশ কিছু দিন। ওর এই বন্ধুরা হলো একটি শালিক পাখি, তিনটি বিড়াল ছানাসহ মা বিড়াল ও একটি কুকুর!
একদিন সকালবেলা লুবাবা ওর পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল। সেদিন ওর রুমেই সকালের খাবার খেয়েছিল। কিন্তু প্লেটের সব ভাত খেয়ে শেষ করতে না পারায় ভাতসহ প্লেটটি জানালার পাশেই রেখে দিয়েছিল। পড়তে পড়তে জানালার পাশে পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ পেলো। সেদিকে ঘুরে তাকাতেই সে দেখতে পেলো- একটি শালিক পাখি জানালার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে রুমে চলে এসেছে। এসে ওর রেখে দেয়া ভাতগুলো খাচ্ছে। লুবাবার দিকে মাঝে মধ্যে তাকাচ্ছে। লুবাবার মনে হলো পাখিটি একটু ভয় ভয় নিয়ে ভাতগুলো খাচ্ছে। লুবাবা শালিকের খাওয়া দেখে মুগ্ধ হলো। পাখিটিকে তাড়াল না। ভাবল পাখিটি আজ ওর অতিথি। একটু পর পাখিটি চলে গেল।

পরদিন সকালবেলা পড়ার সময় জানালার পাশে আবার পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পেলো কিন্তু তেমন মনোযোগ দিলো না। এরপর জানালার পাশে আবার ডানা ঝাপটানোর শব্দে ঘুরে তাকাতেই একটি শালিক পাখি দেখতে পেলো। তখন ওর মনে হলো গতকালও এরকমই একটি শালিক পাখি এসেছিল। এটি কি সেই শালিক পাখি? লুবাবার মনে হলো এই পাখিটি গতকালকের সেই পাখিটিই। হঠাৎ ওর মনে হলো গতকাল পাখিটি ভাত খেয়েছিল। আজো কি খেতে চাইছে? ওগিয়ে কিছু ভাত একটি বাটিতে নিয়ে এসে জানালার পাশে রাখল। পাখিটি তা তখন জানালার বাইরে গাছের ডালে বসে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। লুবাবার জানালার কাছ থেকে সরে আসার একটু পরেই পাখিটি গ্রিলের ভেতর দিয়ে রুমে চলে এলো। বাটিতে রাখা ভাত খাওয়া শুরু করল। আজ লুবাবা বিস্মিত হয়ে গেল। পাখিটি খাওয়ার জন্যই ঠিক ঠিক চলে এসেছে! ও মুগ্ধ হয়ে পাখির খাওয়া দেখছিল।
এরপর তৃতীয় দিন। তারপর থেকে নিয়মিত চলতে থাকল। প্রায় একই সময়ে পাখিটি প্রতিদিন চলে আসে। নির্ভয়ে খাবার খায়। এভাবেই শালিক পাখিটির সাথে লুবাবার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সে খেয়াল করে পাখিটি খাবার মুখে নিয়ে মাঝে মধ্যেই উড়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে আবার ফিরে আসে। এরকম করার কারণ জানতে চাইলে লুবাবার মা ওকে জানায়, মা পাখিরা তাদের ছানাদের জন্য বাসায় খাবার নিয়ে যায় এবং সেখানে থাকা পাখির ছোট ছানা যারা নিজেরা খাবার সংগ্রহ করতে পারে না তাদের খাওয়ায়।

কয়েক দিনের মধ্যেই লুবাবার বোধোদয় হয়, আমাদের মতোই পশু-পাখিদেরও ক্ষুধা লাগে। তাই তারা খাবারের জন্য নানা জায়গায় ছুটে বেড়ায়। তাহলে বাড়ির আশপাশের আরো কিছু পশু-পাখির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার কথা মাথায় আসে। সে দেখে একটি বিড়াল প্রায়ই ওদের বাড়িতে আসে। খাবার দিলে খায়। ওরা খাওয়ার সময় এলে খাবার দেয়। অন্য সময় কেউ খাবার দেয় না। কয়েক দিন আগে বিড়ালটির সাথে তিনটি বাচ্চা দেখেছে। ওর মনে হলো তাহলে তো মা বিড়ালটিকে খাবারের জন্য ছুটে বেড়াতে হয়। ওর মনে প্রশ্ন জাগে, ওরা নিয়মিত খাবার পায় তো? কিন্তু ওদেরও তো ক্ষুধা লাগে! ও ভাবে বিড়ালগুলোকেও খাবার দেবে। লুবাবা ওর মায়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে মা খুব আগ্রহ নিয়ে রাজি হয়ে যায়। এরপর থেকে বিড়ালগুলোর জন্যও খাবার রেখে দেয়। যখন আসে, খাবার দেয়। মা বিড়ালটি বাচ্চাসহ খাবার খায়। বেশির ভাগ সময় লুবাবাই বিড়ালগুলোকে খাওয়ায়। ওর খুব ভালো লাগে। এভাবেই বিড়ালগুলোর সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
লুবাবা বাড়ির আশপাশে একটি কুকুরকে ঘুরঘুর করতে দেখেছে। কয়েক দিন বাইরে খেয়াল রাখে কুকুরটিকে দেখার জন্য। একদিন কুকুরটিকে দেখে লুবাবা বাড়ির বাইরে কিছু খাবার খেতে দেয়। কুকুরটি লুবাবার দেয়া খাবার খুব আগ্রহ নিয়ে খায়। এরপর আরেক দিন দেয়। তারপর থেকে কুকুরটি বাড়ির বাইরে এসে প্রতিদিন অপেক্ষা করে। লুবাবা নিয়মিত খাবার দেয়। এভাবে কুকুরটির সাথেও লুবাবার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। লুবাবার বোধোদয় হয়েছে এই পশু-পাখিরা ও আমাদের চারপাশে থাকে। পশু-পাখিদেরও ভালোভাবে বেঁচে থাকা দরকার। তাই ওদের জন্যেও ভাবতে হবে। ওদের খেয়াল রাখতে হবে। পশু-পাখিদেরও ভালোবাসতে হবে।
এরপর থেকে ওদেরকে নিয়েই লুবাবার দিনগুলো সুন্দরভাবে কাটতে থাকে। লুবাবার বাবা-মা ওকে এই কাজে আগ্রহ নিয়ে সহযোগিতা করে। তারা পশু-পাখির প্রতি লুবাবার ভালোবাসা দেখে খুবই খুশি।

লুবাবার বাবা ওর অনুপস্থিতে ওর পশু-পাখি বন্ধুদের নিয়মিত খাবার দিচ্ছেন। তারপরও লুবাবা স্বস্তি পাচ্ছে না। মন পড়ে আছে বাড়িতে। বার বার মনে হচ্ছে, ওরা ভালো আছে তো?
লুবাবাদের আরো কয়েক দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু তার আগেই লুবাবার মন ভার দেখে লুবাবার মা লুবাবাকে নিয়ে আগেই বাড়ির দিকে রওনা হলো। এবার লুবাবার মন ভালো হওয়া শুরু হলো। ওর মনে হচ্ছে কতদিন পরে ওর বন্ধুদের সাথে দেখা হবে! অথচ প্রতি বছর নানা বাড়ি থেকেই চলে যেতেই মন খারাপ হতো।
বাড়িতে পৌঁছেই বন্ধুদের খুজতে শুরু করল। ওর রুমে ঢুকেই জানালা খুলে দাঁড়াল। পাখিটিকে খুঁজল কিন্তু পেলো না। বাড়ির পেছনের দিকে বিড়ালদের দেখা পেলো। লুবাবাকে দেখেই ওরা লাফিয়ে কাছে চলে এলো। লুবাবার গা ঘেঁষে মিউ মিউ করতে লাগল। ওদের কিছু খেতে দিলো। বাড়ির বাইরের দিকে একটু খুঁজতেই কুকুরটিকে দেখতে পেলো। কুকুরটিও লুবাবাকে দেখে কাছে চলে এসে পাশেই বসে পড়ল। কুকুরকেও খেতে দিলো। বিড়ালগুলোও সাথে লেগে আছে। ওদের পেয়ে লুবাবার ভালো লাগছে। ওদেরকে নানা কথা বলছিল। প্রশ্ন করছিল। ওরাও যেন লুবাবাকে জবাব দিতে চাচ্ছিল।
কিন্তু একটু পরপর পাখি বন্ধুটির কথা মনে হচ্ছিল। মাঝখানে আরেকবার গিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু শালিকটির দেখা নেই! ও ভাবল পাখিটি কি ওকে ভুলে গেছে? ও কি এখানে ঠিকমতো খাবার পায়নি? অন্য কোথাও চলে গেছে? আর আসবে না? বিকেলে কিছুটা দুশ্চিন্তা নিয়ে লুবাবা জানালার ধারে বসে আছে। হঠাৎ কিচির মিচির ডাকে জানালার বাইরে তাকাল। বাইরে দেখল সেই শালিক পাখিটিকে। পাখিটিও লুবাবাকে দেখতে পেয়েছে। ডানা ঝাপটাচ্ছে আর কিচির মিচির ডেকেই যাচ্ছে। এবার যেন লুবাবার অপেক্ষা শেষ হলো। ওর বন্ধু পাখিটি চলে এসেছে। ও দৌড়ে পাখির জন্য খাবার এনে খেতে দিলো। পাখিটিও খেতে লাগল। বন্ধুকে অবশেষে পেয়ে খুশিতে জেবিনের মন খুশিতে ভরে গেল। ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মশালা অনুষ্ঠিত পাটগ্রামে আ’লীগের লিফলেট বিতরণ করায় কলেজশিক্ষককে প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নির্বাচন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে স্বৈরাচার আবারো চেপে বসবে : তারেক রহমান বর সাজিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে স্কুল কর্মচারীর রাজকীয় বিদায় কুমিল্লায় দর্শন পরিবারের দ্বিতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৭৯ জনের নামে হত্যা মামলা, গ্রেফতার ৩ জুলাই বিপ্লব সাংবাদিকদের মূল্যায়নের সুযোগ করে দিয়েছে : মাহমুদুর রহমান জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে পৌনে ২৭ হাজার কোটি টাকা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি : প্রধান উপদেষ্টা তাবলীগের বিরোধে প্রভাব পড়েনি বিশ্ব ইজতেমায় নিবন্ধন পেল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, প্রতীক ফুলকপি

সকল