২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পাখির পাঠশালা

পাখির পাঠশালা -

ময়না পাখির শখ হয়েছে সে একটা পাঠশালা চালু করবে। সেই পাঠশালাতে সে শিখাবে কেমন করে সুরে সুরে গান গাইতে হয়, কথা বলতে হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। একদিন সত্যি সত্যি ময়না পাখি পাঠশালা চালু করে দিলো আর তার পাঠশালার খবর ছড়িয়ে পড়ল সারা এলাকাজুড়ে। নন্দনপুর গ্রামের পূর্ব পাশে বয়ে চলা তিতাস নদীর পাড়ের আম গাছটিতে বসল সেই পাঠশালা। পাঠশালার খবর শুনে দলে দলে পাখিরা এলো পাঠশালাতে ভর্তি হতে। এত এত ছাত্রছাত্রী পেয়ে ময়না পাখি তো ভীষণ খুশি।
শালিক পাখির ছানা এসে বলল খালামনি, ও খালামনি আমি না তোমার স্কুলে ভর্তি হতে চাই। আম্মা বলেছে তোমার নাকি খুব সুন্দর গলা। তোমার গান শুনে পাখিরা তো মুগ্ধ হয় সেই সাথে মানুষেরাও মুগ্ধ হয়। আমার গলাটা তোমার মতো করে দিও খালামনি। শালিক পাখির ছোট্ট ছানার কথা শুনে ময়না পাখির মনটা ভালো হয়ে গেল। সে শালিক পাখির তুলতুলে ছানাটার গালটা ধরে একটু আদর করল আর বলল আচ্ছা খালামনি আমি তোমাকে আমার মতো সুন্দর গলায় যেন তুমি গান গাইতে পারো সেটাই শিখাব। তবে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। পাঠশালাতে কোনো ঝগড়া করা যাবে না। সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে আর মন দিয়ে শিখতে হবে কিভাবে সুন্দর করে গান গাইতে হয়। তোমার চেয়ে বয়সে বড় পাখিদের সম্মান করবে আর ছোটদের করবে আদর। শালিক পাখির ছানা সব কথা শুনে বলল আচ্ছা খালামনি।
কিভাবে কিভাবে পাঠশালার খবর পৌঁছে গেল দোয়েল পাখির কাছে। সেও তার বাচ্চা নিয়ে এলো ময়নার কাছে। ময়না পাখি কে ডেকে বলল আপা আমার বাচ্চাটা নিয়ে আসলাম। আপনার পাঠশালায় পড়িয়ে একটু ভদ্র করে দিয়েন। বাচ্চাটা কিন্তু ভীষণ দুষ্টু। ও কে একটু কড়া শাসন করবেন। ময়না হাসতে হাসতে বললেন, কি যে বলেন না আপা। আপনিই তো পারেন আপনার বাচ্চাকে মিষ্টি গলায় গান শিখাতে। আবার আমার কাছে নিয়ে এসেছেন কেন? আপনার গানে বাংলাদেশের মানুষ মুগ্ধ হয়ে আপনাকে তো তারা জাতীয় পাখি খেতাব দিয়েছে। দোয়েল বলল তা ঠিক আছে কিন্তু বাচ্চা তো আমার কথা শুনতে চায় না। শুধু দুষ্টুমি করে আর লক্ষ কোটি প্রশ্ন করে। ময়না পাখি বলল, কেমন প্রশ্ন করে দোয়েল আপা। দোয়েল বলল, সেদিন আমাকে প্রশ্ন করেছে, আচ্ছা আম্মা বলো তো, সাদা মুরগি আর কালো মুরগির মধ্য পার্থক্য কী? আমি বললাম সাদা মুরগি সাদা আর কালো মুরগি কালো এটাই পার্থক্য। ছানাটা আমার হাসতে হাসতে বলল, হলো না। সাদা মুরগি আর কালো মুরগির মধ্য পার্থক্য হলো কালো মুরগি সাদা ডিম পাড়তে পারলেও সাদা মুরগি কখনো কালো ডিম পাড়তে পারে না। এই কথা শুনে ময়না ও দোয়েল দুজনেই হি হি হি করে হাসতে লাগল।
তারপর পাঠশালাতে ভর্তি হতে এলো একটা বকের ছানা। ছানাটা দেখতে কি যে তুলতুলে। যে দেখে সে পাখিই হা করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। ছানাটার সে কি ধবধবে সাদা গায়ের রঙ। মুখ জুড়ে কোমলতা। ময়না পাখি প্রথম দেখে তো অবাক হয়ে গেল। ইচ্ছে হলো একটু আদর করে দেয়। বকের ছানা খুব মিহি গলায় বলল, ময়না ফুপি আমাকে কি পাঠশালাতে ভর্তি করাবেন? আমিও সুন্দর গলায় মিষ্টি করে কথা বলতে চাই, গান গাইতে চাই। ময়না বলল, কেন ভর্তি করব না তোমাকে। অবশ্যই করব। তোমার মতো শান্ত আর লক্ষ্মী পাখির ছানা আর কয়টা আছে। আজকে থেকেই তুমি ক্লাস করবে। ময়না পাখির কথা শুনে বকের ছানা খুব খুশি হলো।
একই দিনে এলো একটা কাকের ছানা। সে কি কুচকুচে কালো তার শরীর। গা ভর্তি গন্ধ। ময়না পাখি তবু তাকে ক্লাসে ভর্তি করাল। কাকের ছানা কে ক্লাসে দেখে সবাই হই চই শুরু করল। অনেক পাখির ছানা বলল, আমরা কাকের ছানার সাথে পড়ব না। তার শরীর গন্ধ, দেখতে কালো, কর্কশ গলা। তার সাথে থাকলে আমরাও পচা হয়ে যাবো। ময়না তখন সব পাখির ছানাকে বুঝিয়ে বলল, এমন করে কথা বলে না। কারো মনে কষ্ট দিতে নেই। সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। সব সৃষ্টিকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। ময়না আরো বলল, তোমরা পাখির ছানারা যে বললে কাকের ছানার গায়ে গন্ধ। তোমরা কি জানো কাককে পরিষ্কারক পাখি বলা হয়। কাক আমাদের চারপাশ পরিষ্কার রাখে।
অনেকে বলেছ কাকের ছানা কুচকুচে কালো। তোমরা একবার কাকের ছানার চোখের দিকে তাকাও।
তখন ক্লাসের সবাই নীরব হয়ে গেল এবং কাকের ছানার চোখের দিকে তাকাল। ময়না পাখি বলল, ভালো করে দেখো এত সুন্দর আর পরিষ্কার চোখ আর কোনো পাখির নেই। চোখ তো নয় যেন টলটলে স্বচ্ছ দীঘির জল। সবাই অবাক হয়ে দেখল সত্যি কাকের ছানার চোখ সুন্দর। এরপর সবাই কাকের ছানার সাথে বন্ধুত্ব করল এবং মিলেমিশে পড়তে লাগল। সব পাখির ছানা শিখে গেল কিভাবে মিষ্টি করে গান গাইতে হয় এবং সুন্দর করে কথা বলতে হয়।


আরো সংবাদ



premium cement