জালালের পরশপাথর
- মাহফুজ রুমান খান
- ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
আলালের একমাত্র ছেলে জালাল। অনেক দিনের ইচ্ছে ছেলেকে ডাক্তার বানাবে। তবে সাধ্য নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। দিন আনে দিন খায়। স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। আট বছর বয়স ছেলের, এখনো স্কুল ভর্তি করানো হয়নি। একবার গিয়েছিল, কাজ হলো না। অ্যাডমিশন ফির কথা শুনে চোখ কপালে উঠে যায় আলালের। উপায় না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে চলে এলো। আসার সময় বললো,
‘বাজান আমরা গরিব মানুষ। সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। খুব ইচ্ছে ছিল তোরে পড়ালেখা করামু। দেখলি মাস্টার কত টাকা চাইলো। এত্তো টাকা কই পামু ক বাজান?’
জালাল নীরব। গরিব ঘরের শিশুরা বাবা-মায়ের কষ্ট বুঝে। সেজন্য-ই হয়তো সেদিন থেকে আর বায়না ধরেনি স্কুলে যেতে।
ক’দিন ধরে আষাঢ়ের টাপুরটুপুর বৃষ্টি। গ্রামগঞ্জে কাজ নেই। প্রতিদিন এক বেলা খায় তারা। তেমন খাবার নেই ঘরে। যা আছে একটু একটু খাচ্ছে। প্রায় শেষের দিকে। শুধু তিনটে ডিম আছে হাঁসের। চারটি হাঁস জালাল লালনপালন করে। সকালে বের হয় আর হাঁস নিয়ে সন্ধ্যা ফিরে। সাথে হালকা খাবার নিয়ে যায়। আজ মা কোনো কিছুই দিলো না। ঘরে কিছুই নেই।
সন্ধ্যা, ঘনিয়ে এলো। এখনো হাঁস নিয়ে জালাল ফিরেনি। মা জোরে আওয়াজ করে ডাকছে।
‘এই জালাল, কই তুই বাজান। এখনো এলি না যে। জলদি আয়া পড়। সন্ধ্যা তো হয়ে গেল।’ এই বলে বিলের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন এই সময়ে চলে আসে। আজ আসছে না। বিপদ হলো নাকি! চিন্তায় পড়ে গেল মা।
এদিকে হাঁস নিয়ে আসছিল জালাল। হঠাৎ চলার পথে দেখতে পেলো একটি সাপ আর বেজি মারামারি করছে। জালাল মায়ের কাছে শুনেছে বেজি মানুষের বন্ধু আর সাপ শত্রু হয়ে থাকে। বাবা বলেছে সাপ কে যেখানে দেখবি সেখানেই মেরে ফেলবি। তোর দাদুকে সাপ ছোবল দিয়ে মেরেছে। বাবার কথা রাখতে লাটি দিয়ে সাপের মাথায় বারি দিয়ে মেরে ফেলল। দূরে মৃত সাপটিকে ফেলে আবার হাঁস নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। তখন বেজি তার সামনে এসে মানুষের মতো অনর্গল বলে উঠল
‘বাঁচালে ভাই তুমি। আর একটু পরেই দম বন্ধ হয়ে যেতো।’
ভয় পেয়ে যায় জালাল। ভাবল সে মনে হয় রাক্ষস। আমাকে এখন খাবে। আমতা আমতা করে বলে ‘মানুষের মতো কথা বলতে পারো তুমি! আমাকে খেয়ো না আমি তোমার উপকার করছি।’
-‘না, না। আমি তোমাকে খাবো না তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ।’
-‘তুমি রাক্ষস না?’
-‘না, আমি বেজি। তুমি কোথায় যাচ্ছিলে?’
-‘বাড়ি যাচ্ছি হাঁস নিয়ে’
-‘তুমি পড়ো না? সন্ধ্যার সময় তো মানুষের ছেলেপুলে পড়া লেখায় বসে’
-‘না পড়ি না’
-‘ওমা কেনো?’
-‘আমরা গরিব। স্কুলে ভর্তি হওয়ার টাকা নেই। বাবার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার বানাবে কিন্তু টাকার জন্য ভর্তি করাতে পারে না। এইজন্য মাঝে মধ্যে বাবা কান্না করে। তিনি দিনমজুর পড়ালেখার টাকা কোথায় পাবে বলো?’
ওয়াক থু করে বেজি। তার মুখ থেকে একটা জিনিস বের করে বলে
এটা, তোমাদের দুঃখ কষ্ট দূর হবে’
-‘কী এটা? এটা দিয়ে কষ্ট দূর হবে!’
-‘এটা হলো পরশ পাথর। এটা খুব মূল্যবান পাথর। যেকোনো জিনিসের গায়ে লাগাবে সেটাই সোনা হবে। বাবা- মাকে দিয়ে বলবে ছোট ছোট জিনিসের গায়ে লাগাতে তখন দেখবে সোনা হয়ে যাবে। তারপর সেগুলো বিক্রি করে তোমরা চলবে। আর স্কুলে ভর্তি হবে। নামকরা ডাক্তার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে। সাবধান তিনজনের বেশি কাওকে এই পাথরের কথা বলবে না।’
-‘বললে কী হবে?’
-‘পাথর অকেজো হয়ে যাবে আর কাজ করবে না। বাচ্চারা কান্না করছে বাসায়। আমি গেলাম ভালো থেকো।’ এই বেজি বলে চলে গেল।
-‘আবার দেখা করো’
-‘দেখা হবে না, এলাকা ছেড়ে চলে যাবো আজ রাতেই।’
-‘কেনো?’
আর জবাব দিলো না। হয়তো শুনতে পায়নি।
জালাল বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে সব খুলে বলল। প্রথমে তারা বিশ্বাস করেনি। তারপর একটি ছোট স্টিলের গ্লাসের গায়ে লাগাল, অমনি সোনা হয়ে গেল। বাবা মা অবাক! তারপর থেকে এইভাবে সোনা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে। তাদের অভাবের দিন যায়।
জালালকে স্কুলে ভর্তি করে। জালাল এখন মেডিক্যাল এ পড়ে ক’দিন পরে ডাক্তার ডিগ্রি নিয়ে বের হবে। এ নিয়ে বাবা-মা আনন্দে আত্মহারা। এখন তাদের সুখের দিন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা