২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

করোনাকালে পথ চলি

কভারস্টোরি
-


কয়েক মাস ধরে ভালো নেই পৃথিবী। ভালো নেই বাংলাদেশের মানুষ। মানব ইতিহাসের ভয়াবহ সময়েও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রাণশক্তি নিয়ে তবুও লড়াই করে যাচ্ছি আমরা। নতুন নতুন সব শব্দ জড়িয়ে যাচ্ছে জীবনের সাথে। নতুন অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হচ্ছে।
বিবিসির রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত ৩০ বছরে বেড়েছে ভাইরাস সংক্রমণ। এর অন্যতম কারণ হিসেবে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যাকে দেখানো হয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ৭৭০ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাস দেহের বাইরে খুব কম সময় বেঁচে থাকে। ভাইরাসটি প্রাণসঞ্চার করার জন্য তাই মানব দেহে আবশ্যক। একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হতে পারবে তখনই, যখন মানুষের মাঝে দূরত্ব কম থাকবে।
বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা। হাজার থেকে লাখে পা দিয়েছে। গত ২৭ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৯৫ জনে।
বাংলাদেশের শহর ও মফস্বল অঞ্চলে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বেশি। একই সাথে এখানে গণপরিবহন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশি। দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে ৩১ মে থেকে আমাদের দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থা পুনরায় চালু হয়েছে। নির্ধারিত কিছু বিষয় মেনে চলার নির্দেশ থাকলেও স্বাস্থ্যঝুঁঁকি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। গণপরিবহনগুলোতে যথাযথ স্যানিটাইজেশন ও জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেয়া হলেও এর কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। ভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছেই। এই সংক্রমণ থেকে নিজেকে নিরাপদ থাকার জন্য অনেকেই প্রতিদিন ট্যাক্সি/সিএনজি ভাড়া করে অফিসে আসা-যাওয়া করছেন। ফলে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। ব্যক্তি ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবেই বাধ্য হয়ে এই বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে অনেককেই। তাই বিকল্প এখন আবশ্যক।
মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। কিন্তু, এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ মূলত মধ্যম আয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সেখানে নিত্যদিনের খরচের পরে সঞ্চয় প্রায় অসম্ভব। আর নিজস্ব পরিবহন মানেই বেশ বড় অঙ্কের টাকা খরচ। বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় বললেই চলে। তারপরও ভাবতে হচ্ছে। কেননা, উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মানেই ঘর-বাহির করছে এবং গণমানুষের সংস্পর্শ তাকে এবং পরিবারকে ঝুঁকির শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ সময়ে নাগরিকদের কথা ভেবে লোন সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। টু হুইলার এবং ফোর হুইলারের জন্য লোনের আবেদন করা যাবে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে। বেশ কিছু মোটরসাইকেল কোম্পানিও মূল্যছাড় দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও সাইকেল বর্তমানে তুলনামূলক নিরাপদ। এই তিনের মধ্য থেকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে নিজের প্রয়োজনের দিকে তাকাতে হবে।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও সাশ্রয়ী নয়। যদি আপনি পরিবারের একমাত্র কর্মজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য মোটরসাইকেলের উপযোগিতা বেশি। আবার, একাধিক সদস্য কর্মজীবী হলেও অফিস ভিন্ন জায়গাতে হলে একটি বাহন কোনোভাবেই উপযোগী নয়। বরং সে ক্ষেত্রে দু’টি ভিন্ন বাহন জরুরি। আর ব্যক্তিগত গাড়ির তুলনায় সাশ্রয়ী তো অবশ্যই। সাইকেল আর্থিকভাবে সবচেয়ে সাশ্রয়ী হলেও দীর্ঘ দূরত্ব বা অফিসে যাতায়াতের জন্য আদর্শ পরিবহন নয়।
সচেতন মানুষের মোটরসাইকেলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। করোনা আতঙ্কে ঘরবন্দী মানুষ বর্তমানে প্রয়োজন ছাড়া যেমন ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না, তেমনি একইভাবে ঘরে ফিরতে চাইছেন দ্রুত। মোটরসাইকেলের গতি এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখে। আবার খরচের ক্ষেত্রেও কিছু সুবিধা রয়েছে। কেননা, অল্প জ্বালানিতে বেশি দূরে যেতে মোটরসাইকেলে মানুষের ভরসা বহু পুরনো। এর বাইরে রয়েছে পার্কিং। কম খরচে মোটরসাইকেল রাখার ব্যবস্থা করা যায়, যেটা প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। যা বর্তমান দুর্দিনের বাজারে খরচ বাঁচিয়ে চলতে সাহায্য করবে।
গাড়ির প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে তখনই, যখন একাধিক সদস্য একই রুটে অফিস করেন এবং সময় মিলিয়ে বাসায় ফিরে আসেন।
এসব কারণে সামনের দিনগুলোতে মোটরসাইকেলের ব্যবহার আরো বাড়বে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক জ্যামের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। কারণ, সাধারণত একটি গাড়ি রাস্তায় যতটুকু জায়গা দখল করে, তার থেকে বেশ কম জায়গা একটি মোটরসাইকেলের দরকার হয়।
নিউ নরমালে সামাজিক জীব মানুষ আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপনে আগ্রহী হবে বলেই মনে করা হয়। কারণ করোনাকালে মানুষের সংস্পর্শ মানেই ঝুঁঁকি।


আরো সংবাদ



premium cement