২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

শিয়াল কিভাবে আঙুর খেল

-

অনেক অনেক দিন আগের কথা। শিয়াল বনের মাঝে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা একটি আঙুর বাগানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। সে হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল অনেক উঁচুতে সুস্বাদু ও রসাল অনেক আঙুর ঝুলছে। এমন তরতাজা ও লোভনীয় আঙুর দেখে তার জিভ দিেিয় পানি ঝরতে লাগল। সে অনেকবার লাফিেিয় লাফিেিয় আঙুর পেয়ে খেতে চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হলো। যতই জোরে লাফাক, সে কিছুতেই আঙুরের নাগাল পেল না। শেষমেষ আক্ষেপ করতে করতে বলে ফেলল, আঙুর ফল টক। এভাবে নিজেকে সান্ত্বÍনা দিতে দিতে সে চলে গেল। শিয়াল আঙুর ফল টক বলে চলে গেলেও, সুমিষ্ট আঙুর খাওয়ার লোভ কিন্তু তার মন থেকে যায়নি। সে অনেক ভেবে কূলকিনারা না পেয়ে ধৈর্য ধরার সিদ্ধান্ত নিল। সে জানে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও ধৈর্য ধরার কথাটা আছে। তাছাড়া সবুরে মেওয়া ফলে। এ তো জানা কথা। সে বসে বসে ভাবতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সে বনের পশু পাখিদের অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নিলো। সে প্রথমে বনের রাজা সিংহ মামার কাছে গেল এবং তাকে আঙুর পেড়ে দেবার অনুরোধ জানাল। অনুরোধ শুনে তো সিংহ মামা হেসেই অস্থির। সে বলল, আমি হলোম সিংহ, এ বনের রাজা। আমার পক্ষে কি আঙুর পাড়ার মতো তুচ্ছ কাজ মানায়? তুমি বাপু অন্য পশু-পাখিদের অনুরোধ কর গিয়ে। তাছাড়া আদ্দিকালের গল্পে আছে শিয়ালের কাছে আঙুর ফল টক, আমি সেই গল্পটা মিথ্যে প্রমাণ করতে যাবো কেন? শিয়াল সিংহের কথা শুনে খুব হতাশ হলেও ধৈর্য বজায় রাখল। সে এরপর টিয়ে পাখির কাছে গিয়ে আঙুর পেড়ে দেবার অনুরোধ জানাল। টিয়ে পাখি বলল, শিয়ালের কাছে আঙুর ফল টক, এ প্রচলিত প্রবাদ আমি মিথ্যে প্রমাণ করতে পারব না, তুমি বাপু অন্য কোথাও যাও। শিয়াল খুব কষ্ট পেল, কিন্তু তার আঙুর ফল খাবার ইচ্ছেটা ত্যাগ করল না। এরপর শিয়াল ঘুরতে ঘুরতে জিরাফের কাছে গেল। সে জিরাফকেও আঙুর ফল পেড়ে দেবার অনুরোধ জানাল। জিরাফ বলল, দেখো হে আমি এমনিতেই আমার লম্বা গলা বাড়িয়ে গাছদের লতা, পাতা, কচি ডাল খেয়ে থাকি, এতে ওরা অনেক কষ্ট পায়। আবার ওদের ফল পেড়ে নতুন কোনো দুঃখ দিতে পারব না। তুমি এখানে থেকে বিদায় হও। শিয়াল তখন খুব দুঃখিত মনে মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে গেল, কিন্তু ধৈর্য হারাল না। সে বাসায় ফিরে ভাবতে বসল। অনেক ভেবে ভেবে শেষে একটা দারুণ বুদ্ধি পেেিয় গেল। সে পরের দিনই নানা জায়গা থেকে ছোট কলাগাছের চারা সংগ্রহ করে তার বাসার পিছনের খালি জায়গাটায় জায়গাটায় বুনে দিলো তারপর অপেক্ষা করতে লাগল। দিন যায়, রাত আসে, ধীরে ধীরে কলাগাছের চারাগুলো বড় হলো । শিয়াল তখন বানরের কাছে গেল এবং তাকে আঙুর পেড়ে দেবার অনুরোধ জানাল। বানর বলল, উহু- অসম্ভব, আমি বিনা লাভে কাউকে কিছু করে দেই না। বলো, তুমি আমাকে কি দিবে? শিয়াল তখন বলল, আমি তোমার কথা ভেবেই বাড়ির পেছনের খোলা জায়গায় অনেক কলাগাছ লাগিয়ে ছিলাম। সেসব কলাগাছে এখন অনেক কলা পেকে আছে। তুমি আমাকে আঙুর পেড়ে দিলে এসব পাকা কলা তুমি যত ইচ্ছে খেতে পারবে। কলার কথা শুনে বানরের চোখ লোভে চকচক করে উঠল। সে তক্ষুনি শিয়ালের জন্য রসাল ও মিষ্টি আঙুর পেড়ে আনল। শিয়াল সেই মিষ্টি আঙুর প্রাণভরে খেল। বানর ভায়া পেল মজাদার পাকা কলা। এভাবেই ধৈর্য ও বুদ্ধির বলে শিয়ালের মিষ্টি আঙুর খাওয়া হলো। আঙুর ফল টক, একথাটি সে জীবনে আর উচ্চারণ করেনি। এ গল্পের শিক্ষা হলো আঙুর ফল টক বা মিষ্টি যাই হোক, ধৈর্যের ফল সব সময়ই মিষ্টি।


আরো সংবাদ



premium cement