নজরুলের স্বদেশ ভাবনা : অনন্য নজরুল
- প্রফেসর ড. আনোয়ারুল করীম
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নজরুলের স্বদেশ ভাবনা তাঁর রচিত প্রবন্ধ, কাব্য ও গানেই বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ কারণে বিষেরবাঁশী, ভাঙার গান, প্রলয়শিখা, চন্দ্রবিন্দু, এই চারটি কাব্য গ্রন্থের সঙ্গে যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত হয়
নজরুলের স্বদেশ ভাবনা বা প্রেম কেবলমাত্র বাংলাকে নিয়েই গড়ে ওঠেনি পুরো ভারতবর্ষই তখন তাঁর স্বদেশপ্রেমের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে তিনি পুরো ভারতবর্ষের মুক্তির এক দুর্বার আন্দোলনের পথিকৃৎ হয়ে উঠলেন। পুরো ভারতবর্ষে ইংরেজ অত্যাচার এবং আধিপত্যবাদকে ‘ভগবান’ সাজিয়ে তার বুকে পদচিহ্ন এঁকে দেয়ার মতো এক অদম্য এবং অসাধারণ দুঃসাহস তাঁর পূর্বে অন্য কোনো কবিতো দূরের কথা, ভারতের কোনো রাজনীতিবিদ বা দেশপ্রেমী সন্ত্রাসীরাও দেখাতে পারেননি। এই কবিতার ভাব ও ভাষা, উপমা ও উৎপ্রেক্ষা এ যাবৎকালের কোমল পেলব এবং কুসুমিত কাব্য লালিত্যকে ছিন্ন ভিন্ন করে পৌরুষ এবং শৈর্যের এক অমিত দুর্বার শক্তিতে পরিণত করল। হিন্দু ও মুসলমানের ধর্মীয় ভাষা যা এতদিন কেবলমাত্র আত্ননিবেদনের ভাষা হয়ে ছিল, নজরুলের হাতে সে ভাষা এমন শক্তির প্রকাশ ঘটালো যে বাঙালী মাত্রেই তা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। ইংরেজীতে যাকে বলা যেতে পারে Spell bound হয়ে যাওয়া, এ যাবৎকালে সাহিত্যের ভাষাকে এক নিমিষে পাল্টে দিয়ে তদস্থলে যৌবনদীপ্ত এক অভিনব ভাষা সাহিত্যের সৃষ্টি হ’ল সৈনিক কবি নজরুলের হাতে।
অবশ্য ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশের আগেই নজরুল তাঁর কাব্য সাহিত্যে যে নূতন ভাবধারা ও বাক্যবিন্যাসের পাশাপাশি ধর্মীয় ভাষাকেও নিত্য দিনের কাব্যিক ভাষায় পরিণত করলেন-- তাঁর প্রতি অকৃত্রিম সাধুবাদ জানিয়ে কবি মোহিতলাল নজরুলকে বরণ করে নিলেন। তিনি আবেগ আপুত হয়ে লিখলেনঃ ‘কাজী সাহেবের কবিতায় কি দেখিলাম বলিব? বাংলা কাব্যের যে অধুনাতন ছন্দ ঝঙ্কার ও ধ্বনি চিত্রে এককালে মুগ্ধ হইয়াছিলাম, কিন্তু অবশেষ নিরতিশয় পীড়িত হইয়া যে সুন্দরী মিথ্যা রূপিনীর উপর বিরক্ত হইয়েছি, কাজী সাহেবের কবিতা পড়িয়া সেই ছন্দ ঝঙ্কারে আবার আস্থা হইয়াছে। যে ছন্দ কবিতায় শব্দার্থময়ী কন্ঠ ভারতীয় ভূষণ না হইয়া প্রাণের আকুতি ও হৃদয় স্পন্দনের সহচর না হইয়া ইদানিং কেবলমাত্র শ্রবণ প্রীতিকর প্রাণহীন চারুচাতুরীতে পর্যবসিত হইয়াছে। সেই ছন্দ এই নবীন কবির কবিতায় তাহার হৃদয় নিহিত ভাবের সহিত সুর মিলাইয়া মানবকন্ঠের স্বর সপ্তকের সেবক হইয়াছে। কাজী সাহেবের ছন্দ তাঁর স্বতঃ উৎসারিত ভাব কলোলিনীর অবশ্যম্ভাবী গমনভঙ্গী। ............... ছন্দকে রক্ষা করিয়া তাহারা মধ্যে এই যে একটি অবলীলা, স্বাধীন স্ফুর্তি অবাধ আবেগ, কবি কোথায়ও তাহাকে হারাইয়া বসেন নাই, ছন্দ যেন ভাবের দাসত্ব করিতেছে কোনখানে আপন অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে নাই। এই প্রকৃত কবিশক্তিই পাঠককে মুগ্ধ করে।
কবিতা আবৃত্তি করলেই বোঝা যায় যে শব্দ ও অর্থগত ভাবের সুর, কোনখানে ছন্দের বাঁধনে ব্যাহত হয় নাই। বিস্ময়, ভয়, ভক্তি সাহস, অটল বিশ্বাস এবং সর্বোপরি প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত একটা ভীষণ গম্ভীর অতি প্রাকৃত কল্পনার সুর, শব্দ বিন্যাস ও ছন্দ ঝঙ্কারে মূর্তি ধরিয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে।’’
নজরুলের এই বিস্ময়কর প্রতিভার এক অসাধারণ স্বীকৃতি প্রদান করলেন মোহিতলাল। বস্তুত, নজরুল প্রতিভার উদ্ভব এবং বিকাশ ঘটেছিল তাঁর আজন্ম লালিত দেশপ্রেম ও ইংরেজদের হাত থেকে ভারত মুক্তির তীব্র আকাক্ষার কারণে।
শিশির কর লিখলেন ঃ ‘বিদ্রোহী’ কি কবিতা? না আগুনের গোলা? ............. বিদ্রোহীর সেই আগুন ঝরা লাইনগুলিঃ
মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হবো শান্ত
যবে উৎপাড়িতের ক্রন্দন রোল
আকাশে বাতাশে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভুমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হবো শান্ত।’
বাঙালীর শিরায় শিরায় যেন বয়ে গেল তরল অনল।’’
মাত্র একুশ বছর বয়সে এক অসাধারণ কবিতা লিখলেন নজরুল। চোখের সামনে অত্যাচার এবং লুন্ঠনের প্রতীক বৃটিশরাজ এবং তাদের পদলেহনকারী একশ্রেণীর ভারতীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা ভারতবর্ষের সম্পদ এবং ঐশ্বর্য লুন্ঠনে বৃটিশরাজের সহায়তাকারী, অতঃপর বৃটিশ রাজকর্তৃক রায়বাহাদুর, খান বাহাদুর, জমিদার এবং ভূস্বামী হয়ে সরকারের তাবেদার। এরা দুশো বছর ধরে ভারতবর্ষে বৃটিশরাজকে এদেশে অমানবিক শাসন এবং শোষণের দোসর করেছে।
এসময়ে নজরুলের স্বদেশ তখন কেবল মাত্র বাংলাদেশ নয়, গোটা ভারতবর্ষ এবং এদেশের নিগৃহীত, শোষিত মানব সমাজ। সাম্যবাদী ভাবধারাপুষ্ট হয়ে নজরুল শ্রেণী শত্রুদের বিরুদ্ধে কলম ধরে ছিলেন। তাঁর ‘সর্বহারা’ ‘সাম্যবাদী’ ইত্যাদি কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ ছিল জোতদার, জমিদার ও ধর্মের নামে শোষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহবান।
‘বিদ্রোহী’ কবিতা সেদিন গোটা বাঙালী তরুণ সমাজকে কী ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল তার একটি বিবরণ পাওয়া যায় নজরুলের ঘনিষ্ট বন্ধু পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি লেখায়ঃ ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি একসঙ্গে ‘মোসলেমভারত’ ও ‘বিজলী’তে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নজরুলের খ্যাতিতে বাঙালী সমাজ একেবারে টগবগ করে উঠল। তরুণ সমাজ তো বিদ্রোহীর ভাষায় বাক্যালাপ শুরু করে দিল। সকলের মধ্যে সেই মনোভাব, ‘আপনারে ছাড়া কাহারে করি না কুর্নিশ।’ এই সুর ধরে পরিমল গোস্বামী বললেন ঃ ‘‘........... অত্যাচারীর বিরুদ্ধে এমন ভাষায় আর কোন বাঙালী কবি চ্যালেঞ্জ জানান নি।
সমাজের উৎপীড়নে এমন শপথ আর কারো মুখে তো শুনিনি। Must fight to the finish মন্ত্রে দীক্ষিত আর কোনো বাঙালি কবি শত্রুপক্ষকে এমন আহ্বান জানান নি।’
শিশির কর লিখলেন : ‘রাজশক্তি স্বভাবতই সচকিত হয়ে উঠল। সবরকম অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে কে এমনভাবে গর্জে উঠেছে? বিদ্রোহীর লেখক কে? রক্তচক্ষু সরকারি আমলারা বেসামাল। আমলাদের সঙ্গে গোয়েন্দারা সরকারি আইনবিশারদরা তৎপর হয়ে উঠলেন।’ আমলাদের সে দিনের সেই করুণ অবস্থার কথা লিখলেন কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, তার ‘জ্যৈষ্ঠের ঝড়’ গ্রন্থে।
‘এ কবিতায় হিন্দু-মুসলমান দু’জনেরই এত পুরাণ প্রসঙ্গে ঢুকেছে যে ব্রিটিশ সরকার সরাসরি একে রাজদ্রোহ বলে চিহ্নিত করতে পারল না। কখনো ঈশান বিষাণের ওঙ্কার বাজছে, কখনো বা ইস্রাফিলের শিঙ্গা থেকে উঠছে রণহুঙ্কার। কখনো বা হাতে নিয়েছে মহাদেবের ডমরু ত্রিশূল, কখনো বা অর্ফিয়াসের বাঁশি। কখনো বাসুকীর ফণা জাপটে ধরেছে। কখনো বা জিব্রাইলের আগুনের পাখা, কখনো চড়েছে তাজি বোররাকে পক্ষীরাজ ঘোড়া, কখোনো বা ‘উচ্চেয়ঃ শ্রবায়।’
নজরুল তার স্বদেশ ভাবনায় বস্তুত, গোটা ভারতবর্ষকে দেখেছিলেন। দেখেছিলেন, কত অসহায় তার স্বদেশ। নেতৃবৃন্দের স্বার্থপরতায় দেশের স্বাধীনতা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নেতৃবৃন্দের একটি বড় অংশ স্বায়ত্ত শাসন এবং ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের মতো স্বরাজ পেতে আগ্রহী ছিলেন। এসব নেতৃবৃন্দকে কটাক্ষ করে সাপ্তাহিক সওগাতের ‘চানাচুর’ বিভাগে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসকে ‘ডোমনী স্টেটাস’ বলে নজরুল ব্যঙ্গ লিখলেন :
“ভারতমাতা একদিন পদদলিতা দাসী ছিলেন। শুনছি তাঁর পুত্রদের সেবায় পরিতুষ্ট হয়ে তাঁর প্রভু তাঁর হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে ‘ডোমনী স্টেটাস’ (Dominion Status) তমকা পরিয়ে দেবেন। ভারতমাতা বল-দ (বলদানকারী) পুত্রদের মধ্যে এই নিয়ে এরই মধ্যে মোচ্ছবের ‘ধূম লেগে গেছে। চারিদিকে জয়ধ্বনি উঠছে ‘মা ডোমনী হবেন রে, মা ডোমনী হবেন!”
মায়ের এর অবস্থা মায়েই জানেন। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে, তিনি বোধ হয় মনে মনে বলছেন, ‘এদের আঁতুড় ঘরেই নুন খাইয়ে মারিনি কেন?’ পরিশেষে, এই নেতৃবৃন্দকে ‘অপদার্থ’ বলে উল্লেখ করে নজরুল বললেন :
‘ডোমনীর ছেলেই বুঝিবা! হাতে যা বড় বড় ধামা।’ আমাদের বুঝে নিতে কষ্ট হয় না নজরুল কত দুঃখে পড়ে ভারতের নেতৃবৃন্দের প্রতি এই ব্যঙ্গরসের উল্লেখ করলেন। এমনতরো নানা ব্যঙ্গরসে নেতাদের ব্যর্থতাকে নজরুল অনেক গল্পেও উল্লেখ করেছেন। নজরুল ছিলেন একমাত্র বাঙালী কবি যিনি অখণ্ড ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। যদি ইকবালকে পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা কবি বলা হয়, তবে নজরুলকে অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা কবি বলতে হবে। তিনি সমগ্র ভারতের মধ্যে একমাত্র কবি, যার ১০টি গ্রন্থ সরকার বাজেয়াপ্ত করতে চেয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচটি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়েছে। ভারতের অন্য কোনো কবি ও সাহিত্যিকের এত গ্রন্থ কখনো বাজেয়াপ্ত হয়নি। বলতে কী, ভারত সরকার নজরুলকে ভয় করেছে এবং তার লেখার প্রচার ও প্রসার নিষিদ্ধ করতে চেয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নজরুল তার সম্পাদিত সংবাদপত্র ‘ধূমকেতু’ ও দৈনিক ‘নবযুগে’ ভারতের স্বাধীনতার কথা যেমন দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলেছেন, তেমনি তার কবিতায় ও গানে সেই একই ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তার আগে উর্দু কবি ফজলুল হাসান হসরত মোহানী কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের অধিবেশনে ভারতের স্বাধীনতার প্রস্তাব করায় তাকে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। নজরুল ব্রিটিশরাজের জুলুমকে ভয় না করে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে সাধুবাদ জানিয়ে আশীর্বাদ করে লেখেন :
আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু
আঁধারে বাঁধ সন্নিকেতু
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!
অলক্ষণের তিলক রেখা
রাতের ভালে হোক না লেখা
জানিয়ে দেরে চমক মেরে
আছে যারা অর্ধচেতন!
নজরুলের ‘ধূমকেতু’ পত্রিকাকে স্বাগত জানিয়ে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগস্ট দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকায় লেখা হয় “We cordially welcome the advent of our new Bangali contemporary, The ‘Dhumketu’ a bi weekly edited by Habilder Kazi Nazrul Islam published from 32, College street, Calcutta. The editor has already made his mark as a powerful poet and some of his recent poems, particularly the ‘Bidrohi’ are among the most wellknown in the Bengali literature. The articles from the editorial pen in the ‘Dhumketu’ fully sustain the reputation of the soldier poet and the collections he has been able to make one in tune with the fine and energy of his own writing. There is something novel, something enthralling in his new venture. We hope, the Dhumketu, or comet will not simply be an emblem of distribution in the hands of the soldier poet but will create something that is beautiful something that is abiding and holy.
নিঃসন্দেহে, অমৃতবাজার পত্রিকায় এই শুভকামনাকে ধারণ করে ‘ধূমকেতু’ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য স্থায়ী ও পবিত্র কর্মকাণ্ডকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছিল। বস্তুত, অমৃতবাজার পত্রিকা সে দিন সৈনিক ও কবি নজরুলকে সাংবাদিক জগতের ‘অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র’ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট (১ ভাদ্র) নজরুল ধূমকেতু পত্রিকায় লেখেন : ‘‘সর্বপ্রথম ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। স্বরাজ টরাজ বুঝি না, কেননা ও কথাটার মানে এক মহারথী এক এক রকম করে দেখে থাকেন। ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীন থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষা, শাসনভার, সমস্ত থাকবে ভারতীয়ের হাতে। তাতে কোনো বিদেশীর মোড়লী করবার অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না। যাঁরা এখন রাজা বা শাসক হয়ে এ দেশে মোড়লী করে দেশকে শাসন ভূমিতে পরিণত করেছেন, তাদের পাততাড়ি গুটিয়ে, বোঁচকা পুঁটলি বেঁধে সাগর পাড়ি দিতে হবে। প্রার্থনা বা আবেদন করলে তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের অতটুকু সুবুদ্ধি হয়নি এখনো। আমাদের এই প্রার্থনা করার, ভিক্ষা করার কুবুদ্ধিটুকু দূর করতে হবে। পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে, সকল কিছু নিয়ম-কানুন বাঁধন শৃঙ্খল মানা নিষেধের বিরুদ্ধে।’’
আমরা দেখেছি স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য নজরুল জীবন বাজি রেখে ‘ধূমকেতু’ প্রকাশ করেছেন। ‘ধূমকেতু’ অষ্টম সংখ্যা (২৬ ভাদ্র, ১৩২৯ সাল) নজরুল ‘বিষবাণী’ প্রবন্ধে লেখেন : মা ভৈঃ মা ভৈঃ ! ভয় নাই, ভয় নাই ওগো আমার বিষমুখ অগ্নি নাগ নাগিনী পুঞ্জুত! দোলা দাও, দোলা দাও তোমাদের কুটিল ফনায়ে ফনায়। তোমাদের যুগ যুগ সঞ্চিত কালো বিষ আপন আপন সর্বাঙ্গে জড়িয়ে ফেল! তোমাদের বিভূতিবরণ অঙ্গ কাঁচা বিষের গাঢ় সবুজরাগে রেঙে উঠুক। বিষ সঞ্চয় করো হে আমার তিক্তচিত ভুজঙ্গ তরুণ দল! তোমাদের ধরবে কে? মারবে কে ?’’
‘ধূমকেতু’র ১৯ সংখ্যায় (১৭ কার্তিক ১৩২৯) নজরুল ঘুমন্ত জাতিকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অকুতোভয় চিত্তে জেগে উঠতে আহ্বান জানালেন। ‘‘ওঠ ওগো আমার নির্জীব ঘুমন্ত পতাকাবাহী বীর সৈনিকদল। ওঠ, তোমাদের ডাক পড়েছে, রণ দুন্দভি রণভেরী বেজে উঠেছে। তোমার বিজয় নিশান তুলে ধর। উড়িয়ে দাও উঁচু করে। তুলে দাও যাতে সে নিশান আকাশ ভেদ করে ওঠে। পুড়িয়ে ফেল ঐ প্রাসাদের উপর যে নিশান বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে তোমাদের উপর প্রভুত্ব ঘোষণা করছে। ...
আমাদের বিজয় পতাকা তুলে ধরবার জন্য এসো সৈনিক। পতাকার রঙ হবে লাল, তাকে রঙ করতে হবে খুন দিয়ে। বল আমরা পেছাব না। বল আমরা হিংস্র শাবক আমারা খুন দেখে ভয় করি না। আমরা খুন নিয়ে খেলা করি, খুন নিয়ে কাপড় ছেপই, খুন নিয়ে নিশান রাঙায় .........।’
‘ধূমকেতু’র ২০ সংখ্যায় (২১ কার্তিক ১৩২৯) নজরুল সম্পাদকীয় প্রবন্ধে লেখেন : ‘ভিক্ষা দাও! ওগো পুরবাসী ভিক্ষা দাও। আমাদের এমন একটা ছেলে দাও যে বলতে পারে, আমি ঘরের নই, পরের। আমি আমার নই, দেশের।................. তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ নাই যে বলতে পারে, আমি আছি। সব মরে গেলেও আমি বেঁচে আছি। যতক্ষণ রক্তধারা বয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তা দেশের জন্য, তাও করবো। ওগো তরুণ ভিক্ষা দাও, তোমার কাঁচা প্রাণ ভিক্ষা দাও।‘‘
এসব দেখে শুনে বেশ বুঝা যায় দেশের জন্য তার আবেগ কত গভীর ও প্রাণস্পর্শী ছিল। নজরুল সাংবাদিক হিসেবে একটি ঘুমন্ত জাতিকে জাগাতে চেষ্টা করেছেন। তার সাংবাদিকের ভাষা ছিল কাব্যময়। কারণ তা মনের গভীর রেখাপাত করে যায়। নজরুল চেয়েছিলেন শুধু আনন্দ। সে তার অন্তরের ভিতর থকে স্বতঃউৎসারিত পরমানন্দ। টাকা নয়, পয়সা নয়, ক্ষুধার অন্ন নয়, পার্থিক কোনো সম্পদ নয়, সুরসুন্দরের কাছে থেকে সে আনন্দ তার আপনিই আসে। সেই আনন্দে সে দিন-রাত মশগুল হয়ে থাকে।
‘আপন গন্ধে ফিরি মাতোয়ারা কস্তুরীমৃগ সম!’
কবিতায়ও তিনি আগুনকেই পুঁজি করেছেন। ফলে তাঁর ভাষা হয়েছে অগ্নিময় কাব্য। সুর হয়েছে অগ্নিবীণা। এখানে মেধার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন চড়া গলার। একটি ঘুমন্ত জাতিকে জাগাবার জন্যে চড়াগলার গান, কবিতার প্রয়োজন।
নজরুলের স্বদেশ ভাবনা তাঁর রচিত প্রবন্ধ, কাব্য ও গানেই বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ কারণে বিষেরবাঁশী, ভাঙার গান, প্রলয়শিখা, চন্দ্রবিন্দু, এই চারটি কাব্য গ্রন্থের সঙ্গে যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত হয়। এ ছাড়া আরও পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ সরকারের রোষানালে পড়ে এবং সেগুলো নিষিদ্ধ করার সুপারিশও করা হয়। এতদসত্ত্বেও সেগুলো শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয় নি। তবে এই গ্রন্থগুলির যেন প্রচার ও প্রসার না হয়, সে জন্য সরকারের গোয়েন্দা ও পুলিশ বিভাগ তৎপর ছিল। এই কাব্যগ্রন্থগুলি হলো অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, ফণিমনসা, সর্বহারা, এবং রুদ্রমঙ্গল। একজন কবির এতগুলো কাব্যগ্রন্থের উপর সরকারের এই আক্রোশ অচিন্তনীয়। দেশের জন্য নজরুলকে কারাবরণ করতে হয়েছে। ভারতের অন্যকোনো কবিকে তা করতে হয়নি। রাজশক্তিকে নজরুল তীব্রভাবে কষাঘাত করেছেন।
নজরুলের কারাবরণের সংবাদে দুই বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। অন্য কোনো কবির বেলায় কখনও তা দেখা যায় নি। এ থেকে বোঝা যায় যে নজরুল তাঁর সমকালে সারা দেশে কত জনপ্রিয় ছিলেন। নজরুল তাঁর স্বদেশের মুক্তির জন্য কি ভাবতেন তার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’তে। এই জবানবন্দীটি ১৩২৯ (১৯২৩) সালের ১৩ মাঘ ‘ধূমকেতু’ পত্রিকাতে ছাপা হয়। এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে তা তুলে দিচ্ছি। ‘‘আমার উপর অভিযোগ,আমি রাজ বিদ্রোহী। তাই আমি রাজকারাগারে বন্দী ও রাজদ্বারে অভিযুক্ত। একধারে রাজার মুকুট, আর ধারে ধূমকেতুর শিখা; একজন রাজা, হাতে রাজদণ্ড, আর একজন সত্য, হাতে ন্যায়দণ্ড।
‘‘রাজার পক্ষে রাজার নিযুক্ত রাজবেতন ভোগী রাজকর্মচারী। আমার পক্ষে সকল রাজার রাজা, সকল বিচারকের বিচারক, আদি অনন্তকাল ধরে সত্য জাগ্রত ভগবান। আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা, সে বাণী রাজ বিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে। কিন্তু ন্যায়ের বিচারে সে বাণী রাজদ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়।------”
‘‘আজ ভারত পরাধীন, তার অধিবাসীবৃন্দ দাস। কিন্তু দাসকে দাস বল্লে, অন্যায়কে অন্যায় বল্লে এ রাজত্বে তা হবে রাজদ্রোহ। এটা ন্যায়ের শাসন হ’তে পারে না। এই জোর করে সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে ন্যায়, দিনকে রাত বানানো একি সত্য সহ্য করতে পারে? এতদিন হয়েছিল, হয়ত সত্য উদাসীন ছিল বলে। কিন্তু আজ সত্য জেগেছে, তা চক্ষুষ্মান জাগ্রত আত্মামাত্রই বিশেষরূপে জানতে পেরেছে। এই অন্যায় শাসনক্লিষ্ট বন্দী সত্যের পীড়িত ক্রন্দন আমার কন্ঠে ফুটে উঠেছিল বলেই কি আমি রাজদ্রোহী! -এ ক্রন্দন কি আমার? না এ আমার কন্ঠে ঐ উৎপীড়িত নিখিল নীরব ক্রন্দসীর সম্মিলিত সরব প্রকাশ? আমি জানি, আমার কন্ঠের ঐ প্রলয় হুঙ্কার একা আমার নয়, সে যে নিখিল আত্মার যন্ত্রণা চিৎকার। আমায় ভয় দেখিয়ে মেরে এ ক্রন্দন থামানো যাবে না। হঠাৎ কখন আমার কন্ঠের এই হারাবাণীই তাদের আরেক জনের কন্ঠে গর্জন করে উঠবে।’’
রাজবন্দী হিসেবে এই জবানবন্দী নিঃসন্দেহে অসাধারণ। পৃথিবীর ইতিহাসে দেশের জন্য, জাতির জন্য এমনভাবে কোনো কবি সাহিত্যিককে কারাবরণ করতে হয় নি এবং তাঁর বইও নিষিদ্ধ হয়নি। এমন অসাধারণ জবানবন্দী কোন কবিও কিন্তু দেন নি। এটি একটা অনুপম সাহিত্য শুধু নয়, বলা যেতে পারে জীবন থেকে নেওয়া এক মহাগদ্য-কাব্য। পুরো জবানবন্দী এখানে দেওয়া সম্ভব হ’ল না। উৎসাহী পাঠককে তা পড়বার অনুরোধ জানাই। এই রাজবন্দীর জবানবন্দী থেকে এটা স্পষ্ট যে নজরুলের সমস্ত কাব্য ও সাহিত্য ভাবনা ছিল ব্রিটিশরাজ থেকে দেশকে মুক্ত করা। নজরুল গান্ধীর জন্য চরকার গান লিখেছেন, কিন্তু গান্ধীর স্বাধীনতা সম্পর্কীয় রাজনীতির সংগে তিনি যুক্ত ছিলেন না।
নজরুল কারাবরণ করে আমরণ অনশন শুরু করলে রবীন্দ্রনাথ, দেশবন্ধ চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথ তো সরাসরি টেলিগ্রাম করলেন। লিখলেন, এরাব Give up Hunger strike Our literature claims you. তিনি তাঁর ‘বসন্ত’ নাটকটিও নজরুলকে উৎসর্গ করলেন।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে নজরুল হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য চেয়েছেন। বাংলা এবং ভারতে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-মুসলিম দাংগা বাঁধলে নজরুল তাঁর অবিস্মরণীয় গান ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ লিখলেন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নজরুলকে দেওয়া জাতীয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শতমুখে জানিয়ে দিলেন,’’ নজরুলকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়-এটা সত্য কথা। তাঁর অন্তরটা যে বিদ্রোহী, তা স্পষ্ট বুঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে যাব তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনও তাঁর গান গাইব। আমি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সর্বদাই ঘুরে বেড়াই, বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত শুনবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু নজরুলের, দুর্গম গিরি কান্তার মরু’র মতো প্রাণমাতানো গান কখনও শুনেছি বলে মনে হয় না। কবি নজরুল যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেটা শুধু নিজের স্বপ্ন নয় সমগ্র বাঙালী জাতির।’
এই অনুষ্ঠানেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ঘোষণা দিলেন, ‘নজরুল একজন জীবন্ত মানুষ।’ সংগীত শিল্পী দিলীপ কুমার রায় বলেছেন, নজরুল যখন ‘দুর্গম গিরি’ গানটি গাইতো তখন দেশবন্ধু চিত্তঞ্জন দাশ আকুল হয়ে উঠেছেন। তঁাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতো। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু দারুণভাবে উজ্জীবত হতেন’। নজরুলের স্বদেশ ভাবনা সম্পর্কে লিখতে গেলে কয়েক হাজার পৃষ্ঠায় তা শেষ হবে না। এত সংক্ষিপ্ত পরিসরে তা শেষও করা যায় না। তাঁর গ্রন্থগুলো কেন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল তা জানলেই নজরুলের দেশপ্রেম সমন্ধে জানা আর বাকি থাকে না।
নজরুল বলেছেন, সাহিত্য অসাম্প্রদায়িক। এখানে হিন্দু-মুসলমান কোন ভেদাভেদ নেই। ধর্মের ভাষা যে কত শক্তিশালী হতে পারে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা সহ অন্যান্য কবিতা ও সাহিত্যে তার পরিচয় রয়েছে। একথা বলা তাই অত্যুক্তি হবে না যে নজরুলই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এক ঘেয়েমী থেকে সরিয়ে এনে তাকে গতিময় ও সমৃদ্ধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে আধুনিক বিপ্লবী বাংলা ভাষা’র ‘জনক’ বললে বোধকরি বেশি বলা হবে না। ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তাঁর মধ্যে এক অসাধারণ দেশপ্রেম লক্ষ্য করা যায়। জীবনে হিন্দু-মুসলমানকে তিনি শত চেষ্টা করেও মেলাতে পারেন নি। কিন্তু সাহিত্যে, গানে তা পেরেছেন।
১৩৪৯ সনে ৩ বৈশাখ ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধে নজরুল বাংলা ও বাঙালী সম্পর্কে যা বলেছেন তা অতুলনীয়। এ দেশে হিন্দুরাই আজীবন কাল নিজেদেরকে ‘বাঙালী’ হিসেবে দাবি করে আসছে। বাঙালী মুসলমানদের তারা বহিরাগত বলে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, আর্যসম্প্রদায় এবং বহিরাগত মুসলমানদের আর্বিভাবের পূর্বে তারা ‘অনার্য’ নামে একটি জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। আর্যদের আগমণের পর তাদের ধর্মগ্রহণ করে এই অনার্যেরা ‘বাঙালী’ হয়ে পড়ল, আর মুসলমানদের আগমণে তাদের ধর্ম গ্রহণ করে এই অনার্যরাই হ’ল অবাঙালী।
এই হিন্দুরা ভুলে গেল যে আর্য ধর্মাবল্বী সেন রাজারা বাংলা ভাষার চর্চাকে নিষিদ্ধ করে সংস্কৃতকে রাজভাষা করেছিল। ঘোষণা দিয়েছিল যে যারা বাংলাভাষা চর্চা করবে তাদেরকে রৌরব নামক নরকে নিক্ষেপ করা হবে। আজ ‘চর্যাগীতিকা’ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হতে পেরেছে, বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ গোপনে তাদের এই বাংলাভাষা চর্চা করেছেন বলে।
অপর দিকে তুর্কিয়ে দেশ থেকে আগত মুসলমানেরা বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করে ‘বাঙলা ও বাঙালী’ উভয়কে যে সম্মানজনক স্থান দিলেন তাঁদেরকে এ দেশের আর্য হিন্দু সম্প্রদায় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু তারা তা পারলো না। এরাও এদেশে থেকে বাঙালী মুসলমান হলো। নজরুলই সর্বপ্রথম বাঙালীর এই উত্তরণ ঘটিয়েছেন। নজরুল বললেন, ‘বাঙালী যে দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে ‘বাঙালীর বাংলা’। সে দিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।’
বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমানের মিলিত শক্তি স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করে এই অসাধ্য কাজটিই করেছে। তাই নজরুল শুধু যে অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তা নয় বোধকরি, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশেরও স্বাপ্নিক কবি ছিলেন।
নজরুল বললেন, বাঙালীকে, বাংলার ছেলে মেয়েকে ছেলেবেলা থেকে শুধু এক মন্ত্র শেখাও :
এই পবিত্র বাংলাদেশ
বাঙালির - আমাদের।
দিয়া ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’
তাড়াব আমরা, করি না ভয়
যত পরদেশী দস্যু ডাকাত
‘রামাদের’ গামাদের।
বাঙলা বাঙালির হোক।
বাঙালার জয় হোক। বাঙালির জয় হোক।
লেখক : সাবেক প্রোভিসি, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা