১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`

অতিথি পাখির আগমন

অতিথি পাখির আগমন -


শীতকাল মানেই বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এক অন্যরকম পরিবর্তন। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, হিমেল হাওয়া, আর পাতাঝরা গাছের পাশাপাশি এ সময় প্রকৃতি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অতিথি পাখির কলতানে। এই পাখি আসে হাজার হাজার মাইল দূরের সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত এবং ইউরোপের বিভিন্ন শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে। আমাদের দেশের উষ্ণ জলবায়ু, জলাভূমি আর খাদ্যসম্ভার তাদের জন্য এক নিরাপদ আশ্রয়। তারা শুধু শীতকালীন অতিথি নয়; বরং প্রকৃতির এক অনন্য অলঙ্কার।

অতিথি পাখির আগমন : অতিথি পাখির এই দীর্ঘ যাত্রা প্রকৃতির এক বিস্ময়কর অধ্যায়। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে তীব্র শীত ও বরফ জমে যাওয়ায় সেখানে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। শীতকালীন এই প্রতিকূল পরিবেশ থেকে রক্ষা পেতে তারা এক অদ্ভুত আত্মপ্রতিরক্ষার প্রক্রিয়া গ্রহণ করে পরিযান। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা আমাদের দেশে আসে, যেখানে ঠাণ্ডা কম এবং খাদ্যের প্রাচুর্য রয়েছে। তাদের এই ভ্রমণ কেবল একটি দৈহিক চাহিদার বিষয় নয়, এটি প্রকৃতির সাথে তাদের এক গভীর সংযোগের গল্প।

পাখির প্রজাতি এবং বৈচিত্র্য : বাংলাদেশে আসা অতিথি পাখির মধ্যে প্রধানত লালশির হাঁস, সরালি হাঁস, বালিহাঁস, পানকৌড়ি, চখাচখি, গাঙচিল প্রভৃতি প্রজাতি রয়েছে। এদের রঙ-বৈচিত্র্য, চলাফেরা এবং ডাক আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তারা জলাভূমি, বিল, হাওর এবং নদীর আশপাশে অবস্থান করে। দলবেঁধে এদের একসাথে উড়তে দেখা সত্যিই চমকপ্রদ। মনে হয়, যেন আকাশে তারা জীবন্ত নকশা অঁাকছে।

তাদের প্রিয় আবাসস্থল : বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাভূমি, হাওর এবং নদীর ধারের এলাকাগুলো অতিথি পাখির প্রধান আবাসস্থল। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, সিলেটের হাইল হাওর, ময়মনসিংহের হাওর অঞ্চল, চট্টগ্রামের হালদা নদী এবং সুন্দরবনের জলাভূমি তাদের জন্য স্বর্গরাজ্য। এই স্থানগুলোতে তাদের খাবার পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদ সহজলভ্য। শীতের সকালে বা বিকেলে এসব জায়গায় গেলে দেখা যায়, পাখিরা পানির ওপর খেলা করছে বা পাখা ঝাপটাচ্ছে।
অতিথি পাখির ভূমিকা : অতিথি পাখি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় না, তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলাভূমির পোকামাকড় খেয়ে তারা পরিবেশকে পরিশুদ্ধ রাখে। তাদের উপস্থিতি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের উন্নতিতে সহায়ক। এ ছাড়া তাদের আগমনের ফলে পর্যটকরা এসব জায়গায় ভিড় জমায়, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অতিথি পাখির আগমনের গল্প যেমন আনন্দের, তেমনি তাদের জন্য হুমকির গল্পটি করুণ। কিছু অসাধু শিকারি পাখি ধরার জন্য ফাঁদ পেতে রাখে। কেউ কেউ আবার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তাদের গোশত বিক্রি করে। এসব কাজ শুধু বেআইনি নয়, এটি পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া জলাভূমি ভরাট, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনও তাদের আবাসস্থলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাদের সংরক্ষণে করণীয় : অতিথি পাখির সুরক্ষার জন্য আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, পাখিশিকার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এ জন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে। জলাভূমিগুলো সংরক্ষণ করতে হবে এবং দূষণমুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়া অতিথি পাখির উপস্থিতি বাড়াতে এবং পর্যটনশিল্পকে উন্নত করতে তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।
ধামরাই, ঢাকা

 


আরো সংবাদ



premium cement
স্বৈরাচারের সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান রিপনের মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু বিক্ষোভের মাঝে মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ সিরিয়ার কোনো অংশ দখলের ইচ্ছা নেই তুরস্কের : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি চীনের জন্য সতর্কতা : মেলোনি সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর পাকিস্তানের গুরুত্বারোপ সহ-সমন্বয়ক রাফির নামে বিকাশে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যটি ভুয়া ইয়েমেনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম নয় ইসরাইল : হাউছি জামায়াতের সাথে বিএনপির দূরত্বের কিছু নেই : নজরুল ইসলাম খান রাজধানী বদলাচ্ছে ইরান পুতিনের সাথে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে : ট্রাম্প

সকল