১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অজানা দ্বীপে কিশোর দল

অজানা দ্বীপে কিশোর দল -

বিকেলের দিকে খেলার মাঠে দু’জনের দেখা পেয়ে অপু বলল, ‘চল, জাহাজটাতে একবার ঘুরে দেখে আসি।’ তিয়ান আর টিয়ানা মাথা ঝাঁকিয়ে রাজি হয়ে গেল। বন্দরে পৌঁছে তারা তাদের ছোট্ট জাহাজ অ্যাডভেঞ্চার কে পেয়ে গেল । তারা তিনজন গ্যাংওয়ের সিঁড়ি বেয়ে জাহাজের ভেতরে ঢুকে গেল।
ঢুকে তো তারা মুগ্ধ। টিয়ানা বলল, ‘ওমা! কি সুন্দর জাহাজের ভেতরটা!’ বাকি দু’জনে নীরবে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো । তারা প্রথমেই প্যান্ট্রি বা খাবার রাখার ঘরে গেল । দেখল সেখানে প্যাকেটজাত ও বোতলজাত রাশিরাশি খাবার রয়েছে। ওদের পছন্দের
স্ক্যানডেনেভিয়ান চকলেটও আছে অনেক বক্সে। আছে বাচ্চাদের জন্য আরো নানা রকম সুস্বাদু খাবার ও বিস্কিট। এরপর ওরা কম্পেনিয়ন ওয়ে বেয়ে ডেক বা জাহাজের ছাদে উঠল। ছাদে উঠে ওরা সমুদ্রের এলোমেলো দমকা বাতাস উপভোগ করতে লাগল। এমন সময় আকাশে দেখা মিলল একটা বড় বাজপাখির। ওটা ছোঁ মেরে নিচের লিকে নামছে । ভয় পেয়ে গেল অপু । সে গুলতিতে মার্বেল জুড়ে সরাসরি ছুড়ল পাখিটার বুক বরাবর । পাখিটা দাপটাতে দাপটাতে ডেকে এসে পড়ল । প্রাণ নেই। টিয়ানা রেগে গেল । অপুকে চেঁচিয়ে বলল, ‘ওটা তো মাছ শিকারের জন্য নিচে নামছিল, তুমি ওকে মারলে কেন?’ অপু মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘ভেবে ছিলাম আমাদের আক্রমণ করতে আসছে।’ দুজনকে গম্ভীর দেখে তিয়ান বলল, ‘রাখো তো , এটা একটা এক্সিডেন্ট। চল আমরা নিচে জাহাজের বার্থ বা শোয়ার জায়গাগুলো দেখে আসি’ তিয়ান বলল, ‘তাই চলো।’ ততক্ষণে বাতাসের বেগ বেড়েই চলছিল। কিন্তু গল্প গুজবে মেতে থাকায় তিনবন্ধু খেয়ালই করল না। ওরা কম্পেনিয়ন ওয়ে বেয়ে নিচে নেমে প্রথমেই ঢুকল
রান্না ঘর বা গ্যালিতে। কতগুলো বড় বড় ছুরি তাদের চোখে পড়ল। তিয়ানের একটা ছুরি খুব পছন্দ হলো । গ্যালি থেকে বের হওয়ার সময় সে একটা ছুরি নিজের হাতে নিলো আনমনে। এরপর তারা গেল শোবার ঘর বা বার্থ দেখতে । অনেক সুন্দর সুন্দর ফোমের তৈরি বিছানা ফ্লোরে পেতে রাখা আছে । ততক্ষণে রাত হয়েছে। টিয়ানা ক্লান্তিতে হাই তুললো একটা, তারপর বলল, ‘অনেকটা এনার্জিলেস হয়ে গেছি, তোদেরও ক্লান্ত লাগছে, চল, আমরা শুয়ে একটু জিরিয়ে নেই । সবাই মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানিয়ে নরম বিছানাগুলোতে শুয়ে পড়ল , আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল । ওদিকে বাতাসের বেগ বেড়েই চলল। যখন দমকা বাতাস ও সমুদ্র উত্তাল হয়ে ঝড় উঠল, ওরা সবাই জাহাজের দুলুনিতে জেগে উঠল। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। জলোচ্ছ্বাসের উন্মত্ততায় জাহাজ নোঙর ছিঁড়ে ভেসে চলল সাগরের অজানা গন্তব্যে। অপু, তিয়ান ও টিয়ানা সৃষ্টিকর্তার নাম জপতে লাগল । সারারাত ধরে ঝড় তুফান চলল । ভোরের দিকে ঝড় থামল। সাগর শান্ত হয়ে এলো। ওরা গ্যাংওয়ে ধরে নিচে নেমে দেখল জাহাজ একটি নির্জন দ্বীপের বালুচরে আটকে আছে । তিয়ান ও তিয়ানা ভয় পেয়ে গেল। অপু তাদের সাহস দিলো। সে বলল, জাহাজ যে খোলা সমুদ্রে ভেসে গেছে, তা বাংলাদেশ নৌ কর্তৃপক্ষ এতক্ষণে জেনে গেছে। চলো আমরা জাহাজের মাস্তুলে সাদা পতাকা উড়িয়ে দিই। কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ বা হেলিকপ্টার সেটি দেখে নিশ্চয়ই আমাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে। সবাই মিলে তাই করল। তারপর ছয় দিন কেটে গেছে। জাহাজের খাবার ফুরিয়ে গেছে। সবাই বাধ্য হয়ে শিকারের সন্ধানে তীরে নামল । একটু দূরে যেতেই কোত্থেকে যেন একটা কেউটে সাপ এসে টিয়ানাকে ছোবল মারতে উদ্যত হলো। অপু চোখের পলকে গুলতিতে মার্বেল জুড়ে সাপের মাথা সই করে মারল। নিখুঁত লক্ষ্যভেদ। সাপটি মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগল। তিয়ান তখন একটা বড় মাটির ঢেলা দিয়ে সাপটির মাথা গুঁড়িয়ে দিলো। চারদিকে নারকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছপালা। অনেকটা বনের মতো । ওরা এগিয়ে চললো। বেশ কিছুদূর যেতে ওরা উঁচু গাছের ডালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কতগুলো বনমোরগ বসে থাকতে দেখল। অপু সাথে সাথে গুলতিতে মার্বেল জুড়ে একটা বনমোরগকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারল । মোরগটি নিচে পড়তেই তিয়ান আর টিয়ানা ওটিকে ধরে ব্যাগে ভরে নিলো । আজকের মতো খাবারের ব্যবস্থা হয়ে গেছে । ওরা খুশি মনে ফেরার পথ ধরল । কিন্তু কিছুদূর যেতেই একদল বন্য বানর চারদিক থেকে তাদের আক্রমণ করলো। অপু একটার পর একটা মার্বেল ছুড়তে লাগল গুলতি দিয়ে। তিয়ান ও টিয়ানা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে
বানরের দলের সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। কিছুক্ষণ পরেই বানরের দল পরাজয় মেনে নিয়ে পালিয়ে গেল। তিয়ানরা পথে নারকেল গাছ থেকে বেশ কিছু ডাব সংগ্রহ করে জাহাজে ফিরে এলো । তারা ক্ষুধা ও পিপাসায় ক্লান্ত ছিল। তিয়ান তার ধারালো ও মজবুত চাকুটি দিয়ে ডাব কেটে সবাইকে পানি খাওয়াল। তারপর গ্যালিতে গিয়ে সবাই মিলে মোরগটাকে রান্না করে খেলো। খেয়ে দেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে সবাই সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে বের হলো । টিয়ানা কতগুলো ঝিনুক দেখে বললো, আহা, কী সুন্দর! হঠাৎ দূরে একটা জাহাজ দেখা গেলো। অপু দৌড়ে তাদের জাহাজ থেকে পতাকা নিয়ে এসে সজোরে নাড়তে লাগল। বাকি দু’জন চিৎকারজুড়ে দিলো । মনে হলো জাহাজের লোকজন তাদের দেখতে পেয়েছে। জাহাজটি কাছে এলে তারা দেখল জাহাজটির নাম বাংলার প্রত্যাশা । এটি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। ক্যাপ্টেন নিজে নেমে এসে ওদের জাহাজে স্বাগত জানালেন । তিনি বললেন, তোমাদের খুঁজতে খুঁজতে আমরা এখানে এসেছি। এ দ্বীপটির নাম ঘাসিয়ার দ্বীপ । তারপর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে চলল। অপু, তিয়ান ও টিয়ানা অবশেষে বাসায় ফিরতেই তাদের বাবা , মা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তারপর যে তারা ওদের কত আদর আপ্যায়ন করলেন, তা আর কী বলব।


আরো সংবাদ



premium cement
অশান্ত মনিপুরে কারফিউ বাকুতে বিশ্বনেতাদের কণ্ঠে প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা ১০ বিভাগে বড় সমাবেশ করবে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে হবে : মির্জা ফখরুল শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি গাইবান্ধায় হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা গুজব ও অপতথ্য প্রতিরোধে গণমাধ্যমকেই ভূমিকা রাখতে হবে : তথ্য উপদেষ্টা ট্রাইব্যুনালে ৯ র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পা হারানো লিমনের অভিযোগ দায়ের ওলামাদের মধ্যে রূহানি ঐক্য প্রয়োজন বিশ্বে জলবায়ু সঙ্কট ও সঙ্ঘাতে ১২ কোটি শরণার্থী সতর্ক করল জাতিসঙ্ঘ ডিএনএ টেস্টে মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী প্রমাণিত

সকল