১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রোগী দেখার পুণ্য ও বিড়ম্বনা

-

২০১৭ সালের এক শীত বিকেলে আমার এক আত্মীয় ফেসবুকে পোস্ট করেছে-‘আমার বড় ভাই খুবই অসুস্থ, আজ রাতেই তার অপারেশন হবে। সবাই দোয়া করবেন। ফেসবুক পোস্ট দেখে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাকে ফোন দিলাম। জানলাম ধানমন্ডি ইবনে সিনায় আজ রাতে তার ভাইয়ের রেনাল অপারেশন হবে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রফেশনাল ডিগ্রি করছিলাম। আত্মীয়ের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে ক্লাস শেষ করে রাতে হাসপাতালে দেখতে গেলাম। তখন অপারেশন চলছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে খেয়াল করলাম, রোগীর সাথে থাকা স্বজনদের কেউ কেউ আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আমি কী নিয়ে এসেছি। আমি কিছুটা বিব্রত হলাম। আবার নিজকে নিজে সান্ত্বনা দিলাম, আমি যা ভাবছি তা তো নাও হতে পারে! হয়তো অন্য কিছু দেখছে! আমি কিছু নিয়ে আসিনি বলেই হয়তো আমার কাছে এমনটা মনে হচ্ছে।
দুই দিন পর গিন্নি ফোন করে জিজ্ঞেস করল, তুমি নাকি নূরু কাকাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার সময় কিছু নিয়ে যাওনি? বুঝলাম, আমার ধারণাই সঠিক, আমি কিছু নিয়ে গিয়েছি কি না, তারা সেদিন সেটাই দেখছিল। আমি আর কথা বাড়ালাম না। শুধু ভাবলাম-মানুষ কতটা ইতর হয়! এই যে সারাদিন অফিস করে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করলাম। তারপর রাত ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে রোগীর অপারেশন থিয়েটারের কাছে অবস্থান করলাম। অতঃপর ঘন কুয়াশা ঘেরা শীত আর তীব্র ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে রাত ১২টায় বাসায় ফিরলাম- আমার এই আন্তরিকতা আর সৌজন্যতার কোনোই মূল্য নেই তাদের কাছে? তারা আমার এই আন্তরিকতার মূল্যায়ন করল হাতে এক পুঁটলি ফলমূল না থাকা দিয়ে? আবার মনে মনে নিজেকে কিছুটা ভর্ৎসনাও করলাম, তারা তো আর আমাকে যেতে বলেনি, তবুও আমি কোন দুঃখে সেখানে গেলাম? সুতরাং ভুল আমারই! তারপর থেকে এমন অহেতুক বিড়ম্বনা এড়াতে রোগী দেখে পুণ্য অর্জন আর সামাজিক দায়িত্ব পালনের চিন্তা কমিয়ে দিয়েছি।
ক’দিন আগে আরেক আপনজন খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে অন্য এক আত্মীয়ের কাছ থেকে শুনলাম। কিন্তু বহুবিধ ব্যস্ততা আর প্রচণ্ডরকম শারীরিক অসুস্থতার দরুন মিরপুর-২ থেকে খিলগাঁয়ের মতো সমস্যাযুক্ত বিপরীত পথে যাতায়াত করার সাহস হচ্ছিল না। তাই মোবাইলেই যথাসম্ভব খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করছিলাম। তবে যখনই রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার খবর শুনলাম, অসুস্থতা নিয়েই সাথে সাথে হাসপাতালে ছুটে গেলাম। রোগী দেখে রাত ৮টায় বাসায় ফিরে আমার নিজের অসুস্থতা বেড়ে মারাত্মক লেভেলে চলে যায়। প্রচণ্ড জ্যাম, তীব্র গরম আর ঘামে শরীরের গ্লুকোজ লেভেল ফল করে আমার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে পড়ে। থেমে থেমে বমি আর শারীরিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েই সারারাত কাটে। পরদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় লিফটেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি। তারপর হাসপাতাল ও চিকিৎসা শেষে বিকেলে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরি। সে এক বীভৎস অভিজ্ঞতা!!
এরপরও বিবস্ত্র সমালোচনা সইতে হচ্ছে আমাকে! একই শহরে থেকেও আমি কেন শুধু একবার গেলাম? মিরপুর-২ থেকে খিলগাঁও এতটা বগলের নিচে হয়েও কেন নিয়মিত গমনাগমন করলাম না? রোগীর আইসিইউ মনিটরের রিডিং আর রোগীর সাথে কথা বলার পর আমার কাছে কিছুটা ভালো বলে মনে হয়েছে, এ ছাড়াও রোগীর সামনে দাঁড়িয়ে আরেকজনের সাথে কথা বলার সময় রোগীকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করার জন্য বলেছিলাম-উনি ভালো আছেন। ব্যস! এখানেও অপরাধ খুঁজে পেলেন আমার ওই আপনজনেরা! একজন আইসিইউ ভর্তি রোগীকে কোন যুক্তিতে আমি ভালো বললাম, এমন অভিযোগেও অভিযুক্ত হলাম!
শুনেছি সময় খারাপ হলে নাকি সাদা কাপড় থেকেও রঙ ওঠে। আমার অবস্থাও তাই হয়েছে। বিভিন্ন কারণেই এযাবৎকালের সবচেয়ে খারাপ সময়গুলো এখন পার করছি আমি! তার সাথে নতুনমাত্রা যোগ করল আপনজনদের এসব অভিযোগ।
অথচ ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর বাসযোগে ঢাকায় ফিরছিলাম। তীব্র গরম ও ঘামে যাত্রাবাড়ীর কাছাকাছি এসে বাসের ভেতরেই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম টিকাটুলি সালাউদ্দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। হায়াত ছিল বলেই সেদিন বেঁচে ফিরে এসেছি। গত দেড় মাস ধরে আবারো অনেকটাই শারীরিক জটিলতার মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ও ধ্রুব সত্য হলো, শুধু আমার পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কোনো আপনজনই একটিবারের জন্যও আমার কোনো খোঁজ নেননি। এবার কিংবা আগেরবার কোনোবারই নয়। এ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ আমি জানি যাদের সময় খারাপ যায়, তাদের কোনো অভিযোগ থাকতে নেই!
কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া


আরো সংবাদ



premium cement
মিয়ানমার নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশ, ভারত, চীনের যেসব হিসাব-নিকাশ সাকিবের বিদায়, ফাইনালে সাব্বির-মোসাদ্দেকের দল প্রধান উপদেষ্টা আজ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভারতে লঞ্চে ধাক্কা নৌবাহিনীর স্পিড বোটের! মৃত ১৩ পণ্যশুল্ক নিয়ে মোদিকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের বিশ্বকাপে মদের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে না সৌদি আরব র‍্যাঙ্কিংয়ে শেখ মেহেদী-হাসান মাহমুদের বড় লাফ রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা আরবি ভাষা শিখলে উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে বিসিএসের আবেদনে চিকিৎসকদের বয়স ৩৪ করা হোক : ড্যাব

সকল