১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হেমন্তের আগমনে

হেমন্তের আগমনে -

গুটি গুটি পায়ে চলে এসেছে হেমন্ত। বইছে শীতল হাওয়া, ভোরের সবুজ ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু চকচক করছে মুক্তোর মতো। রূপের রানী শরৎ ঋতুর বিদায়ের পরপরই হেমন্তের পদার্পণ। ছয়টি ঋতুর মধ্যে হেমন্ত হলো চতুর্থ ঋতু, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত হেমন্ত ঋতু। হেমন্ত মানেই সারি সারি পাকা ধান, এই সময় পাকা ধানে শীতল হাওয়া দোলে, হালকা হালকা সোনালি রোদের পরশ লেগে পাকা ধান চকচক করে। এমন অপরূপ শোভা দেখে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। মানুষের মনকে বিমোহিত করে হেমন্তে সোনালি প্রকৃতি রূপ। খুশির জোয়ার ভাসে প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে, কৃষাণ-কৃষাণীর চোখে নতুন স্বপ্ন। আনন্দ আর খুশি বুকে নিয়ে নতুন ধানে গোলা ভরে, নতুন ধান ঘরে তুলে শুরু করে নবান্ন উৎসব, সবার ঘরে তৈরি হয় অনেক রকম পিঠাপুলি, পায়েশ, ঢেঁকির ধাপর ধুপুর শব্দ চারিদিকে, মন খুশিতে উদাস হয়ে যায়। প্রতিটি ঋতুর আছে নিজস্ব সৌন্দর্য, হেমন্ত ঋতুর এক অপরূপ সৌন্দর্য মাঠভরা সোনালি পাকা ধান। হেমন্তকালে বর্ষার পানি শুকিয়ে যাবার পর মাটি যেন ফিরে পায় নব যৌবন। খাল বিল শুকিয়ে গেলে অনেক ধরনের সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায় যেমন- কই, পুঁঁটি, খয়রা, শিং, বোয়াল, বাইম মাছ। এসব দেশীয় মাছ হেমন্ত ঋতুতে অনেক বেশি পাওয়া যায়। হেমন্তে অনেক ধরনের ফুল ফোটে গন্ধরাজ, দেব কাঞ্চন, হিমঝুরি, অশোক, মল্লিকা, হাসনাহেনা, শিউলি- এসব ফুলের মিষ্টি সুবাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়। হেমন্তকালে অনেক ধরনের টাটকা সবজি পাওয়া যায়, যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক মুলা ইত্যাদি। হেমন্ত ঋতু এলেই এক অপরূপ সৌন্দর্যে গ্রাম বাংলায় ফুটে ওঠে।

সকালে হালকা কুয়াশা চাদরে ঢাকা থাকে মাঠ, পাখিদের কিচিরমিচির কলরব, শিশির ভেজা অজস্র শিউলি ফুল শিউলি তলায় পড়ে থাকে, কোথাও কোথাও খেজুর গাছের সাথে বাঁধা রসের হাড়ি, হালকা রোদের পরশে সবুজ পাতা হেসে ওঠে। অপূর্ব সৌন্দর্যে ফুটে ওঠে হেমন্তের মিষ্টি সকাল।
হেমন্ত কালে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, হালকা হালকা নীল রঙে সাজে বিকেলের আকাশ, মাঝে মাঝে রংধনু ওঠে। অতিথি পাখিদের আনাগোনা দেখা যায়, সুনশান নীরবতায় হেমন্তের স্নিগ্ধ বিকেল মন প্রফুল্লতায় ভরে। রাতের আকাশে ঝকঝকে জোসনার আলো কৃষাণ-কৃষাণীর মনে জাগিয়ে তোলে নতুন স্বপ্ন নতুন আশা। হেমন্তের হালকা হালকা শীতল হাওয়া শীতের পূর্বাভাস, হেমন্ত ঋতুর পর শীত আসে। হেমন্তে প্রকৃতি সাজে অপরূপে, হেমন্তের এই রূপ স্নিগ্ধতা ছড়ায় সোনার বাংলায়, বারবার ফিরে আসুক অপরূপ হেমন্ত দুয়ারে, উদাস হয়ে মনটা ভাসুক খুশির জোয়ারে।


আরো সংবাদ



premium cement