২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিংহ মামার ডেঙ্গুজ্বর

সিংহ মামার ডেঙ্গুজ্বর -

একবারের কথা, সুন্দরবনের গভীরে ছিল এক আদুরে সিংহ, যার নাম ছিল সিংহ মামা। সিংহ মামার ছিল দারুণ জনপ্রিয়তা। সব বন্যপ্রাণীরা তাকে ভালোবাসত। তিনি ছিল খুব সাহসী, শক্তিশালী এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই সিংহ মামা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
সিংহ মামা জ্বরের জন্য খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন। তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। ডাকপাখি এসে বলল, সিংহ মামা, আপনি ভালো নেই। আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সিংহ মামা বললেন, না, আমি তো সিংহ! আমি তো কোনো অসুখে ভয় পাই না। ডাকপাখি বলল, আপনার এই মনোভাব ঠিক নয়। ডেঙ্গুজ্বর খুবই মারাত্মক। আপনি চিকিৎসা না করালে আরো খারাপ হতে পারে।
তখন সিংহ মামা ভাবলেন, ডেঙ্গু কি? কিভাবে এড়ানো যায়? ডাকপাখি কিছুটা ভয় পেয়ে বলল, ডেঙ্গু হলো মশার মাধ্যমে ছড়ানো এক ধরনের জ্বর। এটি আপনার শরীরে খুব খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সিংহ মামা এবার একটু চিন্তিত হলেন।
সেই দিন সিংহ মামা একটি বড় গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই, তার বন্যপ্রাণী বন্ধুরা, যেমন- হরিণ, হাতি, আর বাচ্চা শিয়াল, আসতে শুরু করল। তারা সবাই সিংহ মামাকে দেখতে এলো।
হরিণ বলল, সিংহ মামা, আপনি কেন এত অসুস্থ? আমরা আপনাকে দেখে খুবই চিন্তিত। সিংহ মামা বললেন, আমি ডেঙ্গুজ্বরে ভুগছি। আমি শুনেছি এটি খুবই মারাত্মক। আমার শরীরটা এখন একদম ভালো নেই।
শিয়াল বলল, আমরা তো শুনেছি যে ডেঙ্গু মূলত মশার মাধ্যমে ছড়ায়। তাই আমাদের মশার কামড় থেকে সতর্ক থাকতে হবে। হাতি বলল, হ্যাঁ, আমাদের বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেয়া উচিত নয়। জমে থাকা পানিতে মশা বেড়ে যায়।
সিংহ মামা বললেন, ঠিক বলেছ, বন্ধু। আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?
হাতি বলল, আমরা যেন যতটা সম্ভব মশার কামড় থেকে বাঁচতে পারি, সেজন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা গাছের ডালে থাকা পাতাগুলো দিয়ে আমাদের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে পারি।
হরিণ বলল, হ্যাঁ, আমরা সবাই মিলে কাজ করলে নিশ্চয়ই আমাদের বনের পরিবেশ সুন্দর হবে। এবং সিংহ মামাকে সুস্থ করে তুলতে পারব।
সিংহ মামার মনে আশা ফিরে এলো। বন্ধুরা মিলে বনের সব জলাশয় পরিষ্কার করে ফেলল। তারা গাছের নিচে জমে থাকা পানিও পরিষ্কার করল। একদিকে সিংহ মামা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, অন্য দিকে বন্ধুরা মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল। তারা একসাথে মশার আস্তানা ধ্বংস করতে লাগল।
কিছুদিন পর সিংহ মামার শরীরটা ধীরে ধীরে ভালো হতে লাগল। সবার সহযোগিতায় এবং ডাকপাখির চিকিৎসায়, তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। সিংহ মামা বললেন, আমি বুঝতে পারলাম, বন্ধুদের সাহায্য এবং সতর্কতা আমাদেরকে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সবার সাথেই জোট বেঁধে কাজ করলে অসুবিধা হবে না।
সিংহ মামা এবার সবাইকে বললেন, আমরা এখন থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন থাকব। আমাদের বনের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, যাতে মশা না বাড়তে পারে।
সবাই একসাথে প্রতিজ্ঞা করল, আমরা ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকব এবং আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার রাখব।
এভাবে সিংহ মামার অসুস্থতা পুরো বনজুড়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিলো। সবার মধ্যেই ডেঙ্গু সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পেল এবং তারা বুঝতে পারল যে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যতœ এবং সতর্কতা অপরিহার্য।
সিংহ মামা হাসি মুখে বললেন, আমি তো বেঁচে গেলাম, কিন্তু আমাদের সবাইকে এই শিক্ষা নিতে হবে। স্বাস্থ্যই সবার জন্য প্রথম এবং প্রধান বিষয়।
এভাবে সিংহ মামার ডেঙ্গুজ্বরের ঘটনা সবার কাছে শিক্ষা হয়ে রইল এবং বনভূমির সব প্রাণী মিলে একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে শুরু করল।


আরো সংবাদ



premium cement