২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সাহসী ছানা

সাহসী ছানা -

নিরিবিলি এক বাগিচা। দাঁড়িয়ে আছে একটি হিজল গাছ। ঠিক ঈশান কোণ বরাবর। খুব বেশি বড় নয়। মাঝারি ধরনের। আশপাশে ঘন ঝোপঝাড়ে ভরা। ঝোপঝাড়ে বাস করে নানা ধরনের পোকামাকড়। সাপ, গুইসাপ। দিনের শেষে পাখিরা এসে রাত ঘুম দেয়। আবার প্রত্যুষে উড়াল দেয়। খাবারের সন্ধানে। হিজল গাছের একটি ডাল ভাঙা। ভাঙা স্থানে সামান্য পচন ধরেছে।
হয়ে গেছে কালো বাদামি রঙের। ওখানে কাঠঠোকরা আসে খাদ্যের সন্ধানে। ক্রমাগত ঠোকর দিতে দিতে জায়গাটি গর্ত হয়ে যায়। এখন আর কাঠঠোকরা আসে না। কোনো একদিন শালিক পাখি বাসার জন্য
বেছে নেয় গর্তটি। প্রয়োজনীয় খড়কুটো দিয়ে তৈরি করে বাসাটি। কিছুদিন পর ডিম দেয় বাসায়। একেক করে তিনটি ডিম পাড়ে শালিক।
পালা করে ডিমে তা দেয় শালিক দম্পতি। দুই আড়াই সপ্তাহ পর ডিম ফুটে বের হয় বাচ্চা। মা বাবার লালন পালনে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে শালিক ছানারা। মা বাবা দু’জনই বাচ্চাদের জন্য খাবার সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ে। ছানারা তখন নিজেদের মধ্যে খেলা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরপর মা বাবা খাবার নিয়ে এলে হইচই শুরু করে দেয়। কে আগে খাবে মা বাবার ঠোঁট থেকে।
এভাবে দিন দিন বড় হচ্ছে ছানাগুলো। একদিন পড়ন্ত বিকেল। চার দিকে নীরব নিঃশব্দ। মা বাবা গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। এখনো আসার নাম গন্ধ নেই। ছানাগুলো হইচই শুরু করছে খাবারের আশায়। কেন মা-বাবা কেউ আসছে না! কোনো বিপদ হলো না তো? ছানাগুলো একে-অপরের দিকে তাকায়। মা বাবা আসার প্রহর গুনছে।
পাশের ঝোপে বাস করে এক দাঁড়াশ সাপ। পেটের ভোগে পেট চিনচিন করছে সাপের। এখনো রাত নামেনি। সাপেরা সাধারণত রাতেই খাবারের সন্ধানে বের হয়। কিন্তু পেট তো মানতে নারাজ আজ। দাঁড়াশ সাপ অনেক
দিন পর্যন্ত ভাবছে কোনো ভালো খাবারের সন্ধানে বের হবে। প্রতিদিন এই ইঁদুর পোকা টোকা খেয়ে মুখের রুচি চলে গেছে। ভাবতে ভাবতে সাপ ঝোপের বাইরে পরিস্থিতি দেখছে এসে। এমন সময় জিহ্বায় অনুভব করছে কোথায় থেকে আওয়াজ আসছে। যেই ভাবা সেই কাজ। ভাবছে এই গাছেই উঠে দেখি কিছু পাই কিনা। ভাবতে ভাবতে পা বাড়াল হিজল গাছের দিকে। উঠতে উঠতে শালিক ছানার আওয়াজ আরো জোরে শোনা যাচ্ছে। সাপ মনে মনে খুশিতে উদ্বেল। তাহলে আজ ভালো কিছু জুটছে খাবার। গর্তের মুখে এসে তো দাঁড়াশ সাপ মহাখুশি। তিনটি ছানায় দেখতে লোভনীয়। লালায়িত মাংসের পিণ্ড। পেটের ভোগও তীব্র। একটা একটা খেয়ে ভোগ নিবারণ করি। ওদিকে শালিক ছানাগুলোও ভোগে হইচই করছে তীব্র। সাপ গর্তের ভেতর মুখ ঢুকিয়ে ছানা একটিকে কামড়ে ধরল। অন্য দু’টি দেখল ওদের একজনকে কেউ আক্রমণ করছে। প্রথমে একটু চুপ থেকে বুঝতে চেষ্টা করলো কী হচ্ছে। দেখছে না বিপদ অনিবার্য। সাপ প্রথম ছানাকে সুবিধা মতো মুখে ঘুরিয়ে গিলবে এখন। এমন সময় অপর ছানা দু’টি একত্রে ঠোঁকর বসিয়ে দিলো সাপের মাথা বরাবর। মুখে খাবার মাথায় আঘাতের যন্ত্রণা। সাপ এখন পেট ভরাবে না জান বাঁচাবে? সাপের এই দোটানা অবস্থা দেখে ছানা দু’টি ক্রমাগত ঠোকর দিয়ে যাচ্ছে। ওরা ভাবছে হয় মরব না হয় মারব। নিরবছিন্ন ঠোকর সাপের চোখেও পড়ল। যন্ত্রণা তীব্রতর হওয়ায় সাপ মুখের খাবার ফেলে দ্রুত গাছ থেকে নিচে পড়ে গেল। এক চোখেও এখন ভালো করে দেখতে পারছে না। মজা করে খেতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনল। এ দিকে মুখে নেয়া ছানাটি একটু আহত হলেও জানে বাঁচল অন্য ভাইদের সাহসী বুদ্ধিমত্তায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো মা শালিক। এসে দেখে ছানাদের ওপর মহাবিপদ। ছানা দু’টি যদি সাহস করে সাপের ওপর আক্রমণ না করত এতক্ষণ তিনজনই দাঁড়াশ সাপের পেটের ভেতর থাকত। সব খুলে বলে মাকে। মা শালিক বুকে জড়িয়ে ধরে আদরের ছানাদের। সাথে প্রশংসাও করে ছানা দু’টির। এমন সাহসিকতা না দেখালে আজকে সবাইকে হারাতে হতো। মা শালিক সান্ত্বনা দিতে দিতে বাবা শালিকও এসে হাজির। মা শালিক সব খুলে বলে বাবা শালিককে। সেই থেকে প্রতিজ্ঞা করল দু’জন একসাথে আর খাবারের সন্ধানে বের হবে না। ছানাদের এমন সাহসের জন্য মা বাবা উভয়ে প্রশংসা করে উৎসাহ দেয়। ভবিষ্যতেও বিপদের সময় যেন হতবুদ্ধি না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement