শরীরচর্চায় সুস্থ জীবন
কভারস্টোরি- সাতরঙ ডেস্ক
- ০৯ জুন ২০২০, ০০:০০
২০২০ সালের বিভীষিকা করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাসায় বসে শরীরচর্চা শুরু করা যদি খুব দুঃসাধ্য মনে হয়, তাহলে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে দেখুনÑ
১. অভিজ্ঞ কারো সাথে কথা বলুন
এমন কারো সাথে কথা বলুন যে নিজে এরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, যে কি না একসময় ওভারওয়েট ছিল কিন্তু এখন বাড়তি মেদ ঝরিয়ে একদম ঝরঝরে। এমন একজনের সাথে কথা বললে শরীরচর্চা নিয়ে আপনার মনের অনেক অনর্থক ভয় ও অস্বস্তি কেটে যাবে।
২. শরীরচর্চার সঙ্গী
পরিবারের মধ্যে একজন সঙ্গী খুঁজে বের করুন যে আপনার সাথে শরীরচর্চা করবে। এটা অনুপ্রেরণা হিসেবে অসাধারণ কাজ করে। আপনি ও আপনার শরীরচর্চার সঙ্গী শুধু একে অন্যকে উৎসাহিতই করবেন না, আপনাদের দু’জনের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার মনোভাবও কাজ করবে। ফলে দু’জনেরই ফাঁকি দেয়ার মানসিকতা কমবে।
৩. শরীরচর্চার পোশাক
ব্যায়াম করার জন্য সুন্দর কিছু কাপড় আলাদা করুন যা পরে আপনি শরীরচর্চা করবেন। এতে করে আপনার মনে আগ্রহ বাড়বে শরীরচর্চার প্রতি।
৪. গানের সাহায্য নিন
যদি গান শুনতে ভালো লাগে, কিছু গান বেছে নিন যেগুলো আপনি দৌড়ানো, হাঁটা বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করার সময় শুনবেন। এতে আপনি বোর হওয়া থেকে বাঁচবেন।
৫. রাতারাতি জীবন পাল্টে ফেলবেন না
আমাদের শরীর কোনো কিছুতে অভ্যস্ত হতে কিছু দিন সময় নেয়, তাই শরীরকে সময় দিন। রাতারাতিই জীবনের পুরো রুটিন পাল্টে ফেলবেন না। আস্তে আস্তে শরীরচর্চা শুরু করুন। কয়েক সপ্তাহ হালকা ব্যায়াম করে নিজেকে অভ্যস্ত করুন। খুব কঠিন বা অতিরিক্ত পরিমাণ শরীরচর্চা করবেন না। এতে করে চাপ সামলাতে না পেরে শরীরচর্চা জিনিসটার ওপরই বিরক্ত হয়ে যাবেন।
৬. শরীরচর্চাকে জাদু ভাববেন না
শরীরচর্চা শুরু করার পর বেশির ভাগ লোকই এই ভুলটি করে থাকে। মাত্র একমাস শরীরচর্চা করেই তারা আশাতীত ফল চান। যে মেদ আপনি শরীরে জমা করেছেন বছরের পর বছর ধরে, আপনি কি করে আশা করেন মাত্র চার সপ্তাহে তা দূর হয়ে যাবে? ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে।
৭. ক্যালেন্ডারে দাগ দিন
যেদিন যেদিন সুন্দরভাবে পুরোপুরি ব্যায়াম করলেন সে দিনগুলো ক্যালেন্ডারে দাগ দিন। এতে করে নিয়মিত ব্যায়াম করার অনুপ্রেরণা পাবেন।
৮. ছবি তুলুন
শরীরচর্চা শুরু করার আগে নিজের ছবি তুলুন, এক মাস পরপর নিজের ছবি তুলুন ও তুলনা করুন। কয়েক মাস পর নিজের পরিবর্তন দেখে নিজেই মুগ্ধ হবেন।
৯. ফলাফল দেখান প্রিয়জনকে
যখন বুঝবেন আপনার শারীরিক উন্নতি হচ্ছে, খুব কাছের মানুষদের দেখান। তাদের প্রশংসা আপনাকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করবে। তবে সাবধান, সবাইকে দেখাবেন না। সমাজে কিছু লোক আছে যারা আপনার উন্নতি দেখে ঈর্ষাকাতর হয়ে প্রশংসা তো করবেই না, উল্টোটাও বলতে পারে।
১০. না খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না
শরীরচর্চা করার জন্য অনেক এনার্জি প্রয়োজন হয়। না খেয়ে থাকলে সবসময় ক্লান্ত লাগবে, যার ফলে ব্যায়াম করতে আগ্রহ পাবেন না। এছাড়া না খেয়ে থাকলে শরীরে ক্যালরি ও পুষ্টির অভাব হয়, যার ফলে শরীরের মেদ দূর না হয়ে প্রয়োজনীয় পেশি শুকিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। পেশি হারানোর ক্ষতি পুশিয়ে নেয়া খুবই কঠিন। এ ছাড়াও প্রয়োজনের কম ক্যালরি খেলে আপনার হজমশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। তাই ক্রাশ ডায়েট বর্জন করুন।
১১, স্বাস্থ্যকর খাবার খান
প্রতিদিন কত ক্যালরি খাচ্ছেন তার হিসাব রাখুন। বেশি বেশি খান, কিন্তু সব স্বাস্থ্যকর খাবার খান। বাসার ফ্রিজ বোঝাই করে ফেলুন ফল ও শাক-সবজি দিয়ে। যত বেশি ফল ও শাকসবজি খাবেন, শারীরিকভাবে তত বেশি ভালো বোধ করবেন। কয়েক সপ্তাহের মাঝে দেখতে পাবেন ত্বকে অন্যরকম সজীবতা।
১২. ওজন নয়, স্বাস্থ্য মাপুন
প্রতি মাসে বা প্রতি সপ্তাহে ওজন মাপার চেয়ে ভালো উপায় হলো ইঞ্চিটেপ বা মেজারমেন্ট টেপ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রস্থ মাপা। ১৫ দিন বা এক মাস পরপর মেজারমেন্ট টেপ দিয়ে নিজেকে মাপুন। শরীরচর্চা শুরু করলে আপনার শরীরের ফ্যাটগুলো পেশিতে পরিণত হবে, যা শরীরের জন্য খুব ভালো একটি ব্যাপার। কারণ পেশি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে এই সময় ওজন মাপলে ওজন আগের মতোই দেখাবে, কিন্তু মেজারমেন্ট টেপ দিয়ে মাপলে বুঝবেন শরীর আস্তে আস্তে কমে আসছে।
ছবি : মোহসীন আহমেদ কাওছার