০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`

সাদিয়ার বাজিমাত

সাদিয়ার বাজিমাত -


সেতু, পিংকি ও সাদিয়া। তিনজন বান্ধবী। এ বছর পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে ওরা। পরস্পরে খুবই মিল, গলায় গলায় ভাব যাকে বলে। একজনকে ছাড়া যেন অন্য জনের চলেই না! স্কুলে আসার পর সবসময় এক সাথেই থাকে, একই বেঞ্চে বসে। দুপুরে টিফিনের ছুটি হলে একসাথে বসেই টিফিন সম্পন্ন করে। একজন আরেকজনকে ছাড়া কিছুই খায় না। একদিন সেতু কোনো কারণে টিফিন নিয়ে আসতে পারেনি, তাই স্বভাবতই সে একটু দূরে দূরে থাকছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে এগিয়ে যায় পিংকি ও সাদিয়া। দু’জনে মিলে টেনে নিয়ে আসে সেতুকে। অতঃপর তাকে নিয়ে টিফিনের খাবার ভাগ করে খায়। এভাবেই সবসময় মিলেমিশে থাকে তারা।

স্কুলের হেডস্যার পিকুল সাহেব। একদিন তিনি ক্লাসে এসে পিংকি ও সেতুকে ক্লাস ক্যাপ্টেন বানিয়ে দিলেন। ফলে সবাই তাদের খুবই সমীহ করে চলতে লাগল। ক্লাস ক্যাপ্টেন হয়ে দু’জনই খুব স্বেচ্ছাচারী ও অহঙ্কারী হয়ে উঠল। সহপাঠীদের সাথে সুন্দর আচরণের বিপরীতে শুরু করলো অসদাচরণ। এই দু’জন ক্লাস ক্যাপটেনের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠল সবাই। তবুও ভয়ে কেউ বলতে পারত না কিছু । তাদের অহমিকা ও আত্মম্ভরিতা এতটাই বেড়ে গেল যে, তাদের বান্ধবী সাদিয়াকেও কাছে ঘেঁষতে দেয় না। পান থেকে চুন খসলেই মুখের ওপর যা তা বলে দেয়। সাদিয়াও কিছু বলে না, শুধু ধৈর্য ধরে এবং সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে।
সাদিয়ার মেধা তুলনামূলক কিছুটা দুর্বল। পড়া বেশি মনে থাকে না তার। তবে সাদিয়া এবার মনে মনে এক কঠিন শপথ নিল। এখন থেকে সে পড়ালেখায় কোনো প্রকার অলসতা করবে না। অনেক মনযোগী হবে, কঠোর পরিশ্রম করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে, পিংকি ও সেতুকে উচিত জবাব দিবে এবং তাক লাগিয়ে দিবে সবাইকে।

সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। আর মাত্র দু’মাস বাকি। তবুও সেতু ও পিংকির পড়াশোনার প্রতি নেই কোনো গুরুত্ব। মেধা একটু বেশি হওয়ায় ওরা ভেবেই নিয়েছে যে, ঠিকঠাক পড়াশোনা না করেও বরাবরের মতো ভালো ফলাফল করবে।
এদিকে সাদিয়া পড়ালেখায় আগের চেয়ে দ্বিগুণ মনোযোগী। দিবারাত্রি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, রাতদিন একাকার করে পড়ালেখা করছে। দেখতে দেখতে পরীক্ষাও চলে আসলো। আগামীকাল পরীক্ষা। সাদিয়া জানে পরীক্ষার আগে বেশি রাত জাগতে নেই। তাই সে রাত ১০টার আগেই ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন সকাল বেলা। চারিদিকে হিম শীতল বাতাস বইছে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে প্রকৃতি। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। সাদিয়া মা-বাবার কাছ থেকে দোয়া ও শুভকামনা নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রশ্নপত্রও হাতে চলে আসে। তাকিয়ে দেখে সব প্রশ্নই তার কমন। আনন্দের এক অনন্য শিহরণ বয়ে গেল সাদিয়ার মনে। পাশের কাউকেই বিষয়টি বুঝতে না দিয়ে ধীরে সুস্থে লেখা শুরু করল সে। সব প্রশ্নের খুব সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে উত্তর প্রদান করল। এভাবেই সাদিয়ার প্রতিটি পরীক্ষা খুব ভালোভাবে শেষ হয়।
রেজাল্ট প্রকাশ হতেই স্কুলজুড়ে সাদিয়াকে নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেল। সাদিয়ার বাজিমাতে সবাই বিস্মিত। সবার মুখে মুখে এখন শুধু সাদিয়ারই নাম। সেতু, পিংকিসহ সবাইকে পেছনে ফেলে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করে সাদিয়া। সার-ম্যাডামরা খুবই খুশি হয় সাদিয়ার প্রতি। ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাই বরণ করে নেয় সাদিয়াকে।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement