০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

স্মৃতির প্রতীক তাজমহল

-

মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলকে ভালোবেসে অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপত্যশৈলী হিসেবে তৈরি করেছেন ঐতিহাসিক স্মৃতির প্রতীক তাজমহল। সম্রাট শাহজাহান, যিনি মুঘল আমলের সমৃদ্ধশালী সম্রাট ছিলেন, তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ মহলের মৃত্যুতে যারপরনাই প্রচণ্ড শোকাহত হন।
একপর্যায়ে সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক তাজমহল নামক স্মৃতিময় সৌধটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে, যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে।
বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি হলো সম্রাট শাহজাহানের পরম প্রেমের নিদর্শন এই হৃদয় রাঙানো তাজমহল।
বর্তমানে ডিজিটাল যুগের আবির্ভাবে নিত্যনতুন প্রযুক্তির বদৌলতে মানুষের জীবনের গতি প্রকৃতি প্রতি মুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে। তার পরও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শৌখিন পর্যটকের পদচারণায় আজো মুখরিত হয় আলোচিত এই তাজমহল।
স্মৃতিকাতর মানুষের আবেগ-অনুভূতি অনেক সময় হারানো অতীত খুঁজে ফেরে। তাই তো সমাজে স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য গড়ে তোলা হয় বিভিন্ন মিনার, সৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভ।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শহীদ মিনার পুলিশ ভেঙে ফেলেছিল। এরই প্রতিবাদে কবি ও ভাষাসৈনিক আলাউদ্দিন আল আজাদের রচিত ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতাটি ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সঙ্কলনে ঠাঁই পেয়েছিল। কবিতাটির কয়েকটি পঙ্ক্তি এখানে তুলে ধরা হলো।
‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চার কোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য ।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক ! ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চার কোটি পরিবার।’
’৫২-এর ভাষা আন্দোলনে জীবন বিসর্জন দেয়া রফিক, শফিক ও বরকতসহ অন্যান্য শহীদের স্মৃতিকে অমøান করে রাখার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এরপর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের স্মৃতি রক্ষার্থে সাভারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত-আলোড়িত বিষয় হলো- ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। হাজারো তাজা প্রাণের রক্তের বিনিময়ে ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। হাজার হাজার শহীদ ও আহতদের পরিবারের সাথে দেশপ্রেমিক জনতার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এখনো বহমান।
আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে কেউ কেউ স্মৃতিস্তম্ভ-স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ভাবনা একটু অন্য রকম। কেননা যেকোনো ধরনের উদ্যোগ-আয়োজনে মুমিনের মূল লক্ষ্য হলো- আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি সন্ধান করা।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা স্মৃতিসৌধ সম্পর্কিত একটি চমৎকার কাহিনী বর্ণনা করেছেন।
(হে নবী,) তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও পাহাড়ের (উপত্যকার) অধিবাসীরা আমার নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি বিস্ময়কর নিদর্শন ছিল?
(ঘটনাটি এমন হয়েছিল,) কিছু যুবক যখন গুহায় আশ্রয় নিলো, অতঃপর তারা (আল্লাহর দরবারে এই বলে) দোয়া করল, ‘হে আমাদের মালিক, একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের ওপর তুমি অনুগ্রহ দান করো, আমাদের কাজকর্ম (আঞ্জাম দেয়ার জন্য) তুমি আমাদের সঠিক পথ দেখাও।
অতঃপর আমি গুহার ভেতরে তাদের কানে বহু বছর ধরে (ঘুমের) পর্দা লাগিয়ে রাখলাম’। (আল-কাহাফ : ৯-১১)
আল্লাহ জাল্লা শানুহুর অনুগ্রহপ্রাপ্ত গুহাবাসী তরুণদের সম্পর্কে শহরবাসী যখন জানল তখন তাদের স্মৃতিরক্ষা ও সম্মানার্থে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরির প্রস্তাব করল; কিন্তু পরে উল্লেখ করা হলো তারা যেন সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করে।
উল্লিখিত সূরার ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “আর এভাবেই আমি (এক দিন) তাদের ব্যাপার (শহরবাসীকে) জানিয়ে দিলাম, যাতে করে তারা (এ কথা) জানতে পারে, (মৃতকে জীবন দেয়ার ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা (আসলেই) সত্য এবং কেয়ামত (আসার) ব্যাপারেও কোনো রকম সন্দেহ নেই, যখন তারা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক করে যাচ্ছিল, (তখন) কিছু লোক বলল, (তাদের সম্মানে) তাদের ওপর একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দাও; (আসলে) তোমাদের মালিকই তাদের সম্পর্কে সর্বাধিক খবর রাখেন; (অপর দিকে) যেসব মানুষ তাদের কাজের ওপর বেশি প্রভাবশালী ছিল তারা বলল- (স্মৃতিসৌধ বানানোর বদলে চলো) আমরা তাদের ওপর একটি মসজিদ বানিয়ে দিই।”
এ আবেদন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ২০২৪-এর আন্দোলনে নিহত বিপ্লবীদের সম্মানে আমরা আমাদের হৃদয়ে গড়েছি তাজমহল। সেই সাথে দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগও নেয়া উচিত, যাতে নিহিত আছে দুনিয়া ও আখেরাতের সীমাহীন কল্যাণ।
তাই আসুন, শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের মতো বীর সেনানিদের স্মৃতি রক্ষার্থে আল কুরআনের আলোকে দৃষ্টিনন্দন কিছু মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে করে আমরা তাদের স্মরণ ও ভালোবাসা হলো এবং আমরাও প্রেরণায় উজ্জীবিত হবো।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল