লাল জেগেট
- জুবায়ের মাহদি
- ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বেশ কিছু দিন ধরে মাহিন ইশকুলে আসে না। ওর অসুখ বিসুক হলো কি না আল্লাহ ভালো জানেন! হয়তো জটিল কোনো সমস্যায় পড়েছে, তাই ইশকুলে আসতে পারছে না। ইশকুলে আসতে আসতে রাস্তায় এসব ভাবছিল ফারিস। মাহিন আর ফারিসের মাঝে বন্ধুত্ব সূলভ একটা সম্পর্ক। দেখতেও তারা যমজ ভাইয়ের মতো। ইশকুলে তাদেরকে সবাই যমজ ভাই হিসেবে চিনে। ক্লাসে তারা পাশাপাশি বসে। ক্যান্টিনে কিছু খেতে গেলেও উভয় একসাথে যায়। চেহারা এবং উচ্চতায়ও তারা এক ও অভিন্ন।
ফারিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে করেই হোক আজ ইশকুল ছুটির পর মাহিনের বাড়িতে যাবে। চতুর্থ ক্লাস রাকিব স্যারের। শুনেছি রাকিব স্যারের বাড়ি থেকে একটু খানিক দূরে নাকি মাহিনদের বাড়ি।
সাড়ে ১২টায় বিরতি ঘণ্টা পড়ল। ফারিস তাড়াহুড়া করে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে রাকিব স্যারকে খুঁজতে লাগল। এক পর্যায়ে সে দেখল সজল স্যার ও রাকিব স্যার করিডোরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। ফারিস তাদের সামনে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে নিম্ন স্বরে সালাম দিলো।
রাকিব স্যার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন কি অবস্থা ফারিস তোমার?
জ্বি স্যার, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আপনারা কেমন আছেন স্যার?
এই তো আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ বেশ ভালো রাখছেন।
স্যার!
মাহিনের অবস্থা সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন?
সে তো বেশ কয়দিন যাবত ইশকুলে আসতেছে না। ফারিস তুমি একটা ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছ। ক্লাসে তোমাদের বলতে মনে থাকে না। এক্সিডেন্ট করে মাহিনের ডান পা ভেঙে গেছে। কুয়াশা ভেজা সকালে ইশকুলে আসতে পেছন থেকে বড় একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে তাকে পাশের নর্দমায় ফেলে দেয়। অচেতন অবস্থায় তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আচ্ছা তাহলে তোমরা একটা কাজ কর, সবার কাছ থেকে অর্থকড়ি তুলে বড়সড় একটা এমাউন্ট জমা কর। এই নাও আমি দিলাম ৫০০ টাকা। সজল স্যার আমতা আমতা করে বললেন আমার কাছ থেকে কালকে নিও ফারিস। সবাই মিলে একদিন তার বাড়িতে আমরা যাবো। তার বাবা একজন খেটে-খাওয়া দিনমজুর মানুষ। কিছু অর্থকড়ি হাতে তুলে দিলে তিনি ভীষণ খুশি হবেন।
স্যারের মুখ থেকে এই অযাচিত খবর শুনে ফারিসের যেন আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ল। মুহূর্তেই তার মন খারাপ হয়ে গেল। ইশকুল ছুটির পর ফারিস মাহিনের বাড়ির পথ ধরল। অনেক খেঁাজাখুঁজি করে বিকেলে মাহিনের বাড়িতে পেঁৗছল। মাহিন ফারিসকে আচমকা দেখে হতচকিত হয়ে যায়। ফারিস মাহিনের পাশে গিয়ে বসে। তার চোখ দুটো ছলছল করছে। কোনো কথা বলছে না ফারিস। মনে মনে ভাবছে এই ঝুপড়ি ঘরে তারা দিন যাপন করে! নিশ্চয়ই বাঁশের বেড়া দিয়ে বেশুমার ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে ঢুকে। আর কম্বলটাও বেশ হালকা-পাতলা মনে হচ্ছে।
এতক্ষণে মাহিনের আম্মু বিস্কুট আর রঙ চা বানিয়ে নিয়ে এসে বললেন, বাবা ফারিস খাও!
আমার ছেলের জন্য দোয়া করিও, যাতে সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে।
জ্বি, আনটি। আল্লাহ সুস্থ করে দেবেন ইনশা আল্লাহ।
ফারিস তার পরনের লাল জেগেট মাহিনকে পরিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে আল্লাহ তোমায় তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলুক। লাল জেগেটটা গত মাসে ফারিসের আব্বু ওমান থেকে পাঠিয়েছেন। জেগেটটা ফারিসের অনেক শখের। তবুও সে ভীষণ খুশি অনুভব করছে মাহিনকে তা গিফট করে।
মাহিনের আম্মুও মাহিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফারিস উঠে দাঁড়াল। মিনমিন করে বলল বন্ধু তুমি টেনশন করো না। কয়েক দিন পর রাকিব স্যারসহ আবার তোমাকে দেখতে আসব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা