০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

অদ্ভুত এক মেয়ে

-

জাহান আজ বড্ড ফুরফুরা মেজাজে রয়েছে। সে প্রথমবারের জন্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধবের সাথে নেপালে শিক্ষাসফরে ঘুরতে যাবে। ব্যাগ গুছিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল ক্যাম্পাসের উদ্দেশে। বন্ধুরা যেখানে তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। একসাথে গান গাইতে গাইতে এবং আড্ডায় কখন তারা নেপালের কাঠমুন্ডু পৌঁছে গেল তা বুঝতেই পারল না। শিক্ষসফরের প্রথম দিন তারা হোটেলের কামরায় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। জাহান বেজায় উৎসুক মনোভাবের ছেলে। দারুণ ডানপিটে। বিকেলে সে আর তার দুই বন্ধু সুমন ও আরিফকে নিয়ে বের হলো স্থানীয় বাজার ঘুরতে। স্থানীয় বাজার ঘুরতে ঘুরতে এক দোকানির সাথে তাদের কথায় কথায় খাতির জমে যায়। দোকানির নাম গোবিন্দ। তিনি এখানে ব্যবসা করেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। কথায় কথায় তিনি তার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন।
দোকানি বললো, ‘আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা তোমাদের বলি যদি শুনতে চাও!’ সুমন বললো, ‘হাঁ, বলেন শুনি’। দোকানি বললো, ‘আমার বয়স কুড়ি পাঁচেক হবে, আমি সন্ধ্যাবেলায় আমার অসুস্থ মায়ের জন্য মহুয়া গাছের বাকল নিতে দুর্গর দিকে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে এক অদ্ভুত রকমের সুন্দরী সুকেশী নারীকে দেখতে পেলাম, ডাকলাম তাকে। সে বললো সেও গাছের বাকল নিতেই এসেছে। আমি তার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে লাগলাম। সেও দেখি জবাব দিচ্ছে। আমি বললাম, ‘আপনাকে কখনো এ গ্রামে দেখিনি’ সে জবাব দিলো, সে পাশের গ্রাম থেকে এসেছে গাছের বাকলের অনেক গুণাগুণ শুনেছে তাই নিতে চাচ্ছে। যখন দুর্গের সামনে আসলাম, আমরা পেছনের ভাঙা প্রাচীর দিয়ে ঢুকতেই মেয়েটি দুর্গের ভেতরে চলে গেলে আমি তাকে খোঁজার জন্য যাই। তার নূপুরের শব্দ পাচ্ছিলাম কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। ওপরের দিকে সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম। প্রত্যেক কামরা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে যা দেখলাম তা অবিশ্বাস্য। এক বিশাল পুরোনো ফ্রেমে বাঁধাই করা এক তৈলচিত্র সেই মেয়েটির, যে মেয়েকে আমি দেখেছিলাম। যেই দৌড় দিব তখনই আমার মুখের কাছে চলে আসে সে মেয়ের বীভৎস মুখটা, যা দেখে রীতিমতো আমার গা হিম হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটি আমার কাছে তার আর্তচিৎকারে পুরো দুর্গ কম্পিত হচ্ছিল। আমি কোনোরকম দৌঁড়ে চলে আসি। সেখান থেকে আসার পর আমার এক সপ্তাহ জ্বর ছিল ।
প্রচলিত আছে, দুর্গটি এক সময় এক রাজার দরবার ছিল। একদিন রাজাকে নিজের করতে না পেরে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল এক সুন্দরী বাইজি। রাজা তাকে ভালোবাসলেও তিনি বেশি ভালোবাসতেন তার সাম্রাজ্যকে। সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে বাইজিকে বিবাহ করা যাবে না, বাইজি এরকম বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে পারেনি। বাইজির মৃত্যুর পর নাকি রাজারও এক রাতে তার খুব রহস্যময় মৃত্যু হয়। এরপর থেকে দুর্গটি পরিত্যক্ত, দিনে ওখানের রাস্তায় যাতায়াত করলেও মানুষ রাতে কেউ যায় না। ওখানে এক অশরীরী ছায়া অনুভব করছে। আমি আগে বিশ্বাস না রাখলেও এখন রাখি’।
সুমন বললো, ‘গ্রামটা ম্যাপে দেখি কাছেই। তাহলে আমাদেরও যাওয়া উচিত।’
আরিফ সাথে সাথে বললো, ‘কোনো প্রয়োজন নেই।’
জাহান বলে, ‘গেলে কিন্তু মন্দ হবে না।’
দোকানি এ সময় বলে, ‘অনেক রাত হয়েছে, তোমরা তোমাদের হোটেলে চলে যাওয়া উচিত। সেখানে যাওয়ার চিন্তাও কেউ করো না।’
তারা কি আর মানে? তিন বন্ধু রওনা দিলো, যদিও আরিফ আসতে চাচ্ছিল না। ওকে জোর করে নিয়ে যায় তারা।
ওরা পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যায় সেখানে। তারা সে বাড়িতে প্রবেশ করে। গা ছমছম পরিবেশের অনুভূতি জাগ্রত হয় তাদের মাঝে। তারা জায়গাটা আস্তে আস্তে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।
আরিফ যখন পা বাড়াচ্ছিল তখন সে হঠাৎ করেই এক বিড়ালকে দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে যায়। তারা খুঁজে খুঁজে তেমন কিছু পেল না। কিন্তু যখন তারা সিদ্ধান্ত নিলো তারা বেরিয়ে যাবে তখন আচমকা এক বাতাস এসে যেন তাদের শরীর আরো ভারি করে তুলছে। যখন তারা সামনের গেটের দিক যাচ্ছিল ঠিক তখন তারা তিনজন শুনতে পায়, ‘চলে যাচ্ছো কেন, তোমাদের তো চলে যাওয়া আর হবে না।’ ওরা দৌড়ে বের হয়ে আসে, দৌড়াতে দৌড়াতে তারা বাজার পার হয়ে তাদের হোটেলে চলে এলো। তারা কখনো এদিনের কথা আর কাউকে বলেনি।
শিক্ষার্থী, টেলিভিশন ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল