১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কলা বাবা

কলা বাবা -

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে রিফাত, মাশফি, নুমান আর এহসান। চারজনই প্রিয় বন্ধু। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু বালকই এই চারজন। ফলে ক্লাসে যত অঘটনই ঘটে না কেন স্যারদের প্রথম টার্গেটই থাকে এরা। সেদিন ঘটল এক মজার ঘটনা। শুভ্র স্যার তো হাসতে হাসতে শেষ। ষষ্ঠ শ্রেণীর বাচ্চারা কি কখনো এই কাজ করতে পারে! স্যার বিশ্বাসই করতে পারছে না ক্লাসে ভয়ে কেউ কাঁপতে পারে। অথচ ঘটনাটা ঘটেছে সত্যি। রণজিৎ স্যারের গণিত ক্লাসে অঙ্ক না পারার ভয়ে এহসান এই অদ্ভুত কাজটা করেছে। শুভ্র স্যার এহসানকে ডেকে এনে বলল তুমি এতবড় ছেলে, তুমি কেন ক্লাসে কেঁপে ওঠো? এহসান উল্টো যুক্তি দিয়ে বলল, কেঁপে উঠব না! আপনি রনজিৎ স্যারের চোখ দুটো দেখেছেন। কটমট করে যখন আমার দিকে তাকায় আমার কলিজায় পানি থাকে না। আজকে ভয়ে তাই কেঁপে উঠেছি। এহসানের কথা শুনে শুভ্র স্যারসহ ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে হাসতে লাগল।
রিফাত, মাশফি, নুমান আর এহসান প্রায়ই ভাবে গণিত বিষয়টা না থাকলে কী এমন ক্ষতি হতো। গণিতের মতো পচা বিষয় নাকি পৃথিবীতেই নেই। রিফাত তো যুক্তি দিয়েই বলল, নুমানকে, কেন গণিত বিষয়টা পরীক্ষায় বাদ দেয়া উচিত। রিফাত বলল, বন্ধু মাশফি শোন। একটা বানার যদি ৫ মিনিটে তৈলাক্ত বাঁশের উপরে উঠতে পারে সে নাকি আবার তিন মিনিটেই নিচে নামতে পারে। আচ্ছা ধরলাম বানরে উপরে উঠে আর নিচে নামে এটা বানরের কাজ। আমরা কেন বানরের ওঠানামা নিয়ে অঙ্ক করব। নুমান বলল, তাইতো! বানরের কাজ বানর করবে আমাদের কী ঠেকা পড়েছে এসব পড়ার। তাই আমি বানরের অঙ্ক যে অধ্যায়ে আছে আমি সেটা খুলেও দেখি না।
এহসান বলল, কি জঘন্য অঙ্ক বইয়ে আছে তা তোরা জানিস? বাবা মা ও সন্তানের বয়স নিয়ে অঙ্ক। আচ্ছা বল তো, বাবা যদি মায়ের বয়স জেনে ফেলে তাহলে কী সর্বনাশ হবে। আমার তিথি আপু বলেছে, পৃথিবীর সব কিছু জানতে পারবে কিন্তু কখনো মেয়েদের বয়স জানার চেষ্টা করো না। তাই আমি বাবা, মা, সন্তানের বয়সের অঙ্ক যে অধ্যায়ে আছে আমি সেটা পড়ি না।
মাশফি বলল, জানিস আমার ছোট মামা একজন মাওলানা। মামা বলে সুদ খাওয়া হারাম। সুদ দেওয়া হারাম। আমার হাসি পায় আমাদের বইয়ে আছে সুদ কষার অঙ্ক। মামার কথা শুনে আমি সুদের অধ্যায় বাদ দিয়ে দিয়েছি। এভাবে আমরা বাদ দিতে দিতে আর বইয়ের অঙ্ক করারই দরকার হয় না। ভালো না।
অঙ্ক না পারলে কী হবে চার বন্ধুর মাথা ভর্তি কুবুদ্ধি। এরা শুনেছে নন্দনপুরে একজন দরবেশ আছে যিনি বটগাছের নিচে আস্তানা দিয়েছেন। তার নাম কলা বাবা। তিনি কলা ছাড়া কিছু খান না। তাকে কলা খেতে দিলেই মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করে দেন। চারজন মিলেই তাই সিদ্ধান্ত নিলো টিফিনের জন্য আনা টাকা থেকে পাঁচ টাকা করে চার বন্ধু মিলে ২০ টাকা দিয়ে কলা বাবার জন্য কলা কিনে বাবার আস্তানায় যাবে।
শুক্রবারে চার বন্ধু ২০ টাকার কলা নিয়ে গেল কলা বাবার কাছে। কলা বাবা তো কলা দেখে খুশিতে আত্মহারা। বলল, কী চাও খোকা বাবুরা? কেন এসেছ আমার আস্তানায়? রিফাত বলল, বাবা অঙ্ক মাথায় ঢোকে না। অঙ্ক করতে বসলে মাথা ঝিমঝিম করে। ইচ্ছে করে নিজের মাথার চুল ছিঁড়ি। অঙ্ক যেন শিখতে পারি সেজন্য কী করতে পারি?
কলা বাবা তো হতবাক হয়ে গেল। বুঝতে পারছে না কী বলা যায়। প্রশ্ন শুনে কলা বাবার মাথাই ঝিমঝিম করতে লাগল আর মনে মনে বলল, কী বিপদ, অঙ্ক পারি না বলেই তো আমি তিনবার মেট্টিকে ফেল মেরে এখন কলা বাবা হয়েছি। এখন এদের কাছে সত্যি বললে তো আমার ব্যবসা শেষ। কেউ আমাকে কলা খেতে দেবে না। কলা বাবা নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, শোনো বাবারা, অঙ্ক হলো পানির মতো সোজা। চেষ্টা করলেই অঙ্ক পারা যায়। তার জন্য কিছু কাজ করতে হবে। বেশি করে পানি খাবে, দুধ খাবে, ডিম খাবে, মাছ খাবে, গোশত খাবে, পরিমাণ মতো সবজি খাবে, ডাল খাবে আর নিয়ম করে ঘুমাবে। প্রতিদিন পাঁচটা করে অঙ্ক করবে। তাহলে দেখবে অঙ্কতে পাস করবে। ওমা কলা বাবার কথামতো সব কাজ করে চার বন্ধু ঠিকই গণিত পরীক্ষায় পাস করে ফেলল। এখন আর তাদের অঙ্ক কঠিন মনে হয় না। গণিত বিষয় হয়ে গেছে তাদের প্রিয় বিষয়। প্রয়োজনমতো সুষম খাবার, ঘুম আর নিয়মিত অঙ্ক চর্চার ফলে তাদের জীবনই গেল পাল্টে। এখন আর ক্লাসে তারা বকা শোনে না। রনজিৎ স্যারকেও আর ততটা ভয় পায় না। এহসান আর ক্লাসে ভয়ে কাঁপে না। চার বন্ধুই কলা বাবার জন্য দোয়া করতে লাগল।


আরো সংবাদ



premium cement
২৮ বছরে প্রথমবার কলকাতার বইমেলায় নেই বাংলাদেশ ফ্যাসিষ্ট সরকার পালিয়ে গেলেও, তার দোসররা এখনো আছে : ব্যারিষ্টার খোকন প্রতিশোধ নিতেই সম্পর্ক, অতঃপর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় আলোচিত টিকটকার মুন্নিকে হাসিনার কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ অনুঘটকের কাজ করেছে : ড. ইফতেখারুজ্জামান দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে শি’র কাছে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সিরাজদিখানে চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই খুলনার দুঃখ বিল ডাকাতিয়া ২৩ দিন পর কাজে ফিরলেন গাজীপুরের টিএনজেড কারখানার শ্রমিকরা ‘সুপার টাইফুনে’ পরিণত হয়েছে ম্যান-ই : ফিলিপাইন

সকল