ত্বক থাকুক সুন্দর
কভারস্টোরি- সাতরঙ ডেস্ক
- ১৬ জুন ২০২০, ০০:০০
তরতাজা সুন্দর ত্বক আপনার সৌন্দর্যের চাবিকাঠি। নিজের প্রতি একটু যতœশীল হলে দীর্ঘদিন ত্বক সুন্দর থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ঠিক কী কী করলে আপনার ত্বক হবে ঝকঝকে ও প্রাণবন্ত। যতটা কঠিন ভাবছেন, ততটা কঠিন নয় কিন্তু।
আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু
ভুলেও ভাববেন না যে ত্বক সুন্দর ও তরতাজা রাখার জন্য পদক্ষেপ শুরু করতে হবে মধ্যবয়সী হওয়ার পর থেকে। এই প্রক্রিয়াটি আসলে শুরু করতে হবে টিনেজ বয়স থেকেই। কারও ত্বক তো একদিনেই অসুন্দর হয়ে যায় না, আবার প্রাণহীন ত্বক রাতারাতিই সুন্দর করে ফেলা যায় না। তাই শুরু থেকেই যতœবান হতে হবে যেন সুন্দর ত্বকের সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে না পারে আর প্রাণহীন ত্বক যেন প্রাণ ফিরে পেতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীর ক্রনিক ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়। ক্রনিক ডিহাইড্রেশন চামড়ার মসৃণতা নষ্ট হওয়ার ও চামড়া কুঁচকে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। পানি আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, পেট পরিষ্কার রাখে, শরীরের সব কোষ তাজা রাখে, ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে যা আমাদের ত্বককে তরুণ রাখে। সকালে উঠেই এক গ্লাস পানি পান করুন, সারা দিন চেষ্টা করবেন কিছুক্ষণ পরপরই পানি পান করার। বাইরে গেলে সাথে এক বোতল খাবার পানি নিতে ভুলবেন না। যদিও ব্যক্তিভেদে মানুষের শরীরে পানির চাহিদা বিভিন্নরকম হতে পারে, কিন্তু একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করা উচিত।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখুন
স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বক ভালো রাখার জন্য ময়েশ্চার খুব জরুরি। বেশিক্ষণ এয়ারকন্ডিশনে থাকলে আরো বেশি করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার। অতিরিক্ত গরমে বা ঠাণ্ডায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ত্বক ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। দিনে কমপক্ষে ২ বার ত্বক পরিষ্কার করুন। যতবার মুখ ধোবেন ততবারই ময়েশ্চারাইজ করা জরুরি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার করা খুবই জরুরি।
চোখের যতœ
রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে অবশ্যই চোখের চার পাশে আই রোল-অন বা আই ক্রিম লাগাতে হবে। চোখের আশপাশের অংশও খুবই নরম ও স্পর্শকাতর হয়, এই অংশে কোনো তেলগ্রন্থি থাকে না, ফলে খুব সহজে রুক্ষ হয়ে যায় ও কুঁচকে যায়। তাই চোখের চার পাশের ত্বকের যতœ নিতে হবে একটু বেশি।
হাতে ও গলায়
স্ক্রিন কেয়ার রুটিনে ত্বকের বিশেষ অংশগুলোর দিকে নজর দিতে ভুলবেন না। ঘাড়, গলা ও হাতের অংশগুলো সাধারণত চোখে পরে বেশি। গোসলের পর গলায় ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজার লাগান। কারণ গলার চামড়ায় তেলগ্রন্থি না থাকার কারণে এই চামড়া খুব সহজেই রুক্ষ হয়ে যায়। তাই গলার প্রতি হোন বিশেষ যতœবান। যেহেতু শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় হাতের ওপর ধকল যায় সবচেয়ে বেশি, তাই বাসন ধোয়া, কাপড় কাচার সময় রাবার গ্লাভস পরতে পারেন। গোসল বা বাড়ির কাজ করার পর হাতে ভালোভাবে ক্রিম ম্যাসাজ করে নিন।
দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন
দুশ্চিন্তার কারণে করটিসল হরমোন নিঃসরণ হয়, যা আমাদের শরীরে নানা রোগের জন্ম দেয়, চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়, বলিরেখা, চুল ঝরে যাওয়া, ডার্ক সার্কেল ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি করে। মেডিটেশন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ, যোগব্যায়াম, সাঁতার, সাইক্লিং, খোলা বাতাসে কিছুক্ষণ হাঁটা বা জিমে কিছুক্ষণ এক্সারসাইজ করাÑ এর সবই দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস দূর করতে খুবই কার্যকর। আপনার সুবিধামতো যেকোনো একটি বেছে নিন এবং নিয়মিত করার চেষ্টা করুন। এতে করে ত্বক যেমন সুন্দর দেখাবে, শারীরিক ও মানসিকভাবেও ভালো থাকবেন।
ঘুম ও বিশ্রাম
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সারা দিনের সব ক্লান্তি দূর করে আমাদের তরতাজা করে তোলে। ঘুমের মধ্যে শরীরের কোষের ক্ষতিপূরণ হয়, শরীর টক্সিন দূর করে। প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র এক ঘণ্টা কম ঘুমালেই আমাদের করটিসোল হরমোন ১০ গুণ বেড়ে যায়, যা ত্বকের সৌন্দর্য কেড়ে নিতে পারে খুব কম সময়েই। কম ঘুম হলে চোখের নিচের অংশ ফুলে যায়, বলিরেখা বৃদ্ধি পায়। তাই ত্বক সুন্দর রাখতে হলে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
বাড়তি কিছু সতর্কতা
মুখ ধোয়ার পর খুব আলতোভাবে চেপে চেপে মুখ মুছতে হবে। জোরে ঘষে ঘষে মুখ মুছলে তরুণ বয়সেই চেহারায় বলিরেখা দেখা দেয়; যাকে প্রিম্যাচিউরড রিংকেল বলে। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘুমানোর সময় উপুর হয়ে যেন না ঘুমান। এতে মুখের চামড়া দ্রুত ঝুলে যায় এবং চামড়া কুঁচকে যায়। অকারণে চেহারায় হাত দেয়া, চামড়া বা গাল ধরে টানাটানি করা যাবে না। এতে করে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বিস্তার লাভ করে, যার ফলে ব্রণ হয়।
ত্বকের সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন
তরুণ বয়সে অনেকের চেহারা, বুকে ও পিঠে ব্রণের প্রকোপ দেখা দেয়, যা শারীরিক সৌন্দর্যকে কমিয়ে দেয়। এরকম সমস্যাকে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ এতে করে চেহারায় স্থায়ী দাগ ও গর্ত সৃষ্টি হতে পারে। ব্রণ মাঝে মাঝে এক-দুটি হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সবসময় মুখে ব্রণ থাকা স্বাভাবিক নয়। ব্রণের যদি বেশি দেখা দেয়, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।