০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

প্রকৃতির মাঝে একদিন

প্রকৃতির মাঝে একদিন -

চারদিকে ভোরের আলোয় বেশ ফর্সা হয়েছে। শিরশির বাতাসের ঝিরঝির শব্দ। হিমেল হাওয়ার পরশ এসে তনুমনকে শিহরিত করে তুলছে। চারদিকে জনমানুষের কোনো কোলাহল নেই। শতরঞ্জি পাখিদের মিষ্টি কলরবে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছে। নিলীমায় সাদা তুলোর মতো জমে থাকা ছোপ ছোপ মেঘমালা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। আমরা এগারো জনের একটি কাফেলা রওনা দিয়েছি চট্টগ্রামের উদ্দেশে। একদিকে ঈদের আমেজ, অন্যদিকে অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের আনন্দে নিদ্রাহীন রাত কাটালাম।
ভোর ৬টা : স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সকাল ৬টায় লক্ষ্মীপুর জেলাধীন রায়পুর থানা থেকে রওনা দিলাম। আমাদের গন্তব্য ছিল গুলিয়াখালী সি-বিচ, খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও মহামায়া লেক।
বেলা ৮টায় ফেনী পার হয়ে একটি হাইওয়ে হোটেলের সামনে যাত্রাবিরতি নিলাম। টুকটাক কাজ সেরে নাশতা করলাম। তারপর শুরু হলো পথচলা। গাড়ি দুরন্তর গতিতে সম্মুখপানে এগিয়ে চললেও রাস্তায় জ্যাম থাকাতে সাড়ে ১০টায় সৌন্দর্যের রাজ্য খৈয়াছড়ায় (চট্টগ্রাম মিরসরাই) এসে পৌঁছলাম। মহাসড়ক থেকে ভাঙা রাস্তা হয়ে কিছুদূর গিয়ে গাড়ি পার্কিং করে শুরু করলাম ঢেউ খেলানো পাহাড়ি পথে হেঁটে চলা। কিছুদূর গিয়ে একটি হোটেলে দুপুরের খাবার অর্ডার দিলাম। তারপর কিছু জামা-কাপড় নিয়ে পাহাড়ি পথে রওনা দিলাম ঝরনার উদ্দেশে। কিছুদূর যাওয়ার পর ঝরনার আওয়াজ কর্ণকুহরে আসতে লাগলো। আরো সামনে এগুলেই দেখতে পেলাম নয়নাভিরাম ঝরনার প্রথম স্তর। স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার ইচ্ছে থাকলেও সীমিত সময়ের কারণে সামনে অগ্রসর হতে হলো। কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছলাম, যার বাঁ-দিকে একটি খাড়া পথ গিয়ে সীমানা মিললো পর্বতের চূড়ায়। ওপর থেকে রশি ঝুলানো থাকায় রশি ধরেই ওপরে উঠলাম। পথ খাড়া হওয়ায় খুব ভয় ছিল, যে একবার পা পিছলে পড়লে পৃথিবীর সৌন্দর্য আর দেখা হবে না। অবশেষে চতুর্থ স্তরে উঠেই হাঁপিয়ে যাই। অথচ পর্বতের চূড়া ছিল গন্তব্য। তবুও আমরা তিনজন এগোতে গেলে আম্মুর কথা মনে পড়ল ‘বাবা! বেশি ওপরে উঠবি না!’ অমনি নিচে নামার পথ ধরলাম।
এরপর নিচে নামার সময় বুঝলাম ওপরে ওঠার চেয়ে নিচে নামা কত কষ্টকর! অবশেষ দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছে আনন্দ-ফুর্তি করে গোসল করলাম। অতঃপর হোটেলে ফিরে এলাম। নামাজ আদায় করা ও খাবার খাওয়ার মধ্যেই অর্ধদিন চলে গেল। বেলা ২টা : গন্তব্য মহামায়া লেক। মহামায়ায় পৌঁছে টিকিট সংগ্রহ করি। প্রবেশের পর কিছুটা পথ গেলেই দেখা যায় লেকের পাড়। প্রথমে বাঁ-দিকের খাড়া পথ ধরেই টিলায় উঠলাম। তবে পা ব্যথা হওয়াতে আমরা দু’জন নিচে নেমে এলাম। বাকিরা টিলার চূড়ায় লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গেল। অতঃপর তারা নিচে নামার সময় এক বন্ধু ওপর থেকে পল্টি খেয়ে পড়ে। মারাত্মকভাবে আহত হয়। আমরা ক্লিনিক খুঁজলাম, কিন্তু আফসোস! পার্ক এলাকায় কোনো ক্লিনিকের দেখা মিললো না।
সর্বশেষে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত হলো। নিয়তির পরিহাস! স্বপ্নরাজ্য গুলিয়াখালী আর যাওয়া হলো না। অনেক স্বপ্ন পূরণ না করেই বিষণœ মনে ফিরতে হচ্ছে। ড্রাইভার সাহেব দুরন্তর গতিতে গাড়ি চালিয়ে ফেনী মহাসড়কের বাঁ-দিকের মোড়ে ঢুকে একটি ক্লিনিকের সামনে গাড়ি থামালেন। সেখানে বন্ধুকে ট্রিটমেন্ট করানো হলে কিছুটা সুস্থ হয়। তারপর আবার পথচলা শুরু হলো। ড্রাইভার সাহেব আমাদের মনের প্রফুল্লতা ফেরাতে ফেনী বিজয় সিংহ পার্কের সম্মুখে গাড়ি নিয়ে থামালেন। তখন আসরের সময় ঘনিয়ে এলো। এজন্য আসরের নামাজ আদায় করে অসুস্থ বন্ধুকে নিয়ে পার্কের প্রবেশদ্বারে পৌঁছলাম। বাহির থেকে দেখেই বুঝলাম পরিবেশটা মনোমুগ্ধকর হবে। একটা দীঘিকে কেন্দ্র করে চারদিকে হাঁটার রাস্তা। সেই দীঘির নামও বিজয় সিংহ দীঘি। তারপর পার্কে প্রবেশের পরই প্রথম দেখলাম সবুজ সমারোহে ঘেরা পুষ্পকানন। মৃদু বাতাসের স্পন্দনে গাছে থাকা রাশি রাশি ফুল যেন দোল খাচ্ছে। সেই সাথে ফুলের মিহি গন্ধে পুরো পরিবেশ মুগ্ধতায় ছেয়ে গেছে। অতঃপর ফুলের রাজ্য পেরিয়ে দীঘির কোল ঘেঁষে হাঁটার সময় মাগরিবের আজান হলো। তাই প্রভুর ডাকে সাড়া দিতে গেলাম। আর পেছনে রেখে গেলাম নৈসর্গীয় এক পুষ্পকানন।
সন্ধ্যা ৭টা : এবার ফেরার পালা। যাওয়ার সময় যতটা ছিলাম উচ্ছ্বাসিত ফিরতি পথে ততটাই ক্লান্ত। তবুও কারো কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ এ স্মৃতি যে ভোলার নয়, এ যে স্মৃৃতির ক্যানভাসে অনন্তকাল স্বপ্নপুরী রাজ্যের গল্প হয়ে থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল