০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ২ শাবান ১৪৪৬
`

কুয়াশার রাজ্য

-


শীতকাল এলেই কাজলপুর গ্রামের দৃশ্য যেন বদলে যায়। গ্রামের প্রতিটি ভোর কুয়াশার চাদরে ঢাকা। গাছের ডাল, পুকুরের পানি, আর পথের ধারে পড়ে থাকা শুকনো পাতা- সব কিছুতেই জমে থাকে কুয়াশার ছোঁয়া। এই শীতের সকালগুলোতে আট বছরের শিহাবের মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ সকালে মাঠে খেলার অনুমতি নেই। মা তাকে ঠাণ্ডার ভয়ে চাদরের নিচে লুকিয়ে রাখেন। তবে শিহাব খুব বেশি দুঃখিত হয় না। কারণ তার দাদু থাকেন। দাদু শুধু একজন মানুষ নন, তিনি যেন গল্পের এক জীবন্ত বই। রাতে লণ্ঠনের আলোয় বসে যখন দাদু গল্প শুরু করেন, তখন মনে হয়, ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে শিহাব কোনো রহস্যময় জগতে চলে গেছে। একদিন রাতের খাবারের পর দাদু বললেন, ‘শিহাব, শীতের দিনে কুয়াশার রাজ্যে একবার গেলে বুঝবি, কেমন লাগে। শুনেছি, সেই রাজ্যে পরীরা আসে। তারা নাকি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেলা করে।’ শিহাবের চোখে বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠল। ‘পরীরা? সত্যি দাদু?’ দাদু গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লেন। ‘হুম, তবে সেই রাজ্যে যেতে সাহস লাগে। কারণ পরীরা শুধু সাহসী ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলে। তুই যদি সাহস করে সেখানে যেতে পারিস, তাহলে হয়তো পরীরা তোকে মণিমুক্তা দেবে।’ শিহাব সারা রাত ঘুমাতে পারল না। তার মাথায় একটিই প্রশ্ন- কুয়াশার রাজ্যে কীভাবে যাওয়া যায়? পরদিন ভোরবেলা, সবাই যখন গভীর ঘুমে, তখন শিহাব চাদর জড়িয়ে বাড়ির পেছনের ছোট্ট বাঁশবাগানের দিকে হাঁটা দিলো। চারদিক নীরব। শুধু দূর থেকে ভেসে আসছে কুয়াশায় ঢাকা নদীর শব্দ। বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলে মাঠে পৌঁছানো যায়। আর সেই মাঠ থেকেই শুরু হবে তার কুয়াশার রাজ্যের যাত্রা। মাঠে পৌঁছে শিহাব দেখল, কুয়াশায় সব কিছুই আবছা। মনে হচ্ছে, সে এক অজানা ভুবনে ঢুকে পড়েছে। হঠাৎ তার মনে হলো, দূরে কেউ কথা বলছে। সে আরো ভেতরের দিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎই সে একটি ছায়ামূর্তি দেখতে পেল। একটি বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে কেউ একজন। কুয়াশার কারণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। শিহাবের সাহসের জায়গা একদম শুকিয়ে গেল।

কিন্তু দাদুর কথা মনে করে সে এগিয়ে গেল। ‘তুমি কে?’ শিহাব সাহস করে জিজ্ঞেস করল। ছায়ামূর্তিটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করল। শিহাব দেখল, একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা গায়ের চাদর আর হাতে লাঠি। ‘তুমি এখানে কেন?’ লোকটি জানতে চাইল। ‘আমি কুয়াশার রাজ্যে এসেছি। পরীদের খুঁজতে’ শিহাব বলল। লোকটি হাসলেন। ‘পরীরা শুধু তাদের দেখা দেয়, যারা হৃদয়ের গভীরে ভালোবাসা আর সাহস রাখে। তুমি কি সেই সাহসী ছেলে?’ শিহাব দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ‘হ্যাঁ, আমি সাহসী। আমি পরীদের সাথে দেখা করতে চাই।’ লোকটি বললেন, ‘তাহলে চোখ বন্ধ করো। মন দিয়ে অনুভব করো চারপাশের কুয়াশাকে।’ শিহাব চোখ বন্ধ করল। সে অনুভব করল শীতল বাতাস, গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরের গন্ধ। হঠাৎই মনে হলো, বাতাসে কারো মিষ্টি হাসির শব্দ ভেসে আসছে। সে চোখ খুলে দেখল, চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়েছে। দূরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন সোনালি রঙের পোশাক পরা মেয়ে। তাদের চুল কুয়াশার মতো উড়ছে বাতাসে। পরীরা শিহাবকে দেখে হাসল। একজন পরী এসে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজ্যে এসেছ। তুমি কী চাও?’ শিহাব বলল, ‘আমি মণিমুক্তা চাই। আমি আমার দাদুকে দেখাতে চাই, আমি সাহসী।’ পরীটি হাসল। ‘সাহসের আসল উপহার হলো জ্ঞান। মণিমুক্তা নয়। তোমাকে এক উপহার দেবো, যা তোমার জীবন বদলে দেবে।’ পরী তার হাতে একটি ছোট্ট পুঁটলি দিয়ে বলল, ‘এই পুঁটলিতে আছে কুয়াশার জাদু। এটি নিয়ে যাও। তোমার দাদুকে দেখাবে আর নিজে জানবে, সত্যিকারের সাহস মানে শুধু ভয়কে জয় করা নয়; বরং নিজের ভেতরের আলোকে খুঁজে বের করা।’

শিহাব পুঁটলিটা হাতে নিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সে ধীরে ধীরে গাছের নিচে বসে থাকা লোকটির দিকে ফিরে তাকাল। লোকটি বলল, ‘তোমার সময় শেষ। বাড়ি ফিরে যাও।’ শিহাব বাড়ি ফিরে এলো। দাদু তখন উঠানে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন। শিহাব দৌড়ে তার কাছে গেল। ‘দাদু, আমি পরীদের রাজ্যে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে উপহার দিয়েছে।’ দাদু হাসলেন। ‘দেখি, কী দিয়েছে?’ শিহাব পুঁটলিটা খুলে দেখল, সেখানে ছোট্ট একটি কাগজ। তাতে লেখা, ‘সাহস শুধু ভয়কে জয় করা নয়। সাহস হলো নিজেকে ভালোবাসা আর অন্যকে সাহায্য করার শক্তি।’ দাদু শিহাবকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তুই সত্যিকারের সাহসী হয়ে গেছিস। এবার এই শীতের দিনে তোর চারপাশের মানুষদের সাহায্য করো। এটিই হবে পরীদের আসল উপহার।’ সেই দিন থেকে শিহাব শুধু নিজের জন্য নয়, গ্রামে শীতবস্ত্র বিতরণ করা, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাজ শুরু করল। আর প্রতিদিন মনে মনে কুয়াশার রাজ্যে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখতে থাকল।


আরো সংবাদ



premium cement
ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন : মুজিবুর রহমান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে চান্দিনায় চালকদের মানববন্ধন গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে একমত ট্রাম্প ও সিসি বান্দরবানে ট্রাক-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ আখাউড়ায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে যুবকের মৃত্যু ১২ কেজির এলপি গ্যাসের দাম বাড়ল ১৯ টাকা ভারত কেন পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারে উঠেপড়ে লেগেছে, প্রশ্ন ড. মাসুদের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি আরব যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল শারা এখনো আগের মতোই চাঁদাবাজি চলছে, বাজারে সিন্ডিকেটও আছে : সারজিস ত্যাগীদের নিয়ে গণমানুষের সংগঠন গড়ে তোলা হবে : আফরোজা খান রিতা জয়পুরহাটে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত

সকল