পাখির প্রতি ভালোবাসা
- আব্দুস সবুর
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ছোট্টমোট্ট একটি বাড়ি। চতুর্দিকে থাম্বার মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে মোটা মোটা আমগাছ। বিশালদেহী আমগাছগুলো যেন এ বাড়ির করা পাহারাদার। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা যেন দৃষ্টি রাখে এ বাড়ির প্রতি। এ আমগাছগুলোতে বাস করে রঙবেরঙের পাখপাখালি। ময়না, শালিক, চড়ুই, ছোট্ট পাখি টুনটুনি আরো কত ধরনের পাখি! এ বাড়ির ছোট্ট ছেলে অনিক। বুঝমান হওয়ার পর থেকেই পাখির প্রতি ওর খুব ভালোবাসা। পাখিকে খুব মুহাব্বত করে সে। পাখি কাছে পেলেই সে আদর করতে থাকে পাখিদের। কোলে নেয়, চুুমু খায়, বিভিন্ন রকমের খাবার খাওয়ায়। পাখির প্রতি ছোট্ট অনিকের অমন ভালোবাসা দেখে পাখিরাও নির্ভয়ে উড়ে উড়ে ওর কাছে চলে আসে। কখনো ঘাড়ে এসে বসে আবার কখনো বসে মাথার ওপর।
প্রতিদিন ফোজরের আজান হলে অনিক ঘুম থেকে জেগে ওঠে। বাবার সাথে নামাজ আদায়ের জন্য তৈরি হতে থাকে। ঠিক তখনই জেগে ওঠে পাখিরাও। কিচিরমিচির কলরবে ডাকাডাকি করতে থাকে। যেন অনিককে বলছে আমরাও জেগেছি তোমার মতোই নামাজ পড়ব বলে। নামাজ শেষ করে অনিক বাড়ির উঠানে পাখিদের জন্য খাবার ছিটিয়ে দেয়। খাবার দেখে পাখিরা একে একে আমগাছ থেকে নেমে আসে উঠানে। মজা করে খাবার খেতে থাকে। অনিক ওদের খাওয়া দেখে মনে মনে খুব খুশি হয়। যখন উঠানে ছড়িয়ে দেয়া সব খাবার শেষ হয়ে যায়। তখন কোনো কোনো পাখি উড়ে এসে অনিকের ঘাড়ে বসে। আর ওর কানের কাছে আস্তে করে ডাকতে থাকে। যেন পাখিটা বলতে চায়, বন্ধু অনিক আমাদের আরো খাবার দাও। এই সামান্য কটা খাবারে ক্ষুধা নিবারণ হয়নি আমাদের।
বাকহীন পাখিদের না বলা ভাষা অনিক ভালোভাবেই বুঝতে শিখেছে। তাই আবারো সে খাবার ছিটিয়ে দেয় পাখিদের সামনে। খাবার ছিটিয়ে দেয়ার সাথে সাথে পাখিরা সব হল্লা করে খেতে থাকে। খাবার শেষে আবার কিচিরমিচির ডাকতে শুরু করে ওরা। কিন্তু অনিক ওদের আর খাবার দেয় না। কারণ সে জানে পাখিদের এভাবে বসে বসে খাওয়াতে থাকলে ওরা অলস হয়ে যাবে। নিজের খাবার নিজে জোগাড় করার ব্যাপারে পাখিরা অনাগ্রহী হয়ে পড়বে। তাই সে পরিমাপ করে খাবার দেয় ওদের। এরপর আবার পাখিরা চেঁচামেচি করলে ওদের বলে দেয়, বন্ধু পাখিরা এখন তোমরা খাবার অন্বেষণে মাঠে বেরিয়ে পড়ো। নিজের খাবার নিজে জোগাড় করার অভ্যাস তোমরা ভুলে যেওনা কেমন? পাখিরা তখন হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে উড়াল দেয় খাবারের খোঁজে। বিকেল বেলা অনিক যখন স্কুল থেকে ফিরে আসে। পাখিরাও আস্তে আস্তে খাবার খেয়ে বাসায় ফিরে আসে। আর কিচিরমিচির রবে অনিককে জানান দেয় আমরাও তোমার মতো নিরাপদে বাসায় ফিরে এসেছি। পাখিদের অমন আচরণ দেখে অনিক মুচকি মুচকি হাসে আর ইশারার মাধ্যমে সাড়া ওদের। এভাবে অনিক ও তার বন্ধু পাখিদের দিনকাল বেশ ভালোই কাটছিল।
এরপর হঠাৎ একদিন অনিকের কানে এলো ওর বড় বোন তামান্নার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে। শুনে সে খুব আনন্দিত হলো। কিন্তু পরক্ষণেই একটা খবর ওর মনটা খারাপ করে দিলো। ওদের সব গাছ নাকি কেটে ফেলবে ওর বাবা। তাহলে ওর বন্ধু পাখিদের কি হবে? গাছ কেটে ফেললে কোথায় থাকবে ওরা? গাছই যে ওদের একমাত্র আশ্রয়স্থল।
বিয়েতে যে অনেক খরচ হবে। যা অনিকের ক্ষুদ্র পরিবার ব্যবস্থা করতে অক্ষম। তাই ওদের শেষ সম্বল গাছগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ওর বাবা। তাই, অনিকও ওর বাবাকে কিছু বলল না। অবশেষে সব গাছ কাটা হলো। পাখিরা সব উড়ে উড়ে অন্যত্র চলে গেল। যাওয়ার বেলায় কিচিরমিচির কলরবে অনিককে বলে গেল, বন্ধু অনিক ভালো থেকো। আমরা তোমাকে রেখে আশপাশের গাছগুলোতে চলে যাচ্ছি। সময় পেলে আমাদের দেখতে যেও। আর আমরাও আসব তোমাকে দেখতে। অনিকের ছোট্ট মন তখন ডুকরে কেঁদে উঠল। কিন্তু বোনের বিয়ের কথা ভেবে দমিয়ে রাখল সে কান্না। এরপর সময় মতো অনিকের বোনের বিয়ে হলো।
অনিক ওর পাখি বন্ধুদের ভুলতে পারেনি। তাই সে পাখিদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আশপাশের গাছপালায় খুঁজতে থাকে ওর বন্ধুদের। পাখিরা অনিককে দেখতে পেয়ে চিনে ফেলে ওকে। তাই খুশি হয়ে ডাকাডাকি শুরু করে। অনিকও তার পাখি বন্ধুদের খুঁজে পেয়ে বেশ আনন্দিত হয়। খাবার ছিটিয়ে দেয় ওদের জন্য। পাখিরা একে একে উড়ে আসে। মনের সুখে সব খাবার খেতে থাকে।
অনিক পাখি বন্ধুদের বলে, তোমাদের ছেড়ে থাকতে আমার ভীষণ খারাপ লাগে। তখন পাখিরা বলে, আমরা রোজ রোজ তোমার বাড়িতে গিয়ে তোমাকে দেখে আসব। আর তোমার দেয়া খাবার মজা করে খেয়ে আসব। তাহলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। পাখিদের অমন জবাব শুনে অনিক খুব খুশি হয়।
কথা মতো পাখিরা রোজ রোজ অনিকের বাড়িতে আসতে শুরু করে। আর অনিকের দেয়া খাবার খেতে থাকে। অনিকের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে আবার চলে যায় ওরা। পাখিরা যখন চলে যায় তখন আবারো অনিকের মন খারাপ হয়।
অনিকের মনের ইচ্ছে হলো পাখিরা সবসময় ওদের বাড়িতে থাকুক। তাই সে বাড়ির আশেপাশে ছোট ছোট চারাগাছ লাগাতে শুরু করে। গাছগুলো বড় হলে পাখিরা তাতে বাসা বানাবে। এমনি স্বপ্ন অনিকের। পাখির প্রতি অনিকের অমন ভালোবাসা দেখে ওর বাবা-মা মুগ্ধ হয়ে যায়। মুগ্ধ হয় ওর গ্রামের মানুষরাও। সবাই বলাবলি করতে থাকে, অনিক যেভাবে পাখিদের ভালোবাসে আমাদেরও পাখিদের প্রতি অমন ভালোবাসা থাকা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা