জিকুর লাল ঘুড়ি
- কবির কাঞ্চন
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দুপুরের খাবার খেয়ে খাটের ওপর কাত হয়ে শুয়ে আছে জিকু। একটু পরপর জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আবার শুয়ে পড়ে।
ওদিকে হাতের সব কাজ সেরে এইমাত্র খাটের ওপর হেলান দিয়ে বসলেন তার মা, মিনু বেগম। সারাদিন নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। ঘরের সব কাজ নিজে একাই সামলান। তার ওপর জিকু ও তার ছোট বোন রূপাকে চোখে চোখে রাখার দায়িত্বও যোগ হয়েছে।
ক’দিন আগে জিকুর বয়স ছয় বছর পার হলো। ও ক্লাস ওয়ানে পড়ে। পড়াশুনায় খুব মনোযোগী। কোন পড়া এক-দুইবার চোখ বুলাতেই তার মুখস্থ হয়ে যায়। ও পড়াশুনায় যেমন দুষ্টুমিতেও তেমন। সারাক্ষণ খেলাধুলা নিয়ে পড়ে থাকে। এ বয়সে তো খেলবেই। কিন্তু সমস্যা হলো সে রূপাকে সাথে নিয়ে খেলতে চায় না। এ নিয়ে মায়ের পাশাপাশি বাবাও তাকে বিভিন্ন সময়ে বুঝিয়েছেন। ‘রূপা তো তোমারই ছোটবোন। ওর একটু-আধটু দেখাশোনার দায়িত্ব তো তোমারও আছে।’
জিকুর একই কথা, রূপাকে নিয়ে সে খেলবে না।
রূপাকে নিয়ে খেলতে গেলে ও কিছুই বোঝে না। উল্টো খেলায় ডিস্টার্ব করে বসে। একটু থেকে একটু হলে ও ‘ভ্যা! ভ্যা!’ করে কান্না শুরু করে। তখন জিকুর প্রচণ্ড রাগ হয়। রূপাকে মারতে ইচ্ছে হয় তার। রূপার দিকে বড় বড় চোখে তাকায়। রূপা ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। হঠাৎ রূপার কান্নার আওয়াজ শুনে ভেতর থেকে মাকে তেড়ে আসতে দেখে এক দৌড়ে জিকু খেলা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
জিকুর বাবা, সেলিম রেজা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আয়-রোজগার সীমিত হলেও তিনি একজন সুখী মানুষ। নিজে হিসাব করে চলেন। স্ত্রীও তার মনের মতো হয়েছে। স্বামীর আয়-রোজগার নিয়ে কখনো হাহুতাশ করেন না। স্বামী বাইরে থেকে যা আনেন তা দিয়েই চালিয়ে নেন। জিকুর স্যাররাও ওর খুব প্রশংসা করেন।
তারপর বাসায় এলে রূপাও মায়ের মতো করে বাবার সেবায় ব্যস্ত হয়ে যায়। মিনু বেগম স্বামীর দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতে যেতেই তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে রূপা বলে ওঠে,
না, আম্মু, আমার আব্বুকে আমিই পানি দেবো।
মেয়ের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে সেলিম রেজা ডগডগ করে পানি পান করেন।
এরপর মায়াভরা চোখে রূপার অবুঝ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। মুহূর্তে তার মায়ের কথা মনে পড়ে। এভাবেই পরম মমতা দিয়ে মা তাকে কোলেপিঠে করে বড় করেছেন। শুধু চাকরির সুবাদে বাবা-মাকে ছেড়ে শহরের চার দেয়ালের মাঝে পড়ে আছেন।
শোয়া থেকে ওঠে জিকু দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাকে বলল,
মা, আমি এখন খেলতে যাই। এত তাড়াতাড়ি! মাত্র তিনটা বাজে। আগে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নে। আমি তোকে চারটার দিকে জাগিয়ে দেবো।
তোমাকে কষ্ট করতে হবে না, মা। রাফি আর শিহাব এসে আমাকে নিয়ে যাবে। ওদের সাথে আজ ছাদে আমিও ঘুড়ি উড়াব। কী মজা হবে, তাই না,মা?
ভালো কথা। কিন্তু বাইরে গেলেই তো ঝগড়া শুরু কর। একবারও ভাব না, ওরা তোমার চেয়ে চার-পাঁচ বছরের বড়।
আর ঝগড়া করবো না, মা।
ঠিক তো?
হ্যাঁ, মা।
মায়ের কথায় জিকু বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
রূপাও ঘুমাচ্ছে। এই ফাঁকে মিনু বেগম চার্জিং লাইন থেকে মোবাইলটা নিয়ে ফেবুতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
বিকেল সাড়ে ৪টা। শিহাবের গলার আওয়াজে জিকুর ঘুম ভেঙে যায়। সে এক লাফে বিছানা থেকে ওঠে কোনোমতে গেঞ্জিটা গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়।
মিনু বেগম জোরে জোরে বললেন,
জিকু, তাড়াতাড়ি ফিরবি, বাবা।
আচ্ছা, মা।
পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদ। একে একে বন্ধুরা সবাই ছাদে চলে এসেছে। সবার হাতে নাটাইসহ ঘুড়ি। রাফির লাল, শিহাবের হলুদ, মিমির বেগুনি, সাইফের সাদা আর রোহানের নীল রঙের ঘুড়ি। শুধু জিকুর হাতে কোন ঘুড়ি নেই।
লাল রঙের ঘুড়ি জিকুর খুব পছন্দ। বাবার কাছে গত কয়েক দিন ধরে লাল ঘুড়ি বানিয়ে দিতে বায়না ধরেছে সে। বাবা তাকে কথাও দিয়েছেন। সামনের শুক্রবারে অফিস ছুটির সময় বানিয়ে দেবেন। সে আশায় আজো পথ চেয়ে আছে জিকু।
রাফির লাল ঘুড়ি সবার ঘুড়ির শীর্ষে উড়ছে। জিকু রাফিকে বলল,
রাফি ভাইয়া, তোমার নাটাইটা আমায় দাও। আমি একটু উড়াই।
রাফি জিকুর দিকে বড় বড় চোখ করে বলল,
না, তোকে দেবো না। সামান্য একটা ঘুড়ি কিনতে পারিস না। ব্যাটা, ফকির কোথাকার! ঘুড়ি নেই আবার ঘুড়ি উড়ানোর শখ! তুই যা ঘরে গিয়ে বসে থাক।
রাফির কথায় জিকু মন খারাপ করে বলল,
আব্বু বলেছেন, সামনের শুক্রবারে বানিয়ে দেবেন। দাও না, ভাই, একটু উড়িয়ে আবার তোমাকে দিয়ে দেবো।
রাফি উত্তেজিত হয়ে বলল,
তোকে না বলেছি, দেবো না। এত কথা বলিস কেন?
জিকু মন খারাপ করে ছাদের এককোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে সেলিম রেজা আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছেন। সাথে করে জিকুর জন্য দোকান থেকে একটি লাল ঘুড়ি কিনে এনেছেন।
জিকুকে না পেয়ে মিনু বেগমকে বললেন,
জিকু কোথায়?
ছাদে সবার সাথে ঘুড়ি উড়াচ্ছে।
আচ্ছা, আমি আসছি।
এই বলে ছাদের দিকে এগিয়ে আসেন সেলিম রেজা।
জিকুকে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে এসে বললেন,
কী ব্যাপার, আব্বু! এভাবে মনমরা হয়ে আছো কেন?
আমার যে ঘুড়ি নেই, বাবা।
সেলিম রেজা জিকুর হাতে লাল ঘুড়িটা দিয়ে বললেন,
এই নাও তোমার লাল ঘুড়ি।
বাবার হাত থেকে লাল ঘুড়িটা নিয়ে জিকুর সে কী আনন্দ! মুহূর্তে জিকুর মন ভালো হয়ে যায়। সে নাটাই শক্ত করে ধরে ঘুড়ি উড়াতে শুরু করে। গভীর মনোযোগ দিয়ে সাবধানে ঘুড়ি উড়াচ্ছে। পুরো আকাশ লাল, হলুদ, বেগুনি, সাদা, নীল রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। পতপত করে আকাশের বুকে উড়তে থাকে জিকুর লাল ঘুড়ি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা