১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিপ্লব ’২৪ স্মৃতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

-


গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি নতুন এক বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন ও সার্বিক মানোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও মানোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংস্কার আশু জরুরি বলে মনে করি। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ফ্যাসিস্ট রেজিম এবং তাদের অনেক সহযোগীর। ফ্যাসিস্ট রেজিম আমলে নিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগরের অধ্যাপক নুরুল আলম প্রশাসনেরও বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হয়েছেন নতুন উপাচার্য। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান ও নবনিযুক্ত প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাই।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও শহীদদের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের দরবারে আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ এখনই। এ জন্য সামনে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রশ্ন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা জাকসু নেই ত্রিশ বছরের অধিক সময় ধরে। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া ও অধিকার বিষয়ে প্রশাসনকে বলবার জন্য কার্যকর কোনো প্রতিনিধিত্বশীল ব্যবস্থা নেই। সঠিক নেতৃত্ব তৈরিতে বন্ধ্যাবস্থা বিরাজ করছে এ জন্য। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে জাকসু কার্যকর করা। একইসাথে হল সংসদ ও বিভাগীয় সংসদ কার্যকর করা দরকার। ছাত্ররাজনীতি প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে সত্য। এর মূল কারণ হলো নব্বই দশক পরবর্তী সময়ে আমাদের ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের প্রকৃত কল্যাণের জন্য হয়নি। এ জন্য প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতির ব্যাপক ইতিবাচক সংস্কার।

আমরা যারা জাহাঙ্গীরনগরে একটিভিজম করেছি দীর্ঘদিন, অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে ভোকাল ছিলাম, পতিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এবং যারা আমাদের অপছন্দ করত তারা আমাদের অনেককেই ইচ্ছেমতো ট্যাগ দিত। ছাত্ররাজনীতিতে এই ট্যাগিং ট্যাগিং খেলা বন্ধ করতে হবে। একই সাথে জাতীয়ভাবে নিষিদ্ধ নয় এমন সব ছাত্র সংগঠনকে উন্মুক্ত রাজনীতির সুযোগ দিতে হবে। হয়তো এতে এই ‘ট্যাগিং পলিটিক্স’ কমবে। মনে রাখতে হবে এই ট্যাগিং পলিটিক্সের শিকার শহীদ আবরার ফাহাদ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে ভাবছে, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী মনন থাকবে না। সুতরাং জাতীয়ভাবে নিষিদ্ধ নয় এমন কোনো ছাত্রসংগঠনকে রাজনীতি করতে না দিতে চাওয়া মানে ফ্যাসিবাদের চর্চা করা। এমন জাহাঙ্গীরনগর চাই- যেখানে কোনো দমনপীড়ন প্রশ্রয় পাবে না। আদর্শকে আদর্শ দিয়ে মোকাবেলাকে প্রায়োরিটি দেয়া হবে। ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিতে মত-দ্বিমত হবে, যুক্তির পাথরে সবাই বিক্ষিপ্ত হবে কিন্তু কোনো হকিস্টিক কিংবা স্ট্যাম্প থাকবে না। কোনো গেস্টরুম, গণরুম থাকবে না। থাকবে না লেজুড়বৃত্তি। চব্বিশের আকাক্সক্ষাকে বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবে এই ছাত্ররাজনীতি। তে গত ১৪ ও ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিভিন্নজনের নামে নামকরণ করা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করার যে দাবি উঠেছে তা বিবেচনা করতে হবে।

এবার কিছু সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে কথা বলি। ক্যাম্পাসে গণরুম সংস্কৃতি, র‌্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস এবং রাজনৈতিক ব্লক তৈরি করার ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে হলগুলোয় সার্বক্ষণিক একজন টিউটর থাকলে র‌্যাগ এবং মাদকের উপদ্রুপ অনেক কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি। এসব বিষয়ে হলো ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরো বেশি আন্তরিক হওয়া উচিত। অনেক দিন ধরে শুনে আসছি, কলা ও মানবিকী অনুষদে মাদরাসা ও মানবিক বিভাগ হতে আসা ছাত্রদের ভর্তিতে সব বৈষম্য করা হয়। এটা দূর করতে হবে। একই সাথে শিফটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে অভিন্ন প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত এবং অভিন্ন মেধা তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। সব পোষ্য কোটা বাতিল অথবা এর পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জ্ঞান উৎপাদন ও পরিবেশনা। এর স্বার্থে প্রয়োজন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ক্লাস শুরু এবং যথাসময়ে শেষ করা। পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ক্যালেন্ডার দিতে হবে এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মনিটরিং করতে হবে। একজন শিক্ষক ফুলকোর্স ও হাফকোর্সে কতটি ক্লাস নিবেন তা পূর্বনির্ধারিত হলে ভালো। পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখগুলো সে ক্যালেন্ডারে উল্লেখ থাকতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল ব্যবহারসাপেক্ষে ক্যাম্পাসে ফ্রি ইন্টারনেট চালু করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ কম দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। জনকল্যাণমুখী গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও গবেষণা-বরাদ্দের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। একই সাথে শিক্ষক নিয়োগে গবেষণা ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং পিএইচডিধারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা যেতে পারে এবং এই কমিশন পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি রুখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। বিগত স্বৈরাচারী আমলে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের স্বচ্ছতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠন করবার দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আছে ফারজানা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পদও চলে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো মামলা বা তদন্ত হয়নি। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্তে একটা ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গঠন করতে হবে। কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করলে অভিযোগ জানানোর জন্য একটি ‘একাডেমিক অবজারভেশন সেল’ গঠন করা যেতে পারে এবং এ সেলে অবশ্যই ছাত্রপ্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘একাডেমিক অবজারভেশন সেল’ স্বাধীনভাবে কাজ করে অপরাধ বিবেচনা করে প্রচলিত আইনে শাস্তির সুপারিশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারবে। জাহাঙ্গীরনগরে স্বৈরাচারী আমলে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এখনো পুনর্গঠন হয়নি। এটি পুনর্গঠন সময়ের দাবি। এবং একই সাথে নিয়মিত সিনেট নির্বাচন দিতে হবে। রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটের নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি বিবেচনা করা যেতে পারে। একইরকমভাবে বিভাগ উন্নয়ন ফিসহ সব প্রকার অবৈধ ফি বাতিল করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

প্রত্যেক বিভাগে মান-উন্নয়ন পরীক্ষা চালু এবং ফাইনাল পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জের সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একইসাথে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের ব্যবহার, গবেষণা, নিরপেক্ষতা ও পাঠদানের দক্ষতা ইত্যাদি মূল্যায়নের কার্যকর উদ্যোগ নিলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণকরই হবে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এরকম নিয়ম চালু আছে।
দক্ষ ও শিক্ষিত জনবল তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও ‘উচ্চশিক্ষা কাউন্সিল’ গঠন করা যেতে পারে। এ কাউন্সিল দেশ-বিদেশে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জনবল প্রস্তুতির প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেয়ার শর্তে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করবে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি করা দরকার। এ ছাড়া বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বৃদ্ধি করা জরুরি।

আন্তর্জাতিক জার্নালে মানসম্মত গবেষণা পাবলিকেশনের জন্য শিক্ষার্থীদেরও আর্থিক সহযোগিতার বন্দোবস্ত করতে হবে এবং এর সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ও বণ্টন করতে হবে।
রেজিস্ট্রার ভবন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর ইত্যাদিতে সেবার ক্ষেত্রে সব অনিয়ম, সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি বন্ধ করার এখনই সময়। প্রয়োজনে এসব ক্ষেত্রে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। এছাড়া, ডাইনিংয়ে পর্যাপ্ত ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ডাইনিং কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। আইন অনুষদসহ বেশ কিছু বিভাগের সিট সঙ্কট রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্লাসরুম সঙ্কট নিরসন করা জরুরি। উইকেন্ড ও ইভেনিং কোর্সের নামে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে নীতি-নৈতিকতা বিষয়ে কোর্স চালু করা যেতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে শিক্ষার্থীরা মজা করে বলে ‘নাপা সেন্টার’। মেডিকেল সেন্টারকে এই ইমেজ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর চিকিৎসা কেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তরিত করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ওষুধ ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করা বিশেষ প্রয়োজন। ক্যাম্পাসে নতুন লাইব্রেরি নির্মাণ হচ্ছে। আশা করি, লাইব্রেরির সিট সঙ্কট কাটবে। অবশ্যই লাইব্রেরিকে আধুনিকীকরণ, ই-লাইব্রেরির ব্যবস্থা, প্রতিটি হলে পাঠকক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে হবে। সাংস্কৃতিক-সামাজিক পরিমণ্ডলের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বছরের বাজেট প্রশাসন ও প্রতিটি বিভাগ কীভাবে খরচ করেছে তা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা দরকার।

মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের পর্দা পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত, প্রতিটি মসজিদে স্থায়ী ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ এবং তাদের সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। কেন্দ্রীয় মসজিদের সার্বিক সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নারীদের জন্য এখানে নামাজের সুব্যবস্থা নেই। মেয়েদের হল থেকে আযান শোনানোর ব্যবস্থা করার দাবি দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের উচিত এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা। একই সাথে সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় মন্দিরের জায়গা স্থায়ীকরণ করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ মন্দির নির্মাণ, স্থায়ীভাবে পুরোহিত নিয়োগ, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ মন্দিরের জন্য বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও সমমানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর একটি অসাধারণ ক্যাম্পাস। এখানে অসংখ্য লেক, জলাশয় ও প্রাকৃতিক জঙ্গল আছে। এসব প্রাণ-প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রাণ-প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্যের জন্য হুমকি এমন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া যাবে না। বিশেষ করে, ক্যাম্পাসের লেক ও পুকুর সংস্কার এবং অতিথি পাখির অভয়ারণ্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। একই সাথে, অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট সংস্কার করতে হবে। চলাচলের জন্য রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে দুই লেন এবং ফুটপাথের ব্যবস্থা করা জরুরি। যানবহনের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা দরকার। পানি নিষ্কাশন ও কেন্দ্রীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যাম্পাসে অবস্থিত ক্যান্টিন, ডাইনিং ও খাবার দোকানের খাবারে মান উন্নত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যাফেটেরিয়ার সার্বিক সংস্কার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত দোকানসমূহের পুরনো লিজ বাতিল করে এ ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চুরি ও মাদক প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে সংগঠিন হত্যাকাণ্ড, হামলা, যৌন হয়রানি, র‌্যাগিংসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন, পরীক্ষার সময় ১০টা-২টা করা, দারিদ্র্য অসচ্ছলতার ভিত্তিতে বৃত্তির ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করবার দাবি রয়েছে শিক্ষার্থীদের পক্ষে।

আমি আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও শহীদদের আকাক্সক্ষা ধারণ করে জনবান্ধন উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ প্রশ্নে জাহাঙ্গীরনগর হোক একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখক : আহবায়ক, জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার যুদ্ধে ‘প্রকৃত বিরতির’ আহ্বান ব্লিংকেনের পার্লমেন্টে আস্থা ভোট দেবেন জার্মান চ্যান্সেলর বাতাসে কদবেলের ঘ্রাণ! জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইউক্রেনকে আরো সহায়তা দিতে ব্লিংকেনের প্রতিশ্রুতি ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান হলের সিট বণ্টন নিয়ে উত্তপ্ত কুবি, প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে মুখরোচক খাবারে সরগরম লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে ভারতের লাভ? মন্ত্রিসভায় চীন-পাকিস্তানবিরোধী ব্যক্তিরা! লড়াই করেও ভারতের কাছে হেরে গেল দ. আফ্রিকা

সকল