কাটাখাল শতাব্দীর বটতলা
- সাইফুদ্দিন সাইফুল
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:০৮
যশোর জেলার ঝিকরগাছা সদর উপজেলার অন্তর্গত পৌরসভাধীন কৃঞ্চনগর গ্রামে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কাটাখাল ব্রিজসংলগ্ন প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একটি শতাব্দীর বটবৃক্ষ।
প্রথম থেকে এটি কাটাখাল বটবৃক্ষ তলা, পরবর্তী সময়ে এটি আবার বয়সের কারণে কাটাখাল শতাব্দীর বটবৃক্ষতলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এর অনেক পরে এসে ঝিকরগাছা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে বা উদ্যোগে এই বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে এখানে অনেক বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ রোপণ করা হয় এবং একটি নান্দনিক পার্কও নির্মাণ করে। আর তখন থেকে এই কাটাখাল বটবৃক্ষতলার নামকরণ করা হয় কাটাখাল বঙ্গবন্ধু পার্ক। এই পার্কের তিন পাশে পানি দ্বারা বেষ্টিত। পার্কের রেলিং ধরে দক্ষিণে একটু ঘাড় কাত করে নিচের দিকে হাত বাড়ালেই কপোতাক্ষের পানি ছোঁয়া যাবে। এই পার্কে যে শতাব্দীর বটবৃক্ষটি কালের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, সে বটবৃক্ষটির চারা কে বা কারা এবং কবে কখন বপন করেছিল কিংবা কোনো পাখির ঠোঁট থেকে বীজ পড়ে আজ এই মহীরুহ হয়েছে; এ বিষয়ে তেমন কোনো সঠিক দলিল পাওয়া যায় না এবং তা কেউই নিশ্চিত করে বলতেও পারে না।
এই এলাকার বয়স্ক মানুষদের মোটামুটি ধারণা যে, উল্লিখিত বটবৃক্ষটির বয়স আনুমানিক শত বছর তো হবেই। কেউ কেউ আবার ভিন্ন মতও পোষণ করেন। অবশ্য বাপ-দাদার আমল থেকেই বটবৃক্ষটি দেখে আসছে, এ ব্যাপারে সবাই একমত। হ্যাঁ! এটি ঠিক যে, এই বটবৃক্ষটি দীর্ঘকাল ধরে বড়ই আপনজনের মতোই এলাকার মানুষদের বন্ধু হয়ে আছে এবং প্রচণ্ড গরমে এতটুকু ছায়া দিয়ে ক্লান্তজনের শান্তি দেয়।
বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের মহাকাব্য রচয়িতা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই পার্কের শতাব্দীর বটবৃক্ষটি স্থানীয় জনসাধারণের কাছে দীর্ঘকাল ধরে বর্তমান পর্যন্ত মিলেমিশে আছে। এখানকার আশপাশে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাসরত শিশু যুবা নারী বয়স্ক মানুষ এতটুকু আড্ডা আনন্দ ও সুখ ভাগাভাগি করে নেয়ার তাগিদে বিশেষ করে প্রত্যেহ বিকেলে এবং ছুটির (শুক্রবার) দিনে সবাই ছুটে আসে এই বটবৃক্ষের তলে। এখানে এসে কেউ কেউ গল্প করে, কেউ কেউ বাদাম খায়, আবার কেউ কেউ বটবৃক্ষেরতলে বসে লুডু খেলে; দাবা খেলে। আবার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মোবাইলে আপন মনে গেমস খেলে অথবা ফেসবুক/ইউটুউবে মেতে থাকে। অনেকেই ল্যাপটাপ নিয়ে এসে নিরিবিলি নিজের কাজটা সেরে নেয়। এলাকার উঠতি বয়সের অনেক তরুণরা গিটার এনে সুর-তাল-লয়-গান প্র্যাকটিসও করে থাকে। মোটকথা, দিন শেষে যাপিত জীবনের চলমান পর্বকে কিছুটা হলেও অন্য এক জগতে বিচরণ করার জন্য এমনই একটু সময় বেছে নিয়ে এখানে আসা এই আর কী! আর তাই দিনে দিনে এ পার্কটি ঝিকরগাছা মানুষদের কাছে বিনোদনেরও একটি বিশেষ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
ঝিকরগাছার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘ঝিকরগাছা সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে এই পার্কে দিনব্যাপী ‘কাদামাটি সাহিত্য উৎসব’ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ঝিকরগাছা খাজা বাবা পরিষদ আয়োজিত গরিবে নেওয়াজ খাজাবাবা হজরত মঈনুদ্দীন চিশতির রহ:-এর মহান ওফাত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর আরবি মাসের ৬ রজব ১ দিন সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি ওই পার্কে বটবৃক্ষের তলে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা ও ভাবসঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।
পাশাপাশি ঈদ কিংবা পূজা এবং বাংলা নববর্ষ সময়ে এখানে এই পার্কে অনেক দর্শনার্থীদের পদচারণা ঘটে এবং মুখরিত হয়ে ওঠে শতাব্দীর বটবৃক্ষতলা খ্যাত এই সবুজময় পার্ক। ফলে স্থানীয়দের জোর দাবি যে, ঝিকরগাছা কাটাখালসংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের তীরে শতাব্দীর বটবৃক্ষটিকে কেন্দ্র করে যে পার্কটি গড়ে উঠেছে; তা যথাযথ সংরক্ষণের এবং যুগোপযোগী আধুনিক রূপদান গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা