২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উড়ার পরপরই বিস্ফোরিত ইলন মাস্কের বিশাল রকেট স্টারশিপ

উড়ার পরপরই বিস্ফোরিত ইলন মাস্কের বিশাল রকেট স্টারশিপ। - ছবি : সংগৃহীত

ইলন মাস্কের স্পেস এক্স কোম্পানির নতুন রকেট স্টারশিপ প্রথম যাত্রাতেই বিস্ফোরিত হয়েছে। রকেটে কোনো ক্রু না থাকায় পরীক্ষামূলক এ যাত্রায় কেই আহত হয়নি। টেক্সাসের পূর্ব উপকূল থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে এ উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়।

উত্তরণের দুই-তিন মিনিট পর রকেটটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে এবং এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এটিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। এটি ছিল এখন পর্যন্ত তৈরি করা সবচেয়ে বড় রকেট।

মাস্ক জানিয়েছেন, তার কোম্পানি মাস দু’য়েকের মধ্যে আবার রকেট উৎক্ষেপণের চেষ্টা করবে।

স্পেস এক্সের প্রকৌশলীরা অবশ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও এ উৎক্ষেপণকে সফল বলছেন। তারা বলছেন যে তারা ‘আগেভাগে এবং নিয়মিত’ পরীক্ষা চালিয়ে যেতে চান এবং এই ধরণের ক্ষয়ক্ষতিতে ভয় পান না। পরের উৎক্ষেপণের আগে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ ডাটা রয়েছে তাদের হাতে।

দ্বিতীয় আরেকটি স্টারশিপ এখনই উৎক্ষেপণের জন্য তৈরি রয়েছে।

এই উৎক্ষেপনের পর ইলন মাস্ক টুইট করেছেন, ‘অভিনন্দন স্পেস এক্স টিমকে স্টারশিপের দারুণ একটি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপন করায়। কয়েক মাসের মধ্যে হতে যাওয়া পরের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের জন্য অনেক কিছু শিখেছি আমরা।’

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বিমান চলাচল প্রশাসন- যারা যুক্তরাষ্ট্রে রকেট উৎক্ষেপণের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। তারা জানিয়েছে যে তারা এ দুর্ঘটনার তদন্ত করবে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যেকোনো বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই তারা এই ধরনের তদন্ত পরিচালনা করে থাকেন।

পরীক্ষার আগে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, রকেটটির ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ওপরে ওঠা এবং লঞ্চ প্যাডের স্থাপনা ধ্বংস না হওয়াই ’বিজয়’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তার ইচ্ছা অপূর্ণ থাকেনি। স্টারশিপ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে তার উৎক্ষেপণের এলাকা পার করে মেক্সিকো উপসাগরের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এক মিনিটের মধ্যেই বোঝা যায় যে এটি নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী যাচ্ছে না।

রকেটটি যখন ওপরে উঠতে থাকে, তখন দেখা যায় যে এর গোড়ায় থাকা ৩৩টি ইঞ্জিনের ছয়টি বন্ধ হয়ে গেছে।

তিন মিনিটের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই বোঝা যেতে থাকে যে খুব বেশিক্ষণ এটি চলবে না। রকেটটির দুই অংশ যে সময়ের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তখনো অংশ দুটিকে একসাথেই দেখা যেতে থাকে।

লঞ্চের চার মিনিট পর স্টারশিপের উচ্চতা কমতে শুরু করে। তখন আকাশে বড় ধরণের একটি বিস্ফোরণ দেখা যায়। কম্পিউটারের মাধ্যমে রকেটটির ‘ফ্লাইট টার্মিনেশন সিস্টেম’ চালু করে দেয়ায় এ বিস্ফোরণটি ঘটে।

স্পেস এক্স তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘এ ধরনের পরীক্ষা থেকে আমরা যা শিখি, সেটা থেকেই সফলতা আসে। আর আমরা আজ এই যন্ত্রটি এবং এর গ্রাইন্ড সিস্টেম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি, যা স্টারশিপের পরের ফ্লাইটকে সফল করতে কাজে লাগবে।’

স্টারশিপের সবচেয়ে ওপরের অংশ, যেটি শিপ হিসেবেও পরিচিত, এর আগেও ছোট পরিসরে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথম এর নিচের অংশসহ এটি উৎক্ষেপিত হলো।

ফেব্রুয়ারি মাসে ‘সুপার হেভি’ নামের বুস্টারটিসহ এটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। তবে ওই সময় এর ইঞ্জিনগুলোর শক্তি অর্ধেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।

যদি স্পেস এক্স তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনের ৯০ ভাগ শক্তি ব্যবহার করে থাকে, তাহলে প্রায় ৭০ মেগানিউটন বল প্রয়োগ করা হয়েছে রকেটটি উৎক্ষেপণে।

১৯৬০ আর ৭০-এর দশকে মানুষকে চাঁদে নিয়ে যাওয়া স্যাটার্ন পাঁচ রকেটে যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করা হয়েছিল, তার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ বল প্রয়োগ করা হয়েছে এটিতে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement