২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সাদিয়া ও লামইয়ার ছোট্ট দুনিয়া

সাদিয়া ও লামইয়ার ছোট্ট দুনিয়া -

সাদিয়া ও লামইয়া দুই বোন। সাদিয়া বড়, বয়স ১২; আর লামইয়ার বয়স ছয়। ওদের গ্রামের নামটি খুব চমৎকার সুন্দর- ছোট শরীফপুর। ওরা থাকে গ্রামের এক ছোট্ট সুন্দর বাড়িতে। বাড়ির চার পাশে রয়েছে ফুলের বাগান, বাঁশঝাড়, আর পাখির ডাকে মুখর এক পুকুরপাড়। এই দুই বোনের কাছে এই ছোট্ট গ্রামটাই হলো তাদের রঙিন স্বপ্নের দুনিয়া।
একদিন দুপুরে, মা বললেন, ‘তোমরা একটু বাইরে গিয়ে খেলা করো। আমি রান্না করছি, বাবা এসেই পড়বেন।’ কথা শুনেই দুই বোন দৌড়ে চলে গেল বাগানের দিকে। ওদের বাগানে গোলাপ, গাঁদা আর জবাফুল ফুটে আছে, আর বাগানপাড়ে কিছু তিতির পাখি ডাকছে।
সাদিয়া বলল, ‘লামইয়া, চলো আমরা আজ একটা নতুন অভিযান শুরু করি। তুমি কি জানো, আমাদের বাগানে একটা ছোট্ট পরীর বাসা আছে?’ লামইয়ার চোখ গোল হয়ে গেল। ‘সত্যি সাদিয়া আপু? কোথায় বাসা?’ সাদিয়া মুচকি হেসে বলল, ‘তুমি যদি খুব ভালোভাবে খুঁজো, তাহলে পেয়ে যাবে।’
এ কথা শুনে লামইয়া একদম মনোযোগ দিয়ে খুঁজতে শুরু করল। ফুলের গাছগুলোর মধ্যে, পুকুরপাড়ে, এমনকি ঝোপের ভেতরেও ঢুঁ মারল, কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পেল না। একটু মন খারাপ হলো তার। ‘সাদিয়া আপু, আমি কোথাও দেখতে পাচ্ছি না!’ বলল সে।
সাদিয়া হাসতে হাসতে বলল, ‘তুমি ভালো করে খুঁজেছ তো? একটু মনোযোগ দিয়ে দেখো। পরীরা খুব ছোট হয়, তাই সহজে চোখে পড়ে না। আর জানো, ওরা ফুলের মধু খায়!’ এটা শুনে লামইয়ার মুখে আবার হাসি ফুটল। এবার সে ফুলের গন্ধ নিতে নিতে খুঁজতে লাগল।
হঠাৎই সে একটা তিতির পাখির ছানা দেখে থমকে গেল। ছানাটা মাটির ওপর পড়ে ছিল, আর কিছুতেই উড়তে পারছিল না। লামইয়া দ্রুত সাদিয়াকে ডেকে বলল, ‘দেখো সাদিয়া আপু! এটা পরী না হলেও মিষ্টি একটা পাখি!’ সাদিয়া ছানাটাকে দেখে দুঃখ পেল। সে লামইয়াকে বলল, ‘চলো, আমরা পাখিটাকে তুলে নিয়ে যাই এবং যতœ করি।’
ওরা দুই বোন মিলে পাখির ছানাটাকে নিজের ছোট্ট হাত দিয়ে খুব সাবধানে তুলে নিয়ে গেল বাড়িতে। মা ছানাটাকে দেখে একটু মুচকি হেসে বললেন, ‘দেখো, ওকে নিয়ে তোমরা খুব হইচই করো না। পাখিরা ভয় পেলে অসুস্থ হয়ে যায়।’ সাদিয়া ও লামইয়া খুব মনোযোগ দিয়ে মায়ের কথা শুনল। তারা ঠিক করল, ছানাটাকে ওরা যতœ করবে, খাবার দেবে আর ভালোভাবে বড় করবে।
দিনগুলো কেটে যেতে লাগল। দুই বোন পাখির ছানাটাকে রোজ একটু একটু করে খাবার খাওয়াতো। ওরা নামও দিয়েছিল তার, ‘মিঠু।’ মিঠু একটু একটু করে বড় হচ্ছিল, আর ওদের সাথে খেলতেও শুরু করেছিল। ওরা মিঠুকে নিয়ে কত গল্প করত! সাদিয়া বলত, ‘মিঠু আমাদের বাগানের পাহারাদার হবে।’ আর লামইয়া বলত, ‘না, মিঠু আমার বন্ধু।’ একদিন বিকেলে মিঠু তাদের উঠোনে একটু একটু করে ডানা ঝাপটাতে শুরু করল। লামইয়া আনন্দে চিৎকার করে উঠল, ‘দেখো আপু, মিঠু উড়তে শিখছে!’ দুই বোন দৌড়ে মায়ের কাছে গেল এই সুখবর দিতে। মা বললেন, ‘হ্যাঁ, মিঠু এখন উড়তে শিখছে। একদিন ওকে নিজের বাসায় ছেড়ে দিতে হবে।’
এই কথায় ওদের দুজনের মন খারাপ হলো। লামইয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘কিন্তু আমি মিঠুকে ছেড়ে দিতে চাই না, মা।’ মা সান্ত¡না দিয়ে বললেন, ‘আমরা তো মিঠুর যতœ করেছিলাম যাতে সে বড় হতে পারে। পাখিদের জায়গা আকাশে, ওকে ফিরে যেতে দাও।’
সেদিন সন্ধ্যায়, সাদিয়া আর লামইয়া মিঠুকে নিয়ে বাগানে গেল। অনেক আদর করে বলল, ‘তুমি বড় হয়ে গেছ মিঠু, এবার তুমি উড়ে যাও। কিন্তু আমাদের ভুলবে না, ঠিক আছে?’ মিঠু যেন বুঝতে পারল। সে ওদের চার পাশে একটু চক্কর দিলো আর তারপর ডানা মেলে আকাশে উড়াল দিলো।
মিঠুকে ছেড়ে দেওয়ার পর দুই বোন কিছুটা মনখারাপ করেছিল, তবে তারা জানত, তাদের ছোট্ট দুনিয়ায় নতুন কোনো বন্ধু আবার আসবে। তারা আবার মজার অভিযান করবে, নতুন বন্ধুর সাথে রঙিন দিন কাটাবে।
সেদিন রাতের আকাশে অনেক তারা ফুটেছিল। সাদিয়া ও লামইয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে পরস্পরের হাতে হাত রেখে বলল, ‘আমাদের ছোট্ট দুনিয়া কখনো ফাঁকা হবে না, কারণ আমরা একসাথে আছি। সারাটি জীবন এক সাথেই থাকব। কখনো আলাদা হবো না।’


আরো সংবাদ



premium cement
জুলাই বিপ্লবে আহত বাবুকে নেয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড সৈন্যের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে রাশিয়া! প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত

সকল