শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান
- ফারুক আহম্মেদ জীবন
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
এই ডিসেম্বরেই জিহাদের পঞ্চম শ্রেণীর বার্ষিক সমাপনী ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। তারপর জিহাদের জীবনে শুরু হবে আবারো এক নতুন অধ্যায়। একেবারে নতুন অচেনা স্কুল, অচেনা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে নতুন পরিচয়-পরিচিতি। নতুন সব শিক্ষা পাঠ। নতুন সহপাঠী, নতুন পড়ার, আর খেলার সাথী।
খুব ছোটবেলায় জিহাদ পড়ালেখায় বেশ ভালো ছিল। কিন্তু মাঝে হঠাৎ! আকস্মিকভাবে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ডভাবে আঘাত পাই নিচে প্রাচীরের ইটের ওয়ালে। সেই আঘাতে মাথা অনেকখানি কেটে গিয়েেিছ। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছিল তাতে জিহাদের। সেদিন বেশ কয়েকটা সেলাই দিতে হয়েছিল জিহাদের মাথার কাটা স্থলে। আর তার পর থেকেই জিহাদ যেন আগের মতো পড়ালেখায় তেমন একটা মনোযোগী হতে পারে না। জিহাদের পড়ালেখায় অমনোযোগী দেখে। জিহাদের আব্বু আম্মু সবসময় জিহাদকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকে। কেননা শিক্ষা হলো জাতির মেরুদণ্ড...
যার ভেতর শিক্ষার আলো নেই। সে জ্ঞান হীন মূর্খ মানুষ অন্ধকারের শামিল। আর অন্ধকার বিপদের শামিল।
তবে জিহাদের মাথায় আঘাতের ঘটনা শোনার পর থেকে। তাদের পানিসারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বলা যায়, প্রায়, সব শিক্ষক-শিক্ষিকারাই তাকে চোখে চোখে রাখে। বিশেষ করে তার স্কুলের মাসুদ রানা স্যার। হাসান মাস্টার, কালাম স্যার, মঞ্জুয়ারা ম্যাডাম। হেড ম্যাডাম পুষ্প রানী বিশ্বাস, অন্য অন্য স্যার, ম্যাডাম সবাই।
জিহাদের আব্বু জীবন হতদরিদ্র মানুষ।
বলা যায়, তার সংসারে নুন আনতেই
হাঁড়ির পান্তাটি ফুরাই।
আর সেজন্য তার ছেলে জিহাদ। এতবড় একটা
আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও, ইচ্ছা থাকলেও আজো পর্যন্ত, কবি জীবন, তার ছেলে জিহাদকে একজন ভালো মাথার ডাক্তারকে দেখিয়ে মাথাটা সিটিস্কেন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি।
জিহাদের আব্বু জীবন আজ কয়দিন বেশ লক্ষ করছে জিহাদের মনটা ভীষণ খারাপ। জীবন ছেলে জিহাদকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল জিহাদ?
আজ কয়দিন তোমার মন খারাপ কেন?
জিহাদ বলল, আব্বু আগামী রোববার স্কুলে আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান। পরীক্ষার পর স্কুলটা ছেড়ে চলে আসতে হবে। খুব ছোট্টবেলা থেকে ওই স্কুলে পড়েছি তো। বেশ মায়া পড়ে গেছে স্কুলটার প্রতি। স্কুল, স্কুলের স্যার, ম্যাডামদের ছেড়ে চলে আসতে হবে ভাবতেই কেমন যেন কান্না আসছে। জানো আব্বু... আজ কয়দিন স্যার-ম্যাডামদেরও মন খুব খারাপ। জীবন বলল, তেমনটাই তো হওয়া স্বাভাবিক বাবা। প্রতিটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি থেকে শুরু করে। তাদের প্রকৃত আদর্শবান মানুষ করে গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। আর এজন্যই তো মা-বাবার পরেই শিক্ষা গুরু, শিক্ষক-শিক্ষিকার সম্মান মর্যাদা অপরিসীম। কেননা, তারা প্রতিটা মা-বাবার মতোই, স্কুল সময়ে ছেলেমেয়েদের দেখে শুনে রাখে। জিহাদ বলল, তুমি ঠিক কথা বলেছ আব্বু। আমরা কত জ্বালাতন করি স্কুলে স্যার ম্যাডামদের। অথচ, তারা রাগ করে না। একটু বকাবকি করলেও। পরে আবার কাছে ডেকে আদর করে।
জীবন বলল, এজন্য শিক্ষকদের মা-বাবার মতো ভক্তি, শ্রদ্ধা, সম্মান করতে হয় বাবা। তাদের দোয়া আশীর্বাদ নিতে হয়। তাহলে মানুষের মতো মানুষ হওয়া যায়। অনেক জ্ঞানী-গুণী হওয়া যায়। যাও মন খারাপ করো না। পরীক্ষার বাকি এই কয়টা দিন মন দিয়ে পড়ালেখা করো। আর শোন, বিদায় অনুষ্ঠানের দিন শিক্ষকদের আশীর্বাদ চেয়ে নিও কেমন। কেননা মানুষের মতো মানুষ হতে গেলে শিক্ষকদের দোয়া খুব বেশি প্রয়োজন।
জিহাদ বলল, ঠিক আছে আব্বু। তুমিও আমার
জন্য দোয়া করো। কবি জীবন হেসে উঠে বলল
মা-বাবার দোয়া সবসময় সন্তানের মাথার ওপর থাকে বাবা জিহাদ। আলাদাভাবে মুখে বলার দরকার হয় না। এরই দুই দিন পর আজ রোববার জিহাদের স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন। অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মা-বাবাদের মতো। জিহাদের আব্বু আম্মুও গেছে জিহাদের সাথে তার স্কুলে। স্কুল কমিটির সভাপতি, সহসভাপতি, সেক্রেটারি, প্রধান শিক্ষিকাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি সবাই নিজেদের আসনে উপবিষ্ট।
সামনে ছাত্র-ছাত্রীরা বসে আছে। আলোচনার একপর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে এক-এক করে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখল। তাদের মধ্যে শিক্ষকদের অনুরোধে জিহাদের আব্বু কবি জীবনও ছোট ছোট কচিকাঁচা ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্য। তাদের আগামী দিনের আলোকিত জীবন গড়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে। কিছু মূল্যাবান বক্তব্য পেশ করল। উপস্থিত সকলেই খুব খুশি হলো জিহাদের আব্বু কবি জীবনের মহামূল্যবান কথা শ্রবণ করে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে দুই একজনকে কথা বলার জন্য ডাকা হলো। একসময় ডাকা হলো জিহাদকে। জিহাদ শিক্ষকদের কাছে গিয়ে শুরুতে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্য সালাম দিলো। তারপর শিক্ষকদের দিকে তাকিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা বলতে গিয়ে। জিহাদ বলল, আমাদের এই স্কুলের প্রত্যেকটা স্যার ম্যাডাম অনেক ভালো। তারা আমাদের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা পাঁচটি বছর আমাদের মা-বাবারই মতো কখনো শাসন, আবার কখনো আদর, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া দিয়ে স্কুল সময়ে সার্বক্ষণিক আগলে রেখেছেন। তাদের সে অবদান ভুলবার মতো নয়। আমরা, আমাদের মাতৃপিতৃ তুল্য। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সে ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না।
আমাদের এবার এই চির চেনা-জানা স্কুলটি ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্য স্কুলে। জানি আমরা থাকতে চাইলেও আর থাকা সম্ভব নয়। এই স্কুলের মাটি প্রতিটা বালুকণা থেকে শুরু করে। স্কুলের ফুল গাছ ও অন্য অন্য গাছালি। প্রতিটা দেয়াল, মেঝে এবং জানালা, দরজা, চেয়ার, টেবিলগুলোতে রয়েছে আমাদের দেহ, হাত, পায়ের দীর্ঘ দিনের পদচারণের স্পর্শ। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি রয়েছে যেমন অপরিসীম মায়া। তেমন এই স্কুলের সবকিছুর প্রতি একটা মায়া রয়েছে।
এসবকিছু ছেড়ে আমাদের এবার চলে যেতে হবে। জানি, অনেক, অনেক কষ্ট হবে। তবু তবু...
বলতে বলতে জিহাদ কেঁদে ফেলল।
জিহাদের সাথে কাঁদছে স্কুলের অন্য অন্য বিদায়ী তার সব পড়ার সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবীরা। শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ উপস্থিত সবার চোখ অশ্রুসিক্ত। জিহাদ কাঁদতে কাঁদতে আবার বলা শুরু করল, তবু চলে যেতে হবে এটাই নিয়ম। আমরা সময়-অসময় আমাদের স্যার, ম্যাডামদের অনেক জ্বালাতন করেছি। মনের অজান্তে বিরক্ত করেছি, কষ্ট দিয়েছি। আশা করি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী আমাদের সব অপরাধ, ভুল, দোষ ক্ষমা চোখে দেখবেন। কেননা এই স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষকার কাছে আমরা তাদের সন্তানের মতো। সর্বোপরি আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকা মণ্ডলীর কাছে আশীর্বাদ চাই। আপনারা আমাদের জন্য মন থেকে দোয়া করবেন।
যেন আমরা পড়ালেখা শিখে প্রকৃত মানুষের মতো মানুষ হতে পারি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা