২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কল্পজাল

-


যখন আমি ছোট ছিলাম, আকাশের গাঢ় নীলতায় ডুব দিয়ে একটা কিছু খুঁজতাম, যেন কিছু অজানা রহস্য আমাকে প্রতিনিয়ত ডাকছে। মেঘের ভেতর আমি একসময় এমন কিছু দেখতাম, যা শুধু আমারই দেখা। মেঘের সাদা আর ধূসর রেখাগুলো যেন কোনো গল্প বলে যাচ্ছিল, আর আমি সেসব গল্পের মধ্যেই হারিয়ে যেতাম। কখনো কখনো মনে হতো মেঘ হয়তো কিছু একটা বলছে, এমন কিছু যা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। সেসব সময় আজও জীবন্ত হয়ে ওঠে, সেই কল্পজাল, যা আমার শৈশবের এক অদৃশ্য রহস্য ছিল। মেঘের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা যেন এক দীর্ঘ এক চুপচাপ আলোচনার মতো ছিল, এক অজানা ভাষায় এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব।
প্রতিদিন দুপুরের পর যখন আকাশ পরিষ্কার হয়ে উঠত, আমি বসে থাকতাম বারান্দায়, মেঘের দিকে তাকিয়ে। মেঘের মধ্যে কত রঙ, কত আকার, কত জীবন! একেক সময়, আকাশের ওপরে সাদা মেঘের ঝাঁক কোনো এক পরীপুরীর মতো মনে হতো, অন্য সময়ে বেগুনি ও তামাটে মেঘগুলো যেন সব কিছু আড়াল করে একটি গভীর সঙ্কেতের মতো ঝুলে থাকত। মেঘের ভেতরে কি সত্যিই কিছু ছিল? সে আমাকে সব সময় বুঝিয়ে বলতে চাইত। ‘আত্মবিশ্বাসের পর্দা সরিয়ে, ভেতরের গোপন বার্তা পড়ো, যেন এমন কোনো কথা মেঘ নিজেই আমার কাছে বলে যাচ্ছিল।

শৈশবের সবচেয়ে বড় আশ্চর্য ছিল, আকাশে গঠিত মেঘের সেই রহস্যময় গঠনতন্ত্র। আমি এক দিন ভাবলাম, যদি মেঘ সত্যিই কিছু বলতে চায়, তবে তাকে কি আর আমি সহজে বুঝতে পারব? আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাবস্থায়, কখনোই মেঘের ভেতর আর কিছু খুঁজে পাইনি। তবে তার পেছনে কিছু ছিল, তা অনুভব করতাম, একধরনের অজ্ঞাত অনুভূতি, যা আমাকে টানে, যা আমাকে কোনো এক গভীর জায়গায় নিয়ে যায়। সে কখনো কখনো খুব নরম, কখনো খুব তীক্ষè। এমন সময় ছিল, যখন মেঘের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি চোখ বন্ধ করতাম, মনের মধ্যে সেই রহস্যময় বার্তাগুলো বুনতাম। জানতাম না, মেঘ সত্যিই কিছু বলে কিনা, তবে আমি মনে মনে বলতাম, ‘তুমি যা বলো, আমি শুনতে পাচ্ছি, কিছু না কিছু তো বলছ তুমি।’

আজও যখন আকাশে মেঘ জমে ওঠে আমি মনে করি, তারা আমাকে কিছু বলছে। হয়তো তাদের ভাষা এখনো আমার কাছে অনির্বাচিত, কিন্তু তারা কখনো আমাকে একা যেতে দেয় না। মেঘের সেই কল্পজাল আজও আমার সঙ্গে থাকে, জানিয়ে দেয়, যে সম্পর্কের ভাষা হয়তো শৈশবে বুঝতে পারিনি, তা এখনো বুঝতে পারি, কারণ মেঘ সত্যিই কিছু বলে, শুধু আমাদের শুনতে শিখতে হয়। জীবনের পথে মেঘ এক অদ্ভুত বন্ধুর মতো হয়ে রয়ে গেছে, যে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে চলে। কখনো সেও আমাদের মাঝে মিলিয়ে যায়, আমাদের অনুভূতিতে মিশে যায়। আর এভাবেই মেঘের সঙ্গী হয়ে আমি আমার পথ চলতে থাকি, এক মিথ্যের মাঝেও সৃষ্টির একটি সত্য খুঁজে পাই।

যখন আকাশে মেঘ জমে ওঠে, আমি মনে করি, তারা আমাকে কিছু বলছে। হয়তো তাদের ভাষা এখনো আমার কাছে অনির্বাচিত, কিন্তু তারা কখনো আমাকে একা যেতে দেয় না। মেঘের সেই কল্পজাল আজও আমার সঙ্গে থাকে, জানিয়ে দেয়, যে সম্পর্কের ভাষা হয়তো শৈশবে বুঝতে পারিনি, তা এখনো বুঝতে পারি, কারণ মেঘ সত্যিই কিছু বলে, শুধু আমাদের শুনতে শিখতে হয়। জীবনের পথে মেঘ এক অদ্ভুত বন্ধুর মতো হয়ে রয়ে গেছে, যে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে চলে। কখনো সেও আমাদের মাঝে মিলিয়ে যায়, আমাদের অনুভূতিতে মিশে যায়। আর এভাবেই মেঘের সঙ্গী হয়ে, আমি আমার পথ চলতে থাকি, এক মিথ্যের মাঝেও সৃষ্টির একটি সত্য খুঁজে পাই। সব কিছু যা কখনোই পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি, এখনো মেঘের মধ্যে ভেসে ওঠে চিরকাল। মেঘ শুধু প্রকৃতির অঙ্গ নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখান থেকে জীবনের সত্য-মিথ্যা সব কিছু পেতে শেখা যায়। তাই মেঘের সঙ্গে কথা বলা কোনো কল্পনা নয়, বরং জীবনভর শিখে যাওয়ার এক অসীম যাত্রা।


আরো সংবাদ



premium cement