১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের স্বরূপ ও এর পরিণতি

-


সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতের প্রতিফলন না ঘটলে সেটিকে বৈধ সংবিধান বলা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের সংবিধানের মধ্যে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের সন্নিবেশ ঘটে যা তাকে অন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে পৃথক করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে জনগণের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে শুরুতেই ঘোষণা করা হয়েছে, We, the people of the United States…। মার্কিন সংবিধান সংক্ষিপ্ত আকারে প্রণয়ন করা হলেও বিস্তরিত কোনো ব্যাখ্যা নেই। ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে গৃহীত মূল সম্মেলনে একটি প্রস্তাবনাসহ মাত্র ৭টি ধারা ছিল। Seperation of Powers (ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বা পৃথকীকরণ) মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য নীতি। মার্কিন শাসনতন্ত্রের রচয়িতারা ঔপনিবেশিক শাসনের স্বৈরাচারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষাকবচ ও শাসককে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

পক্ষান্তরে, Fifth Republic (পঞ্চম প্রজাতন্ত্র) এর মাধ্যমে ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। পঞ্চম প্রজাতন্ত্র মূলত গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত যেখানে রাষ্ট্রপতির হাতে ব্যাপক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। বর্তমান ফরাসি ব্যবস্থায় সংসদীয় বা পার্লামেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হয়। পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের ২নং ধারায় বলা হয়েছে, France shall be a Republic, Indivisible, Secular, Democratic and Social… পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য গণ-সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি। সংবিধানের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, National sovereignty belongs to the people who shall exercise this sovereignty through its representatives and through referendum. পঞ্চম প্রজাতন্ত্রে এক দিকে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ও ভূমিকাকে স্বীকার করা হয়েছে আবার একই সাথে গণভোটকে সাংবিধানিক আইনে যুক্ত করায় জনগণের ক্ষমতাই চূড়ান্ত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে পদ্ধতি ফ্রান্সে বিদ্যমান ছিল তা পরিবর্তেনের জন্য জেনারেল দ্যা গল সরাসরি জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ১৯৬২ সালের ২৮ অক্টোবর গণভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। ফলে সংবিধানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফ্রান্সে পরোক্ষ নির্বাচনের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র বিলোপ সাধনে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক এ ঘটনা সারা পৃথিবীর শাসকশ্রেণীর জন্য শিক্ষণীয়।

বিগত শেখ হাসিনার সরকার প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গত সাড়ে পনেরো বছর রাষ্ট্রক্ষমতা জোরপূর্বক দখল করে স্পষ্টত স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। অ্যাডলফ হিটলার যে প্রক্রিয়ায় জার্মানিতে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন শেখ হাসিনা ঠিক একই উপায়ে এদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান শ্রমিক দল সংক্ষেপে নাৎসি পার্টি ১৯১৯ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্নপ্রকাশ করলেও ১৯৩৩ সালে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ৫ মার্চ, ১৯৩৩ সালে নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হিটলারের অনুসারীরা ষড়যন্ত্র করে রাইখস্ট্যাগ ভবনে আগুন দিয়ে বিরোধী পক্ষের ওপর দোষ চাপায়। নাৎসি পার্টি নিরঙ্কুশভাবে এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে, জার্মান রাষ্ট্রের ওপর অ্যাডলফ হিটলার সহজেই একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরেই, ১৪ জুলাই, ১৯৩৩ সালে হিটলারের সরকার নাৎসি পার্টিকে জার্মানির একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই হিটলার ভিন্নমত দমনে সক্রিয় হন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যেই মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে আর্নস্ট রোহমসহ অন্যান্য বিরোধী মতাবলম্বীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। এ ছাড়া ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ তৈরি করে হিটলারের অনুসারীরা অসংখ্য ভিন্ন মতাদর্শের ব্যক্তিদের গুম করেন।

২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে। তবে তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন (মইনউদ্দিন-ফখরউদ্দীন) সরকারের নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এখনো অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দেহ প্রকাশ করে। নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সব বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পঞ্চদশ সংশোধনীর (৩০ জুন, ২০১১ সাল) মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। পরবর্তীকালে কোনো নির্বাচনেই (দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের জনগণ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পরেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ প্রায় সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পাতানো ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল বিরোধী দলহীন যেখানে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে বাধা প্রদান, জোরপূর্বক এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বেড় করে দেওয়া ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে হয়রানী করা হয়। এমনকি এ নির্বাচনে অওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতেই ব্যালট বাক্সে ভোট দিয়ে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে জয়ী করে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘আমি-ডামি’ নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে। বিরোধী দলহীন এই নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীরাই দুই পক্ষ (দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী) হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এদেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল (বিএনপি, জামায়াত, এলডিপি, জাসদ, গণতন্ত্র মঞ্চ) বয়কট করে। এরূপ প্রতারণামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জয়ী হয়েই ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ‘আমিই রাষ্ট্র’ (I am the state) তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটান।

শেখ হাসিনা হিটলারের মতো সাংবিধানিক ক্যু’র মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে তিনি বিরোধী দলীয় নেতাদের দমনে সক্রিয় হন যা হিটলালের ভিন্ন মতাদর্শের নেতাদের নির্মূলকরণ প্রক্রিয়ার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ব এবং নির্বাচনের অংশগ্রহণের সুয়োগ থেকে বঞ্চিত করেন। এমনকি তাকে (খালেদা জিয়ার) নিজ বাসভবন থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্ম দেন। হাসিনা হিটলারের ’কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের’ ন্যায় ‘আয়না ঘর’ তৈরি করে অসংখ্য ভিন্ন মতাদর্শীদের গুম ও খুন করেন। হিটলার নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেও পরবর্তী সময়ে জার্মানিতে তার শাসনামলে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। তেমনিভাবে হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর, আর কখনোই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি। হিটলার যেমন বিনা ভোটে জার্মানিতে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। অনুরূপভাবে শেখ হাসিনা পাতানো এবং প্রতারণামূলক নির্বাচন (দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়ে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (Digital Security Act, 2018) প্রণয়ন করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সব ধরনের সংবাদ মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং এর স্বাধীনতাকে পুরোপুরিভাবে হরণ করেন।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোনো স্বৈরাচার শাসকই চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতাকে টিকে থাকতে পারে না। হিটলার (জার্মানি), বেনিতো মুসোলিনি (ইতালি), পিনোচেট (চিলি), ফার্ডিন্যান্ড মাকোর্স (ফিলিপিন), ইদি আমিন (উগান্ডা), পল পট (কম্বোডিয়া), ফ্রান্সিসকো দুভেলিয়ার (হাইতি), নিকোলাই কাইসেসকু (রোমানিয়া), জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ)সহ সব স্বৈরাচারী শাসক জনকল্যাণের কথা বলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। কিন্তু তাদের অনেকেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের যুক্ত হয়ে স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং শেষ পর্যন্ত গণ-আন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগ বাধ্য হন। তারই ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচারদের করুণ পরিণতির ইতিহাসে নতুনভাবে যুক্ত হলো বাংলাদেশের শেখ হাসিনা। অন্যান্য স্বৈরাচারদের মতোই তিনি ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহি-জনতার বিপ্লব, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার বিপ্লব (গণবিপ্লব) বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনে ঐতিহাসিক ও মাইলফলক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদেশে কোন স্বৈরশাসকই জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে বেশি দিন রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। গণ-আন্দোলনের মুখে সব স্বৈরশাসকই শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বারংবার কেন একজন শাসক ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সেবক না হয়ে স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এ বিষয়ে বিশদভাবে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও উদারতাবাদ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই বৈশিষ্ট্যগুলি পুরাপুরি অনুপস্থিত। এদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব লক্ষণীয়। দল ও দেশ পরিচালনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মাঠ পর্যায়ের মতামত এখানে উপেক্ষিত।

বর্তমানে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সুনাগরিক ও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য সুন্দর ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। বিগত আওয়ামী সরকার গুণগত মানের ব্যাপক অবক্ষয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের পুরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বসের দারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। যদিও আদর্শবাদ, নৈতিকতাবাদ ও মানবতাবাদ প্রকৃত শিক্ষার মূল ভিত্তি। কিন্তু নৈতিকতা ও মানবতা বিবর্জিত শিক্ষা কারিকুলম প্রণয়ন করে বিগত সরকার সুনাগরিক ও দক্ষ মানব শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করেছে। পেশাদারিত্বের অনুপস্থিতির কারণে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী জনগণের সেবক না হয়ে শাসকের দাসে পরিণত হয়েছে। অবৈধভাবে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতাই শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। উন্নয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তিনি বাংলাদেশের জনগনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছিলেন। কিন্তু কোটা বিরোধী আন্দোলন বৈষ্যমের বিরুদ্ধে জনগণকে একই কাতারে যুক্ত হতে সাহায্য করে। ৫ আগষ্ট, ২০২৪ ইং তারিখে সফল গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন হয়। এর পরই ৮ আগস্ট, ২০২৪ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। সুন্দর ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের আপামর জনগণ রাষ্ট্র সংস্কার করতে চায় এবং সে লক্ষ্যেই তিনি ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছেন।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত ৫ আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবের পর যেসব রাজনীতিক (মন্ত্রি, এমপিসহ অন্যান্য পদধারী) ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব (পুলিশ ও জন প্রশাসন) সেনাবাহিনীর হেফাজতে অন্তরীণ ছিলেন তাদের নামের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা প্রয়োজন। একই সাথে, স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার সাথে যারা সরাসরি যুক্ত ছিলেন তাদের পালিয়ে যেতে প্রশাসনের যেসব ব্যক্তি সহযোগিতা করেছেন সেসব সহায়তাকারী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। ১৯৪৫ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জার্মানির নাৎসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ঠিক তেমনিভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলীয়ভাবে মানবতাবিরোধী যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার দায় কোনোভাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। ভবিষ্যতে এদেশে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা রুখতে হলে অবশ্যই দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার মন্ত্রী, এমপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দেশী ও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন এবং একই সাথে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচার বিভাগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।
লেখক : চেয়ারম্যান, লোক প্রশাসন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 


আরো সংবাদ



premium cement
অনুশোচনা নেই আওয়ামী লীগে, যে অপেক্ষায় তারা রাতে মাঠে নামছে চিরচেনা ব্রাজিল, ভোরে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা কাঁঠালিয়ায় মোটরসাইকেলচাপায় গৃহবধূ নিহত, আহত ২ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো শেষ হয়নি : মাহমুদুর রহমান সাবেক এমপি টিপুকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করল জনতা বিএলআরআইয়ের ভূমিকা হওয়া উচিত দেশীয় জাত সংরক্ষণ : ফরিদা আখতার কেউ যাতে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে : আসিফ নজরুল প্রশাসক নিয়োগ করে পোশাক কারখানায় সমস্যা সমাধান সম্ভব? খুলনায় পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট ৯টি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন তিন দিনের মধ্যে এনআইডিকে ক্যাটাগরি করার নির্দেশ ইসির

সকল