০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`

রিফাতের সমাজসেবা

-


বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। আপাতত ১০-১৫ দিন আর স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে আর পড়াশোনার ঝামেলা নেই।
এর মধ্যে কনকনা শীত পড়া শুরু হয়ে গেছে। পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা ঠাণ্ডা বিদেশী বাতাস আর নিজেদের আবহাওয়া থেকে উৎপন্ন হওয়া দেশী কুয়াশার যৌথ কর্মকাণ্ডে এমন একটি কঠিন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে, বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা লেপের তলা থেকে বের হওয়াটাই যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবুও রিফাত তার সামাজিক কাজকর্ম থেকে হাত গুটিয়ে নেয়নি। সারা বছর সে পড়াশোনার পাশাপাশি ছুটির দিনগুলোতে কোনো না কোনো সমাজসেবামূলক কাজ করেই যাচ্ছে।
সিজন মোতাবেক যখন যেটা সামনে আসে সেটা নিয়ে সে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যেমন- কখনো গাছ লাগানো, কখনো বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করা, কখনো হাতের নখ কাটা, কখনো বাথরুম করার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া আবার কখনো নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি বিষয়ে মহল্লার শিশুদেরকে সচেতন করে বেড়ায় সে।
এখন সামনে এসেছে খেজুরের রস খাওয়ার সিজন। শীত পড়ার সাথে সাথেই অন্যান্য বছরের মতো এবারো গাছিদের খেজুরের গাছ কাটা আর রস বিক্রি করা শুরু হয়ে গেছে।

তাই খেজুরের রস খাওয়ার সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে এলাকার পোলাপানদের সতর্ক করার জন্য রিফাত কয়েক দিন আগেই আরো চারজনকে সাথে নিয়ে মোট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে রেখেছে।
স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, দৈনন্দিন পড়া শোনারও চাপ নেই এবং সেই সাথে হাড় কাঁপানো শীতও পড়েছে, মূলত এই তিন কারণে দেরিতে বিছানা ছাড়ল রিফাত। তারপর দাঁত ব্রাশ করে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা সেরে টিম মেম্বারদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কারণ, আজ তাদের এলাকায় বের হওয়ার কথা।
আধা ঘণ্টার মধ্যেই কমিটির সবাই এসে একত্র হলো।তারপর তারা একসাথে বেরিয়ে পড়ল কাজে।
প্রথম একটা বাড়িতে গিয়ে তারা চারটি শিশু পেয়ে গেল। এই চার শিশুকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে মিষ্টি রোদের মধ্যে মিটিং বসাল রিফাত।
চার শিশুর সাথে তাদের মা-বাবাও শ্রোতা হিসেবে যোগ দিলো। কাজেই জমজমাট একটি মিটিং শুরু হয়ে গেল।
রিফাত বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার প্যান্টের দুই পকেট ভরে কিছু বিদেশী চকলেট নিয়ে এসেছে। সেখান থেকে চার শিশুকে দু’টি দু’টি করে মোট আটটি চকলেট ধরিয়ে দিয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করল সে।
বলল, শুনো বন্ধুরা, আমরা এসেছি তোমাদের সাথে কিছু কথা বলার জন্য। তোমরা কি মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথা শুনবে?
শিশুরা চকলেট পেয়ে খুশি হয়ে বলল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই শুনব।

তাহলে শুনো।
আমাদের এলাকায় কোনো খেজুর গাছ নেই। অন্য এলাকা থেকে গাছিরা আমাদের এলাকায় কলসভর্তি খেজুরের রস বিক্রি করতে নিয়ে আসে। আর আমরা কিনে কিনে সেই রস খাই। খাই কিনা?
সবাই সমস্বরে বলল, হ্যাঁ খাই।
এই রসগুলো গাছিরা কীভাবে সংগ্রহ করে শুনো।
প্রথমে গাছিরা খেজুর গাছের আগায় উঠে পাতার কাছাকাছি কিছুটা অংশ ধারালো দা দিয়ে চেঁছে নেয়। তারপর সেই চাঁছা জায়গাটার নিচের দিকে একটা মাটির কলসি লটকিয়ে রাখে। গাছ থেকে সারারাত ফোঁটায় ফোঁটায় রস বের হয়ে কলসিতে জমা হয়। পরের দিন সকালে সেই রস গাছিরা বিক্রি করতে নিয়ে আসে।
গাছ থেকে রস বের হয়ে কলসিতে জমা হয় সেটা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের বলার উদ্দেশ্য হলো, গাছের মাথায় কলসি লটকানোর পর যখন রাত হয় তখন অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে বাদুড়েরা আসে সেই গাছের রস খেতে। বাদুড় খেজুর গাছের চাঁছা অংশ থেকে চেটে চেটে রস খায়। কখনো কখনো কলসির মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে দিয়েও রস খায়।

বাদুড় যখন গাছ চাটতে থাকে অথবা কলসিতে মুখ ঢুকিয়ে রস খায় তখন বাদুড়ের মুখের লালা রসের সাথে গিয়ে মিশে।
বাদুড় যে চেটে চেটে রস খায় ঘটনা কিন্তু শুধু তা না। কোনো গাছে যদি দুই তিনটি বাদুর একসাথে রস খেতে আসে তাহলে তারা পরস্পর মারামারি, কামড়াকামড়ি, খামচাখামচি করে। যখন তারা এরকম করে তখন তারা গাছের আগায় প্রস্রাব পায়খানাও করে ফেলে। এই প্রস্রাব পায়খানা রসের কলসিতেও গিয়ে পড়ে।
তাছাড়া আরো ঘটনা আছে। গাছিরা যে রস বিক্রি করতে নিয়ে আসে তার পুরোটাই কিন্তু খেজুরের রস নয়। পানির সাথে চিনি মিশিয়ে শরবতের মতো করে রসের সাথে মিশায় গাছিরা।
এখন কথা হলো, বাদুড় গাছ চেটে রস খাওয়ার সময় অথবা কলসিতে মুখ ঢুকানোর সময় তার মুখের যে লালা রসের সাথে মিশে সেই লালার মধ্যে থাকে নিপাহ ভাইরাস। এই নিপাহ ভাইরাস খেজুরের রসের মধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক রোগের বিস্তার ঘটায়। যার কোনো প্রপার চিকিৎসা নেই।
নিপাহ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে কেউ কেউ সুস্থ হয় আবার কেউ কেউ মারাও যায়। কাজেই খেজুরের রস খাওয়ার ব্যাপারে তোমরা সাবধান হবে। হবে কিনা বলো?

সবাই বলল, হ্যাঁ সাবধান হবো। এখন থেকে আমরা আর খেজুরের রস খাবোই না। খেজুরের রস খুব পচা।
আর শুনো, বাদুড়ে খাওয়া কোনো ফলও খাবে না। কোনো কোনো সময় বাদুড়ে আম,কলা, পেয়ারা, কামরাঙ্গা এসব ফল অর্ধেক খেয়ে আর বাকি অর্ধেক না খেয়ে চলে যায়। এরকম কোনো আংশিক খাওয়া ফল তোমরা কখনো ভুলেও ছুঁবে না।
সবাই বলল, আচ্ছা।
প্রথম বাড়ির পোলাপানদের নসিহত করা শেষ হলো।
রিফাত বলল, এসব বলার জন্যই আজ আমরা বের হয়েছি। তোমাদের বললাম। এখন অন্য বাড়িতে গিয়ে অন্যদেরও বলব। এখন তাহলে আমরা উঠি, কেমন?
সবাই বলল, আচ্ছা ঠিক আছে।
রিফাত এবং তার দল তখন এই বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement