১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বন্ধু হলো জোনাকি

-

আবরারের দাদা বাড়িটা বেশ সুন্দর। সাজানো গোছানো। বড় বারান্দাওয়ালা পাকাঘর। বিশাল উঠান। উঠানের চারপাশে নানান ফুলের গাছ। উঠান পেরিয়ে ঘাটবাঁধানো পুকুর। চারপাশে সুপারি বাগান। বাগানের এক কোনে রাস্তা ঘেঁষে মসজিদ।
এই খোলামেলা পরিবেশ আবরারের দারুণ লাগে। দাদী সারাক্ষণ ব্যস্ত কি খাওয়াবে ওদের। পিঠা, ফিরনি, পায়েশ এটা-ওটা রান্না নিয়ে অস্থির। দাদা ব্যস্ত গাছ থেকে আম, জাম, কাঁঠাল, কলা ইত্যাদি ফল পাড়া নিয়ে। আরহাম ছোটে ছোট ছোট ব্যাঙের পেছন পেছন। হাত তালি দিয়ে ফুর্তি করে। রাজহাঁসের আসা দেখে দৌড়ে গিয়ে মায়ের পেছনে লুকায়। তা দেখে হো হো করে হেসে ওঠে আবরার।
সারাদিন বেশ আনন্দেই কেটে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই কেমন যেন বোর লাগতে শুরু করে আবরারের। কিছুই যেন করার নেই। এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে মোবাইল ফোনেও চার্জ নেই। গেমসও খেলা যাচ্ছে না। গেমস খেলা তার নিত্যদিনের অভ্যাস। বাসায় তার সময় কাটানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো বিভিন্ন গেজেট। কার্টুন দেখা, গল্প শোনা বা গেমস খেলা সবই ওই গেজেটে। গেজেটস ছাড়া যেন চলেই না।
বেশ মনমরা হয়ে সিঁড়ির বাঁধানো বেঞ্চিতে গিয়ে বসে আবরার। বাইরে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। আবরার সামনের নারিকেল গাছের পাতার দোল খাওয়া দেখে। নারিকেল পাতার ফাঁকে চাঁদটা উঁকিঝুঁকি মারছে। ঝিঁঝিপোকারা বিরামহীন ডেকে চলেছে। এমন সময় সে একটা আলো উড়ে আসতে দেখে। কাছে আসতেই চিনতে পারে। আরে এটা তো একটা জোনাকি। জোনাকিটা এসে বসে আবরারের কাঁধে। আবরার অবাক হয়ে যায়।
-হ্যালো, আবরার! কেমন আছ? অচেনা স্বরে কথা বলে কে যেন।
আবরার এদিক ওদিক তাকায়। কই কেউ তো নেই।
-কাকে খুঁজছ তুমি? আমি তো তোমার কাঁধে বসে আছি।
-তুমি কথা বলছ? আবরার অবাক হয়ে জানতে চায়।
-হ্যাঁ, আমিই কথা বলছি। জানায় জোনাকি।
-কিন্তু তোমার কথা আমি কিভাবে বুঝতে পারছি? আমার তো বুঝতে পারার কথা নয়!
-তুমি অনেক ভালো ছেলে। আর ভালো ছেলেমেয়েরা সবার কথা বুঝতে পারে।
-তাই বুঝি!
-ঠিক তাই। এবার বলো তোমার মন কেন খারাপ।
-আর বলো না, ভীষণ বোর লাগছে। মায়ের মোবাইলে চার্জ নেই। বাবা বাজারে গিয়েছে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। গেমসও খেলা যাচ্ছে না। তাই বিরক্ত।
-ও এই কথা! তাহলে শোনো, ছোটদের মোবাইল বা ডিভাইস ব্যবহার একদম ভালো নয়। ডিভাইস চোখের জন্য, ব্রেনের জন্য এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তুমি তো বড় হয়ে ভালো ব্যাটসম্যান হতে চাও। চোখ ভালো না থাকলে তো ভালো ব্যাটসম্যান হতে পারবে না।
-তুমি এসব কেমন করে জানলে? আর আমি ক্রিকেটার হতে চাই সেটিও জানো?
-জানব না কেন? আমরা এমন অনেক কিছুই জানি যা মানুষ জানে না। আর তাছাড়া তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তাই তোমার সম্পর্কে সব জেনেই বন্ধু হতে এসেছি।
-কিন্তু ডিভাইস তো আমার নিত্যসঙ্গী। অনেক সময় অনলাইনে ক্লাসও করতে হয়। ডিভাইস ছাড়া চলব কী করে?
-মোবাইল বা ডিভাইস ছাড়াও চলা যায়। খেলাধুলা করতে পারো, বই পড়তে পারো, ছবি আঁকতে পারো। প্রকৃতির সৌন্দর্যে আনন্দ খুঁজে নিতে পারো। যতটুকু না হলে নয় ততটুকু গেজেট ব্যবহার করো। তাহলেই দেখবে তুমি অন্যদের চেয়ে ভালো থাকবে।
আবরার মনোযোগ দিয়ে জোনাকির কথা শোনে। তারপর বলে, তুমি ঠিকই বলছ বন্ধু। আমার কাজিন জারিফকে চশমা নিতে হয়েছে বেশি বেশি মোবাইল ব্যবহারের কারণে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আর অযথা ডিভাইস ব্যবহার করব না। নিজেকে পড়াশোনা আর খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখব।
জোনাকি বেশ খুশি হয়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল